IPL 2023

কোহলিদের ম্যাচে চূড়ান্ত নাটক, শেষ ছ’বলে ছয় রকম রং, বিরাটরাজকে হারিয়ে দিল নবাবের শহর

ঘরের মাঠে রাহুলের লখনউয়ের বিরুদ্ধেও জয়ে ফিরতে পারল না কোহলিদের বেঙ্গালুরু। প্রথমে ব্যাট করে ২১২ রান তুলেও বেঙ্গালুরু ম্যাচ হারল বোলারদের ব্যর্থতায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৩ ২৩:৩৪
Share:

কোহলির অনবদ্য ইনিংসেও জয় পেল না বেঙ্গালুরু। ছবি: আইপিএল।

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ফলাফল এল শেষ বলে। মনে করিয়ে দিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে রিঙ্কু সিংহের লড়াই। শেষ ওভারে জয়ের সম্ভাবনা ছিল দু’দলেরই। প্রতি বলে রং বদলাল বেঙ্গালুরু-লখনউ ম্যাচ। চতুর্থ বলে দু’দলের রান সমান হয়ে যাওয়ার পর কোহলিদের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়। বেঁচে ছিল ম্যাচ টাই করার আশা। শেষ বলে হর্ষল পটেল রবি বিষ্ণোইকে রান আউট করার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। ঘরের মাঠেও জিততে পারল না রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর।

Advertisement

জয়ের জন্য ২১৩ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় লখনউ। মাত্র ২৩ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যান রাহুলরা। তা-ও জয় এল মার্কাস স্টোইনিস এবং নিকোলাস পুরানের অনবদ্য ইনিংসের সুবাদে। লখনউয়ের ওপেনার কাইল মেয়ার্সকে (শূন্য) শুরুতেই আউট করেন মহম্মদ সিরাজ। দ্রুত সাজঘরে ফিরলেন দীপক হুডা (৯) এবং ক্রুণাল পাণ্ড্যও (শূন্য)। তাঁদের আউট করলেন ওয়েন পার্নেল। এর পর দলের ইনিংসের হাল ধরেন অধিনায়ক রাহুল এবং স্টোইনিস। রাহুল উইকেটের এক দিক ধরে রেখেছিলেন। আগ্রাসী মেজাজে রান তুললে শুরু করেন স্টোইনিস। তাঁদের চেষ্টাও অবশ্য বিশেষ কাজে এল না। স্টোইনিস আউট হওয়ার পর সাজঘরে ফিরলেন রাহুলও। অসি অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে এল ৩০ বলে ৬৫ রানের ইনিংস। ৬টি চার এবং ৫টি ছক্কা দিয়ে সাজালেন নিজের ইনিংস। রাহুল আউট হলেন ২০ বলে ১৮ রান করে। মারলেন ১টি চার। লখনউ অধিনায়কের ইনিংস টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পক্ষে বড়ই বেমানান। তবু লখনউ ম্যাচ জিতল পুরানের দাপুটে ব্যাটিংয়ে। মাত্র ১৫ বলে অর্ধশতরান পূর্ণ করলেন তিনি। এ বারের আইপিএলে এটাই দ্রুততম অর্ধশতরান। শেষ পর্যন্ত তিনি করলেন ১৯ বলে ৬২ রান। তাঁর ব্যাট থেকে এল ৪টি চার এবং ৭টি ছয়। তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ সময় আউট করে সিরাজ বেঙ্গালুরুর আশা জাগালেও লাভ হল না। পুরানের সঙ্গে দলকে ভরসা দিলেন আয়ুষ বাদোনিও।

স্টোইনিসের পর লখনউয়ের ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের পুরান। উইকেটরক্ষক-ব্যাটার পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন আয়োজকদের শিবিরে। যে চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে পারলেন না কোহলিরা। বাদোনি আউট হয়ে গেলেন মাত্র ৭ রান বাকি থাকতে। তিনি করলেন ২৪ বলে ৩০ রান। ৪টি চার এল তাঁর ব্যাচ থেকে। পার্নেলকে ছয় মেরেও হিট উইকেট হলেন। শেষ পর্যন্ত আবেশ খান, জয়দেব উনাদকাটদের মরিয়া লড়াই রুদ্ধশ্বাস জয় এনে দিল লখনউকে। প্রথম ব্যাট করে ২ উইকেটে ২১২ রান তুলেও বিরাট কোহলিরা হারলেন লখনউ সুপার জায়ান্টসের কাছে। জবাবে লোকেশ রাহুলরা তুললেন ৯ উইকেটে ২১৩ রান।

