মারছেন ট্রেভিস হেড। ছবি: পিটিআই।
কোনও দল যদি প্রথম ছ’ওভারেই স্কোরবোর্ডে বিনা উইকেটে ১২৫ রান তুলে ফেলে থাকে, তা হলে সেই ম্যাচের আর কী পড়ে থাকে? শনিবার দিল্লির বিরুদ্ধে এ ভাবেই ফিরোজ শা কোটলায় তাণ্ডব দেখাল হায়দরাবাদ। ঘরের মাঠে প্রথম বার খেলতে নেমেছিল দিল্লি। মাঝে দু’টি ‘হোম ম্যাচ’ খেলতে হয়েছিল বিশাখাপত্তনমে। তবে ঘরের মাঠে ফেরার অভিজ্ঞতা ভাল হল না ঋষভ পন্থের দলের। আগে ব্যাট করে ২৬৬/৭ তুলেছিল হায়দরাবাদ। জবাবে দিল্লি থেমে গেল ১৯৯ রানে। হার ৬৭ রানে। অল্পের জন্য দ্বিতীয় শতরান পেলেন না হায়দরাবাদের ট্রেভিস হেড। কিন্তু ৩২ বলে ৮৯ করে যা ক্ষতি করার করে গেলেন। সঙ্গী হিসাবে অভিষেক শর্মা (১২ বলে ৪৬) এবং শাহবাজ় আহমেদের (২৯ বলে অপরাজিত ৫৯) কথা ভুললেও চলবে না। জবাবে দিল্লির জেক ফ্রেজ়ার-ম্যাকগার্ক বাদে আর কেউ লড়াই করতেই পারলেন না।
বিপুল রান তাড়া করতে নেমে দিল্লিকে শুরুটা ভাল করতেই হত। ওভার প্রতি প্রায় ১৩ রান করে তোলা সত্যিই কঠিন। যদিও শুরুটা খারাপ হয়নি। ইনিংসের প্রথম চারটে বলে চারটে চার মেরে শুরু করেছিলেন। কিন্তু প্রত্যেক বলে যে মারা যায় না এটা বোঝেননি। পঞ্চম বলেই ক্যাচ দিলেন। কিছু ক্ষণ পরে ফিরলেন দলে ফেরা ডেভিড ওয়ার্নারও। তবে খেলা ঘুরিয়ে দেওয়ার সঙ্কল্প নিয়ে নেমেছিলেন ফ্রেজ়ার-ম্যাকগার্ক। তৃতীয় ওভারে ওয়াশিংটন সুন্দরকে তিনটি চার এবং তিনটি ছয় মেরে ৩০ রান নিলেন। তাঁর সঙ্গী ছিলেন বাংলার অভিষেক পোড়েল। তিনিও চালিয়ে খেলছিলেন। এমন সময়ে মায়াঙ্ক মারকান্ডেকে নিয়ে আসেন কামিন্স। তাঁর ওভার থেকে ২১ রান নেওয়ার পর আউট হন ম্যাকগার্ক। ১৮ বলে ৬৫ করেন তিনি।
২২ বলে ৪২ করে অভিষেকও নিজের অবদান রেখে গেলেন। কিন্তু এত বড় রান তাড়া করতে গেলে একজন-দু’জনের উপরে নির্ভর করলে চলে না। গোটা দলকেই এগিয়ে আসতে হয়। সেটা পরের দিকে দেখা গেল না। ট্রিস্টান স্টাবস এবং ঋষভ পন্থ এতটাই ধরে খেললেন যে রান তোলার গতিবেগ অনেকটাই কমে গেল। সেই জায়গা থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারল না দিল্লি।
প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ পেলে হায়দরাবাদ কী করতে পারে, তার প্রমাণ পেয়েছিল মুম্বই এবং বেঙ্গালুরু। এ বার দিল্লিও দেখল হায়দরাবাদের তাণ্ডব। টসে জিতে কেন হায়দরাবাদকে আগে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন তা ম্যাচের পর ভেবে দেখতে পারেন পন্থ। ভেবেছিলেন পিচের সুবিধা নেবেন। কিন্তু ট্রেভিস বা অভিষেক পিচ ব্যাপারটাকেই হিসাবের বাইরে বার করে দিলেন।
প্রথম ওভারেই খলিল আহমেদ দিলেন ১৯। দ্বিতীয় বলেই ছয় মেরে নিজের মনোভাবের কথা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন হেড। আশ্চর্যের হল, দিল্লি বোলারেরা সেটা ধরতে পারলেন না। দ্বিতীয় ওভারেই স্পিনারকে নিয়ে এসেছিলেন পন্থ। সেই ললিত যাদব আরও এক কাঠি উপরে। তাঁর প্রথম দু’বলে দু’টি ছয় হল। সেই ওভারে এল ২১ রান।
নোখিয়াকে এনে স্বাদ বদল করতে চাইলেন পন্থ। প্রথম চারটি চার এবং একটি ছয় মেরে ‘স্বাগত’ জানালেন হেড। পরের ওভারে ললিত এসে আবার ২১ রান দিলেন। সমর্থকদের চোখ তখন ছানাবড়া। বুঝতে পারছেন না খেলাটা মাঠে হচ্ছে না ভিডিয়ো গেমে! হেড এবং অভিষেক শর্মা এর পরেও থামতে রাজি ছিলেন না।
পঞ্চম ওভারে তুরপূণের সেরা অস্ত্র কুলদীপ যাদবকে এনেছিলেন পন্থ। তাঁকে শুরুতেই দু’টি ছক্কা মারলেন অভিষেক। শেষ বলে আবার ছয়। পাঁচ ওভারে ১০০ পেরিয়ে গেল রান। বোঝাই যাচ্ছিল পাওয়ার প্লে-তে কেকেআরের তোলা ১০৫ রান সুরক্ষিত নয়। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলেই সেটা ভাঙল। তাঁকে পর পর চারটি চার মারলেন হেড।
হায়দরাবাদ সেই ছন্দটা ধরে রাখতে পারল না পরের দিকে। সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই অভিষেককে ফেরালেন কুলদীপ। একই ওভারে ফেরালেন এডেন মার্করামকেও। হায়দরাবাদের দু’টি অস্ত্র একই ওভারে পড়ে গেল। বাকি দুই অস্ত্র, অর্থাৎ হেড এবং ক্লাসেন দু’বলের ব্যবধানে ফিরলেন।
পরের দিকে নীতীশ রেড্ডি এবং শাহবাজ় আক্রমণাত্মক খেললেন বটে। কিন্তু ধার ছিল অনেক কম। শাহবাজ় পরের দিকে একটু চালিয়ে খেলায় তবু আড়াইশোর গন্ডি পার করল দল। পর পর এতগুলি উইকেট পড়ে যাওয়া সাবধানী নীতি নিলেন। তাই এক সময় যে হায়দরাবাদের রান অনায়াসে ৩০০ পেরিয়ে যাবে মনে হচ্ছিল, তারাই এসে থামে ২৬৬ রানে। দিল্লির পক্ষে একটাই সান্ত্বনা অক্ষর পটেলের চার উইকেট।