একাগ্র: সন্তানদের সঙ্গে সচিনের যোগ ব্যায়াম। পিতৃদিবসে। টুইটার
ভুল আউট দেওয়ার জন্য বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন আম্পায়ার স্টিভ বাকনর। ক্রিকেটবিশ্বে তাঁর নামকরণ হয় ‘স্লো ডেথ’। বোলার যখন হাল ছেড়ে আবেদন বন্ধ করে দিতেন, তখনই আঙুল তুলে ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়ে দিতেন। কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকর ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে একাধিক বার ভুল আউট দিয়ে বহু ম্যাচে খলনায়ক হন বাকনর। রবিবার তিনি স্বীকার করলেন, সচিনকে সত্যি বেশ কয়েক বার ভুল আউট দিয়ে ফেলেছেন।
সচিনকে দু’বার ভুল আউট দেওয়ার ঘটনা মনে পড়েছে বাকনরের। প্রথমটি ২০০৩ সালে ব্রিসবেনে জেসন গিলেস্পির বলে। দ্বিতীয়টি ২০০৫-এ ইডেনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে। ব্রিসবেনে গিলেস্পির বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউ হওয়ার পরে সচিনকে সে ভাবে রেগে যেতে দেখা যায়নি। কিন্তু ইডেনে আব্দুল রজ্জাকের বলে ভুল ‘কট বিহাইন্ড’ দেওয়ার পরে প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিলেন সচিন। যে সচিনকে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কখনও প্রশ্ন করতেই দেখা যায়নি। তিনি গিয়ে বাকনরকে প্রশ্ন করেন, কেন তাঁকে আউট দেওয়া হল।
সেই ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ইরফান পাঠান। প্যাভিলিয়ন প্রান্তে সচিন ব্যাট করার সময় তাঁকে আউট দেন বাকনর। ইরফান তখন প্যাভিলিয়নেই বসে ছিলেন। সচিনের ব্যাটের ধারে কাছেও যে বল ছিল না সেই আন্দাজ পেয়েছিলেন। ৫২ রান করে ফুঁসতে ফুঁসতে ড্রেসিংরুমে ফেরেন মাস্টার ব্লাস্টার। ভারতীয় ড্রেসিংরুম তখন স্তব্ধ। সচিন কী করে নিজেকে সামলালেন? রবিবার আনন্দবাজারকে ফোনে ইরফান বলেন, ‘‘পাজি (সচিন) এসেই নিজের গ্লাভস ছুড়ে ফেললেন কিটের উপরে। এই দৃশ্য কখনও দেখা যায়নি। আম্পায়ার ভুল আউট দিলে পাজির মন খারাপ থাকত ঠিকই। কখনও এ রকম রেগে যেত না। চিৎকার করে বলে উঠল ‘কাম অন’। বীরু (সহবাগ) ও ভিভিএস (লক্ষ্মণ) আমার পাশেই বসেছিল। ব্যাট করতে নেমেছিল দাদা। আমাদের মধ্যে কারও সাহস হয়নি, পাজিকে গিয়ে শান্ত করার।’’
ঘণ্টাখানেক ড্রেসিংরুমেই নিজেকে বন্দি করে রেখেছিলেন সচিন। একেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ। তাও আবার দর্শকঠাসা ইডেনে। ইরফান আরও বলেন, ‘‘দাদা আউট হয়ে ফিরে আসার পরে দলের সবাই ওকে সচিনের সঙ্গে কথা বলতে পাঠায়। দাদা পাজির সঙ্গে কথা বলার সাহস পায়নি। কারণ, প্রত্যেক ক্রিকেটারকেই নিজের জায়গা দেওয়া উচিত। এখন মনে হয়, সে ম্যাচে ডিআরএস থাকলে ভাল হত।’’
প্রাক্তন ভারতীয় পেসার লক্ষ্মীপতি বালাজিও সে দলের সদস্য ছিলেন। ড্রেসিংরুমে পাঠানের পিছনের সারিতেই বসে ম্যাচ উপভোগ করছিলেন। সচিনকে সেই ভয়ঙ্কর আউট দেওয়ার পরে পুরো ইডেন নিঃস্তব্ধ হয়ে যায়। বালাজির কথায়, ‘‘সচিন অবশ্যই রেগে গিয়েছিল। সে দিন বিকেল পর্যন্ত কারও সঙ্গে কথা বলেনি। কেউ ওকে জোরও করেনি। রেগে যেতে দেখেছিলাম ইডেনের সমর্থকদেরও। সচিন ফিরে যাওয়ার পরে ঘরের ছেলে দাদা ব্যাট করতে নামে। কিন্তু ইডেনে কোনও উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করিনি। স্টেডিয়াম একেবারে শান্ত হয়ে গিয়েছিল। দ্রাবিড় (১৩৫) ও দীনেশ কার্তিক (৯৩) যদি সেই ইনিংসে রান না করত, আমরা হয়তো জিততে পারতাম না। বাকনরের একটি সিদ্ধান্তই বদলে দিতে পারত ম্যাচের ভাগ্য।’’
এ রকম অনেক ম্যাচেই ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হয়েছে ভারতীয় দলকে। ক্রিকেটের একটি অঙ্গ হলেও তা কাম্য নয়। পরবর্তীকালে ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম এ ধরনের সমস্যা কিছুটা হলেও সমাধান করেছে।