দারুণ সাড়া জাগিয়ে দলে এসেছেন দিল্লির এই উইকেটরক্ষক। জাতীয় দলের হয়ে ২০১৮ সালে অভিষেক হয় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নটিংহ্যামে। ধোনি টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন, ঋদ্ধি উইকেটের পিছনে দুর্দান্ত হলেও চোটের জন্য ছিটকে গিয়েছেন। এমন সময় ঋষভের উত্থান।
টেস্ট খেলতে নেমে দ্বিতীয় বলেই ছয় মেরে তিনি জানান দেন তাঁর আগমনের। তবে আউট হয়ে যান ২৪ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে করেন এক। যদিও চোট পাওয়া ঋদ্ধির জায়গায় দলে এসে উইকেটের পিছনে সাতটা ক্যাচ নিয়ে ভরসা জুগিয়েছিলেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ম্যাচ ভাল না খেলতে পারলেও, তৃতীয় ম্যাচে ওভালে পেয়ে যান নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি। তারপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠেপর পর দু’টি ম্যাচেই করেন ৯২।
ঋদ্ধির চোট না সারায় নিয়ে যাওয়া হয় অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে প্রথম তিন ম্যাচে রান না পেলেও, ভারতের প্রথম বার ক্যাঙ্গারুর দেশে টেস্ট সিরিজ জয়ে শেষ ম্যাচে ১৫৯ রানের ইনিংস খেলে ধোনি, ঋদ্ধি দু’জনের ফেলে রাখা ফাঁকা জায়গা ভরিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। আপাতত ৯টি টেস্ট খেলে তাঁর সংগ্রহ ৬৯৬ রান। গড় ৪৯.৭১।
পন্থকে ভারতীয় দলে দেখা হয় আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবে। যার ইঙ্গিত তিনি দিয়েছিলেন প্রথম টেস্ট থেকেই। কিন্তু সবাই কি আর সহবাগের মতো আক্রমণকেই নিজের রক্ষা কবচ বানাতে পারে? পারেননি ঋষভও। অতি আক্রমণ কাল হচ্ছে তাঁর জন্যেও। একাধিক ম্যাচে অহেতুক আক্রমণ করতে গিয়ে দিয়ে আসছেন উইকেট। পরিণতি বোধের অভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে বার বার।
টেস্টে বিদেশের মাটিতে শতরান যদি তাঁর হয়ে কথা বলে, একদিনের ক্রিকেটে তাঁর ব্যর্থতা কিন্তু চোখে পড়ার মতো। ১২টি ম্যাচ খেলে তাঁর সংগ্রহ ২২৯ রান। গড় ২২.৯। নেই কোনও শতরান। বিশ্বকাপের মাঝ পথে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ চার নম্বর জায়গায় নামানো হয়েছে। কিন্তু ঋষভ পাল্টাননি। তাঁর যেন খেলার একটাই ধরন। নিজেকে পাল্টাতে পারেননা তিনি। গাড়ি সব সময় ফোর্থ গিয়ারে।
৩০-এর গণ্ডি পেরলেই নড়বড় করতে থাকেন। বেশির ভাগ ম্যাচেই ৩০ পেরিয়েই ছুড়ে দিয়েছেন উইকেট। একদিনের ম্যাচে স্ট্রাইক রেট ৯৬.৬২। টেস্টে ৭৩.৮০ এবং টি২০-তে ১২৪.২৭। বোঝাই যাচ্ছে তিনি দ্রুত রান তোলার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামেন। কিন্তু ক্রিকেট খেলা মানে তো শুধুই চার, ছয় নয়। এখানে দরকার ধৈর্য।
পেস বোলার যখন সবুজ পিচে গুড লেন্থে বল রেখে অফ স্টাম্পের বাইরে বল করে যায় একটা এজ পাওয়ার আশায় বা একজন স্পিনার যখন ঘূর্ণি পিচে অপেক্ষা করে উইকেটের সামনে ব্যাটসম্যানের প্যাডের তখন তাঁর বিরুদ্ধে আক্রমণ না করে রক্ষণ জমাট করার যে পরিণত বোধ দরকার। যে ঠান্ডা মাথার দরকার, বার বার ঋষভের মধ্যেতার অভাব দেখা গিয়েছে।
এই ক্যারিবিয়ান সফর ঋষভের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার। নিয়মিত দলে জায়গা পাকা করার। কিন্তু তার লক্ষণ দেখা যায়নি তাঁর খেলায়। বরং সেই উইকেট ছুড়ে দেওয়ার রোগটাই বেশি করে দেখা যাচ্ছে।
যে পরিমাণ সুযোগ তিনি পাচ্ছেন, এবার প্রশ্ন উঠছে সেই নিয়ে। সত্যিই কি তিনি যোগ্য এত সুযোগের? এই টেস্ট সিরিজে ঋদ্ধিকে না খেলিয়ে ভারতীয় দল আভাস দিয়েছে পন্থকেই ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করার, কিন্তু প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে আউট হন তিনি।
দ্বিতীয় দিনের শুরুতে যখন দরকার ছিল জাডেজার সঙ্গে পার্টনারশিপ গড়ে দলকে নিরাপদ স্কোরে নিয়ে যাওয়ার, তখন অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট পেতে দিলেন তিনি। দ্বিতীয় স্লিপে ওঁত পেতে থাকা হোল্ডারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন অবিবেচকের মতো। আবার প্রমাণ করলেন পরিণত হতে এখনও সময় লাগবে তাঁর।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’-র বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ঋদ্ধি। উইকেটের পিছনে তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার জায়গা নেই। প্রাক্তন ক্রিকেটার থেকে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ সবাই যখন ধোনির পরে ঋষভকেই ভারতের উইকেটকিপার ভাবছে তখন কী অপরিণত ঋষভ অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়ছেন?