শুরুটা হয়েছিল টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে মুম্বইকে হারিয়ে। কিন্তু তার পর থেকে গ্রাফটা শুধুই নিম্নমুখী। নামতে নামতে এখন তিন বারের চ্যাম্পিয়ন দলের ঠাঁই হয়েছে পয়েন্ট টেবিলের একেবারে নীচে।
দলের সঙ্গে সঙ্গেই যেন অস্তাচলে দলের অধিনায়কের ব্যাট। টুর্নামেন্টে এখনও একটিও অর্ধ শতরান নেই ধোনির ব্যাটে। প্রাক্তনীদের কেউ কেউ তো বলছেন, ৩-৪ বছর আগের ধোনি নিজেও আজকের ধোনিকে দলে রাখতে চাইতেন না।
ধোনির নিস্প্রভ থাকাই কি একমাত্র কারণ? দেখে নেওয়া যাক বাকি দলগুলোর তুলনায় ঠিক কোন জায়গায় পিছিয়ে পড়ছে প্রবল পরাক্রমী চেন্নাই সুপার কিংস।
ব্যাটসম্যান ধোনির অফ ফর্ম: সর্বোচ্চ ৪৭ অপরাজিত। তবে সেই ম্যাচ নট আউট থেকেও দলকে জেতাতে পারেননি ফিনিশার ধোনি। গত ম্যাচে রাজস্থানের বিরুদ্ধে যে ভাবে রান আউট হয়েছেন, তাতে তাঁর ফিটনেস নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। চেন্নাই যে তিনটি ম্যাচ জিতেছে, তার কোনওটাতেই ধোনির তেমন ভূমিকা নেই। ১০ ম্যাচ সাকূল্যে রান ১৬৪। স্ট্রাইক রেট ১২৫। তাঁর ব্যাট যেন বাউন্ডারি মারতেই ভুলে গিয়েছে।
নিষ্প্রভ অধিনায়ক ধোনি: বিশ্বকাপ হোক বা আইপিএল, অধিনায়কের নাম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি মানেই দলের ভাল ফল নিশ্চিত। একটা সময় তাঁর নেওয়া যে কোনও সিদ্ধান্তই কাজে লেগে যেত নির্ভুল ভাবে। এ বারে ছবিটা আলাদা। দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছে তাঁর বেশ কিছু সিদ্ধান্ত। যেমন কেদার যাদবকে দলে রাখা বা ইমরান তাহিরের মতো ম্যাচ উইনারকে দলের বাইরে রাখা। এমনকি দলে সবচেয়ে ভাল ফর্মে থাকা স্যাম কারেনকে অনেক পরে ব্যাট করতে পাঠানোর সিদ্ধান্তও প্রবল সমালোচিত হয়েছে।
দলে বয়স্ক ক্রিকেটারের সংখ্যাধিক্য: চেন্নাইয়ের প্রথম পছন্দের দুই ওপেনার শেন ওয়াটসন এবং ফ্যাফ দু’প্লেসির বয়স যথাক্রমে ৩৯ ও ৩৬। এ ছাড়া রয়েছেন ডোয়েন ব্রাভো (৩৮), অম্বাতী বায়ুডু (৩৫), কেদার যাদব (৩৬), মুরলী বিজয় (৩৬)-রাও খেলছেন। ধোনি নিজেও ৪০ ছুঁইছুঁই। এমনকি চোট পাওয়া ব্রাভোর জায়গায় যাঁর খেলার কথা, সেই ইমরান তাহিরেরও বয়স ৪১ বছর। একসঙ্গে এত বয়স্ক ক্রিকেটারের উপস্থিতি স্বাভাবিক ভাবেই দলের গতি কমিয়েছে।
কেদার যাদবের দলে থাকা: চেন্নাইয়ের খেলা ১০টি ম্যাচের মধ্যে ৮টিতেই খেলেছেন তিনি। রান সর্বসাকুল্যে ৬২। সর্বোচ্চ ২৬। স্ট্রাইক রেট মাত্র ৯৩.৯৩। মিডল অর্ডারকে বিপদে ফেলছেন বার বার। তবুও তিনি দলে।
ওয়াটসন, ব্রাভোর খারাপ ফর্ম: ওপেনিংয়ে ওয়াটসনের মতো অভিজ্ঞ প্লেয়ার কমিয়ে দিতে পারতেন ধোনির চিন্তা। তা তো হলই না, উলটে তাঁকে নামিয়ে আনতে হল তিনে। তাতেও যে খুব সুবিধা করতে পারছেন তিনি তা বলা যায় না। অন্য দিকে অলরাউন্ডার ব্র্যাভো চোট পেয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ব্যাট হতে করেছেন ৭ রান (২ ইনিংসে) আর বল হাতে নিয়েছেন ৬ উইকেট (৬ ম্যাচে)।
ইমরান তাহিরকে না খেলানো: এখনও অবধি আইপিএলে দেখা গেল না তাহিরকে। পিচ থেকে যখন স্পিনাররা সাহায্য পাচ্ছেন তেমন সময় বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনার বসে রয়েছেন ডাগ আউটে। গত বছরের আইপিএলে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়া তাহির কেন দলের বাইরে, প্রশ্ন উঠছে বার বার। গত বছর বসে রয়েছেন মিচেল স্যান্টনারও।
রায়না, হরভজনদের না থাকা: শুরুতেই রায়না, হরভজনকে হারানো বড় বিপদে ফেলে দিয়েছে চেন্নাইকে। দুরন্ত কিছু বিদেশি প্লেয়ার দলে নিলেও, স্বদেশি প্লেয়ার বলতে তাদের বড় ভরসা ছিল এই দু’জন। মিডল অর্ডার ভঙ্গুর হয়ে যায় রায়নার অনুপস্থিতিতে। ভারতীয় স্পিনার হিসেবে দলের বাকিরা যথেষ্ট অভিজ্ঞ নয়। ভাজ্জি না থাকার ফলে সেই বিভাগও হয়ে গিয়েছে দুর্বল।
মিডল ওভারে রান তোলার ব্যর্থতা: ওপেনাররা ব্যর্থ হলে তা সামলানোর দায়িত্ব থাকে মিডল অর্ডারের। কিন্তু চেন্নাই মিডল অর্ডারের সবাই রয়েছেন অফ ফর্মে। কেদার যাদব হোক বা অম্বাতি রায়ুডু জাতীয় দলের কোনও খেলোয়াড়কেই চোখে পড়ছে না।
দল গঠন: আইপিএল শুরুর আগেই বোধ হয় ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল চেন্নাই। দলে এমন কোনও ভারতীয় প্লেয়ার নেই যারা রায়না, হরভজনদের পরিবর্ত হয়ে উঠতে পারে। নেই এমন কোনও তরুণ প্লেয়ার যারা হয়ে উঠতে পারেন তুরুপের তাস। দলে দারুণ কিছু বিদেশি প্লেয়ার থাকলেও স্যাম কারেন ছাড়া ধারাবাহিকতা দেখাতে পারছেন না কেউই।
দলের তরুণ প্লেয়ারদের নিয়ে মুম্বই ম্যাচে কী শেষ চেষ্টা করবে চেন্নাই? আজ মাঠে দেখা যাবে ইমরান তাহিরকে? প্রশ্ন অনেক, উত্তর খুঁজে চলেছেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’।