বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে উল্লাস মুম্বইয়ের ক্রিকেটারদের। ছবি: আইপিএল।
হারের হ্যাটট্রিকের ধাক্কা সামলে পর পর দু’ম্যাচে জিতল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। এ বার ঘরের মাঠে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে হারাল তারা। প্রথমে ব্যাট করে ১৯৬ রান করেছিল বেঙ্গালুরু। কিন্তু সেই রান করেও মুম্বইকে আটকাতে পারল না তারা। ঈশান কিশন, সূর্যকুমার যাদবদের ব্যাটে সহজেই জিতল মুম্বই। এই জয়ের ফলে প্লে-অফের লড়াইয়ে ফিরে এলেন হার্দিকেরা। অন্য দিকে ছ’ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতে হেরে চাপ আরও বাড়ল কোহলিদের উপর।
টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন মুম্বইয়ের অধিনায়ক হার্দিক। আগের পাঁচ ম্যাচে রান পেয়েছিলেন বিরাট কোহলি। কিন্তু এই ম্যাচে ব্যর্থ হলেন। ৩ রানের মাথায় যশপ্রীত বুমরার বল তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে পিছনে যায়। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে ভাল ক্যাচ ধরেন ঈশান কিশন। আইপিএল অভিষেকে তিন নম্বরে নেমে শুরুটা ভাল করলেও বেশি ক্ষণ খেলতে পারেননি উইল জ্যাকস। ৮ রান করে আকাশ মাধোয়ালের বলে আউট হয়ে ফেরেন তিনি।
বেঙ্গালুরুর ইনিংস টানেন অধিনায়ক ফাফ ডুপ্লেসি ও রজত পাটীদার। চলতি আইপিএলে ডুপ্লেসি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে পারছিলেন না। এই ম্যাচে সেটাই করলেন তিনি। ডুপ্লেসিকে সঙ্গ দিলেন পাটীদার। তাঁরও ব্যাট এখনও পর্যন্ত চুপ ছিল। মুম্বইয়ের পেসারদের বিরুদ্ধে ভাল খেলছিলেন তাঁরা। রান তোলার গতিও বাড়ান দুই ব্যাটার। ৮২ রানের জুটি হয় তাঁদের মধ্যে। জেরাল্ড কোয়েৎজ়ির বলে পর পর দু’টি ছক্কা মেরে অর্ধশতরান করেন পাটীদার। যদিও পরের বলেই আউট হন তিনি।
আরও এক বার ব্যাট হাতে ব্যর্থ গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। শ্রেয়স গোপালের বলে শূন্য রানে ফেরেন তিনি। ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বেঙ্গালুরু। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন ডুপ্লেসি ও দীনেশ কার্তিক। বেঙ্গালুরুর অধিনায়কও অর্ধশতরান করেন। তার পরে অবশ্য বেশি ক্ষণ খেলতে পারেননি তিনি। ৪০ বলে ৬১ রান করে বুমরার বলে ফেরেন তিনি। বুমরা বুঝিয়ে দিলেন কেন তাঁকে টি-টোয়েন্টিতে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়। গতি ও লেংথের হেরফের করে ব্যাটারদের সমস্যায় ফেললেন তিনি। কোনও ব্যাটার তাঁর বলে মারতে পারেননি। দু’বার হ্যাটট্রিকের সুযোগ পেয়েছিলেন বুমরা। হ্যাটট্রিক না হলেও ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন তিনি।
দেখে মনে হচ্ছিল, ১৭০ রানও পার করতে পারবে না বেঙ্গালুরু। কিন্তু শেষ দিকে কার্তিক ঝোড়ো ইনিংস খেললেন। মাত্র ২৩ বলে ৫৩ রান করেন তিনি। কার্তিকের ব্যাটে ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৯৬ রান করে বেঙ্গালুরু।
জবাবে রান তাড়া করতে নেমে বিধ্বংসী ব্যাট করা শুরু করেন ঈশান কিশন। প্রথম থেকেই বড় শট খেলছিলেন তিনি। বিশেষ করে মহম্মদ সিরাজ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে নিশানা করেন তিনি। সিরাজ এক ওভারে ২৩ রান দেন। ম্যাক্সওয়েল দেন ১৭ রান। পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই মাত্র ২৩ বলে অর্ধশতরান করেন ঈশান। প্রথম ৬ ওভারে ৭২ রান করে মুম্বই। সেখানেই খেলার ফল নিশ্চিত করে ফেলে তারা।
চলতি আইপিএলে বেঙ্গালুরুকে ভুগিয়েছে তাদের বোলিং। আরও একটি ম্যাচে সেটাই হল। পেসার থেকে স্পিনার, কেউ নজর কাড়তে পারলেন না। উইকেট না ফেলতে পারায় মুম্বইয়ের রান তোলার গতি কমাতে পারল না আরসিবি। প্রতি ওভারে বড় শট মারলেন ঈশান ও রোহিত। শেষ পর্যন্ত আকাশ দীপের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন ঈশান। ৩৪ বলে ৬৯ রান করেন তিনি।
ঈশান যেখানে শেষ করেন সেখান থেকে শুরু করেন সূর্যকুমার যাদব। চোট সারিয়ে ফিরে প্রথম ম্যাচে রান পাননি তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে তাঁর ব্যাটিং স্বস্তি দেবে সমর্থকদের। সূর্যের পরিচিত খেলা দেখা গেল ওয়াংখেড়েতে। ক্রিজ় ও বোলারদের গতি ব্যবহার করে একের পর এক ছক্কা মারলেন রোহিতদের দলের ডান হাতি ব্যাটার। ৩৮ রান করে আউট হন রোহিত। তাতে অবশ্য সমস্যা হয়নি মুম্বইয়ের।
চার নম্বরে নেমে হার্দিকও শুরু থেকে বড় শট মারতে শুরু করেন। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, দ্রুত খেলা শেষ করতে চাইছেন তাঁরা। নেট রানরেট মাথায় ছিল মুম্বইয়ের ব্যাটারদের। শিশির পড়ায় বোলারদের কাজ আরও কঠিন হয়ে যায়। মাত্র ১৭ বলে অর্ধশতরান করেন সূর্য। ৫২ রান করে আউট হন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২৭ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটে ম্যাচ জিতে যায় মুম্বই।