ছবি রয়টার্স।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও রিয়াল মাদ্রিদ যেন সমার্থক হয়ে উঠেছিল। নেপথ্যে স্পেনের ক্লাবের অবিশ্বাস্য সাফল্য। ১৩ বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে রিয়াল। অথচ এই নিয়ে টানা তিন বার ফাইনালেই উঠতে পারলেন না করিম বেঞ্জামারা।
বুধবার রাতে লন্ডনের স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ়ে চেলসির কাছে ০-২ হারের (দুই পর্ব মিলিয়ে ১-৩) পরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে, ইউরোপীয় ফুটবলে রিয়ালের আধিপত্য কি তা হলে শেষ?সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে নতুন ভাবে সব কিছু গড়ে তোলার সময় কি আগত? চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে চেলসির বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে বেঞ্জেমার গোলে কোনও মতে হার বাঁচিয়েছিল জ়িনেদিন জ়িদানের দল। বুধবার রাতে দ্বিতীয় পর্বের শেষরক্ষা হয়নি। ২৮ মিনিটে প্রথম গোল করেন টিমো ওয়ের্নার। ৮৫ মিনিটে ২-০ করেন মেসন মাউন্ট। এই গোলের পরেই ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার টুইট করেন, “অবশেষে চেলসি সেমিফাইনালের বাধা অতিক্রম করল। ওরা শুধু অসাধারণ খেলেনি, রিয়ালের চেয়ে লক্ষ মাইল এগিয়ে ছিল। এত দুর্বল রিয়ালকে আমি কখনও দেখিনি।” রিয়ো ফার্ডিনান্ডের কথায়, “রিয়ালকে বুড়োদের দল মন হচ্ছিল। তারুণ্যে ভরপুর চেলসির ফুটবলারেরা ছিল ক্ষুধার্ত।”
সেমিফাইনালের দুই পর্বে রিয়ালকে কার্যত খেলতেই দেয়নি চেলসি। স্পেনীয় সংবাদমাধ্যমের পর্যবেক্ষণ, “রিয়ালের ফুটবলারদের ক্লান্ত ও লক্ষ্যহীন দেখিয়েছে।” অন্য একটি সংবাদপত্র লিখেছে, “চেলসি যোগ্য দল হিসেবেই গুঁড়িয়ে দিয়েছে ১৩ বার ইউরোপ সেরাদের।”
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গত মরসুমে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি-র কাছে হেরে (দুই পর্ব মিলিয়ে ২-৪) শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়েছিল রিয়াল। তার আগের মরসুমে হার আয়াখস আমস্টারডামের কাছে (দুই পর্ব মিলিয়ে ৩-৫)। সে বারও শেষ ষোলোর বাধা টপকাতে পারেনি রিয়াল। তখন অবশ্য জ়িদান ছিলেন না দায়িত্বে। সান্তিয়াগো সোলারি ছিলেন রিয়ালের ম্যানেজার।
রিয়ালের বিপর্যয়ের কারণ কী? বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা অতিমারির কারণে আর্থিক ভাবে প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রিয়াল। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলতে হচ্ছে। ফলে টিকিট বিক্রি থেকে আয় সম্পূর্ণ বন্ধ। খরচ আরও বেড়েছে নতুন রূপে বের্নাবাউ স্টেডিয়াম গড়ে তুলতে গিয়ে। প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭১০৮ কোটি টাকা) ব্যয় হয়েছে। আর্থিক সঙ্কটের জেরে নতুন ফুটবলার সই করাতে পারেনি রিয়াল।
অনেকে আবার মনে করছেন, রিয়ালের নতুন ফুটবলার সই না করানোর জন্য দায়ী বেঞ্জেমাও! কারণ, দলের মোট গোলের তিন ভাগের এক ভাগ একাই করেছেন ফরাসি তারকা। লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ২৭টি গোল করেছেন বেঞ্জেমা। তাঁর দুই সতীর্থ মার্কো আসেন্সিয়ো ও ভিনিসিয়াস জুনিয়র করেছেন ছ’টি করে গোল। দু’বছর আগে চেলসি থেকে রেকর্ড অর্থে সই করানো অ্যাজ়ার মাত্র তিনটি গোল করেছেন। তার উপরে চোটের কারণে অধিকাংশ সময়ই মাঠের বাইরে ছিলেন তিনি।
পরিস্থিতি সামলাতে প্যারিস সাঁ জারমাঁ তারকা কিলিয়ান এমবাপে-কে নেওয়ার জন্য মরিয়া ছিল রিয়াল। কিন্তু গত মাসেই প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ় জানিয়ে দিয়েছেন, আর্থিক সঙ্কটের কারণে এই গ্রীষ্মে এমবাপে-কে সই করানো সম্ভব নয়। রক্ষণও শক্তিশালী করতে হবে রিয়ালের। বায়ার্ন মিউনিখের ডেভিড আলাবা হতে পারেন সেরা পছন্দ। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে ৩৫ বছর বয়সি অধিনায়ক সের্খিয়ো র্যামোসের সিদ্ধান্তের উপরে। চলতি বছরের জুনেই রিয়ালের সঙ্গে তাঁর চুক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে। তিনি কি দল ছাড়বেন? চোটের কারণে এই মরসুমের বেশিরভাগটাই র্যামোস মাঠের বাইরে ছিলেন। সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্বে প্রথম দলে ফিরলেও ছন্দে ছিলেন না। স্পেনীয় সংবাদমাধ্যম ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে, মরণ-বাঁচন ম্যাচে কেন র্যামোসকে প্রথম একাদশে রেখেছিলেন রিয়াল ম্যানেজার? অনিশ্চিত জ়িদানের ভবিষ্যৎও। এর আগেও দু’বার তাঁর কোচিং নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ছিটকে গেলেও লা লিগায় খেতাবি দৌড়ে প্রবল ভাবেই রয়েছে রিয়াল।এই মুহূর্তে ৩৪ ম্যাচে ৭৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষ স্থানে রয়েছে আতলেতিকো দে মাদ্রিদ। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে ৭৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন বেঞ্জেমা-রা। তৃতীয় স্থানে থাকা বার্সেলোনারও ৩৪ ম্যাচে ৭৪ পয়েন্ট। শনিবার ঘরের মাঠে রিয়ালের প্রতিপক্ষ সেভিয়া। লা লিগা জিতে রিয়াল ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না, এখন সেটাই দেখার।