Advertisement

বেঙ্গালুরুর সফলতম বোলার সিরাজ ২২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিলেন। ৪১ রান দিয়ে ৩ উইকেট পার্নেলের। ৪৮ রানে ২ উইকেট হর্ষল পটেলের। এ দিন তিনি আইপিএলে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করলেন উনাদকাটকে আউট করে। ৪৮ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন করণ শর্মা।

বেঙ্গালুরু হারলেও আইপিএলে আবার চেনা মেজাজে দেখা গেল কোহলিকে। ভাল খেললেন আরসিবি অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসি। ঘরের মাঠে লখনউয়ের বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরুর ওপেনিং জুটিকে দেখাল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচের মতোই। দু’জনের ব্যাট থেকেই এল অর্ধশতরানের ইনিংস। ভাল খেললেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও। তবু জয় এল না দলের বোলারদের ব্যর্থতায়।

ইডেনে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে ভাল শুরু করেও দ্রুত আউট হয়ে গিয়েছিলেন কোহলি এবং ডুপ্লেসি। সোমবার আর সেই ভুল করেননি তাঁরা। বাড়তি ঝুঁকি না নিয়েই লখনউয়ের বিরুদ্ধে ইনিংস গড়লেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, এ দিন বেঙ্গালুরুর রণকৌশলেও কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেল। দু’জনেই শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ছিলেন না। আরসিবি অধিনায়ক মূলত উইকেটের এক দিন আগলে রাখার কাজ করলেন প্রথম দিকে। আর অন্য প্রান্তে হাত খুলে মারলেন কোহলি। ৪৪ বলে ৬১ রানের ইনিংসে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক মারলেন ৪টি করে চার এবং ছয়। অমিত মিশ্রর বলে আউট হওয়ার পর ডুপ্লেসির সঙ্গে জুটি বাঁধেন অস্ট্রেলিয়ার অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।

রাহুলদের বিরুদ্ধে প্রথম উইকেটের জুটিতে বেঙ্গালুরু তুলল ৯৬ রান। কোহলি আউট হওয়ার পর আগ্রাসী মেজাজে দেখা গেল ডুপ্লেসিকেও। তত ক্ষণে ১২ ওভার হয়ে যাওয়ায় এবং হাতে উইকেট থাকায় দলের রান দ্রুত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তাঁর সঙ্গে মানানসই ছিলেন ম্যাক্সওয়েলও। শেষ পাঁচ ওভারে কার্যত রানের বন্যা বইয়ে দিলেন দু’জনে। তাঁদের দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে উঠল ১১৫ রান। বেঙ্গালুরু অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন ৪৬ বলে ৭৯ রানের ইনিংস খেলে। তাঁর ব্যাট থেকে এল ৫টি করে চার এবং ছয়। অসি অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে এল ২৯ বলে ৫৯ রানের ইনিংস। মারলেন ৩টি চার এবং ৬টি ছয়।

চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ২২ গজে লখনউয়ের কোনও বোলারই তেমন সুবিধা করতে পারলেন না। আরও অবাক করে কোহলিকে আউট করা অমিতকে বেঙ্গালুরুর ইনিংসের ১৬ ওভারের পরেই তুলে নিয়ে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নামিয়ে দিল লখনউ। রঞ্জি ফাইনালে ইডেনে বাংলার ব্যাটারদের সামনে ত্রাস হয়ে ওঠা জয়দেব উনাদকাটও হালে পানি পেলেন না। ১৮ রান দিয়ে ১ উইকেট পেলেন অমিত। ৩২ রানে ১ উইকেট মার্ক উডের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement