রাজস্থানকে হারিয়ে উল্লাস দিল্লির ক্রিকেটারদের। ছবি: আইপিএল।
পর পর দু’ম্যাচ হারল রাজস্থান রয়্যালস। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের পরে এ বার দিল্লি ক্যাপিটালসের কাছেও হেরে গেল তারা। ব্যর্থ হল অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসনের লড়াই। প্রথমে ব্যাট করে জেক ফ্রেজ়ার-ম্যাকগুর্ক ও অভিষেক পোড়েলের অর্ধশতরান এবং শেষ দিকে ট্রিস্টান স্টাবসের ঝোড়ো ইনিংসে ২২১ রান করে দিল্লি। রান তাড়া করতে নেমে সঞ্জু ৮৬ রান করলেও দলকে জেতাতে পারেননি। এই হারের ফলে এখনও প্রথম চার পাকা করতে পারলেন না সঞ্জুরা। তাঁদের হারিয়ে প্লে-অফের দৌড়ে টিকে থাকল দিল্লি।
টস জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন রাজস্থানের অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন। কিন্তু শুরুটা ভাল করতে পারেননি ট্রেন্ট বোল্ট, সন্দীপ শর্মারা। প্রথম বল থেকে মারমুখী মেজাজে ছিলেন ফ্রেজ়ার। পাওয়ার প্লে কাজে লাগিয়ে একের পর এক বড় শট মারছিলেন তিনি। ফ্রেজ়ার বড় শট খেলায় ধীরে খেলছিলেন অভিষেক। মাত্র ১৯ বলে ৫০ রান করেন ফ্রেজ়ার। যদিও তার পরের বলেই রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ফুলটস মারতে না পেরে আউট হয়ে যান তিনি।
অস্ট্রেলীয় ব্যাটার আউট হওয়ার পরে হাত খোলেন অভিষেক। চলতি মরসুমে প্রতিটি ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সেই সুযোগ কাজে লাগান বাংলার ব্যাটার। আবেশ খানকে নিশানা করেন তিনি। ২ ওভারে ৪২ রান দেন আবেশ। ২৮ বলে অর্ধশতরান করেন অভিষেক। তাঁকেও ফেরান সেই অশ্বিন। ৩৬ বলে ৬৫ রান করেন অভিষেক।
দুই ওপেনার রান করলেও সমস্যায় পড়েন মিডল অর্ডার ব্যাটারেরা। শাই হোপ (১), অক্ষর পটেল (১৫) ও অধিনায়ক পন্থ (১৫) রান পাননি। অশ্বিন ভাল বল করেন। ২৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তিনি। দেখে মনে হচ্ছিল, ২০০ রানও হবে না দিল্লির। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন স্টাবস ও নইব। আফগান ক্রিকেটার আইপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ১৯ রান করেন। শেষ দুই ওভারকে নিশানা করেন স্টাবস।
এই ম্যাচেও খারাপ বল করেন যুজবেন্দ্র চহাল। পন্থকে আউট করলেও ৪৮ রান দেন তিনি। বোল্টও দেন ৪৮ রান। মার খান সন্দীপও। তার ফলে দিল্লিকে ২০০ রানের মধ্যে আটকে রাখতে পারেনি রাজস্থান। শেষ পর্যন্ত ২২১ রানে শেষ হয় দিল্লির ইনিংস। স্টাবস ২০ বলে ৪১ রান করে আউট হন।
২২২ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভাল হয়নি রাজস্থানের। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ৪ রানের মাথায় যশস্বী জয়সওয়ালকে আউট করেন খলিল আহমেদ। তিন নম্বরে নামেন অধিনায়ক সঞ্জু। জস বাটলারের সঙ্গে জুটি বাঁধেন তিনি। প্রথম দু’ওভারের পরে রানের গতি বাড়ান সঞ্জু। খলিল ও ইশান্ত শর্মার ওভারে রান আসে। পাওয়ার প্লে-র পঞ্চম ওভারে বল করতে আসেন মুকেশ কুমার। বাংলার বোলারের প্রথম বলেই আউট হতে পারতেন বাটলার। সহজ ক্যাচ ছাড়েন ম্যাকগুর্ক।
পাওয়ার প্লে-র শেষ ওভারে অবশ্য বাটলার আউট হন। ১৯ রানের মাথায় তাঁকে বোল্ড করেন অক্ষর। অপর প্রান্তে সঞ্জু সাবলীল ব্যাট করছিলেন। প্রতি ওভারে বড় শট মারছিলেন তিনি। তাঁকে সঙ্গ দেন রিয়ান পরাগ। চলতি মরসুমে রাজস্থানের সব থেকে ধারাবাহিক দুই ব্যাটারের কাঁধে দলকে টানার দায়িত্ব ছিল। দেখে ভাল লাগছিল তাঁদের। ভয়ঙ্কর এই জুটি ভাঙেন রসিক দার। ২৭ রানের মাথায় পরাগকে বোল্ড করেন তিনি।
এই ম্যাচে অভিজ্ঞ শিমরন হেটমায়ার ও ধ্রুব জুরেল না থাকায় সঞ্জুর উপর বাড়তি দায়িত্ব ছিল। অধিনায়কের ইনিংস খেলছিলেন তিনি। ২৮ বলে অর্ধশতরান করেন তিনি। স্পিনার, পেসার কাউকে রেয়াত করছিলেন না। প্রতি ওভারে ১০ রানের বেশি হচ্ছিল।
শেষ ৩৬ বলে রাজস্থানের জিততে দরকার ছিল ৭৪ রান। সঞ্জু থাকায় রাজস্থানের রানের গতি কমছিল না। দিল্লিকে খেলায় ফেরান মুকেশ। সঞ্জু তাঁর বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ৮৬ রানের মাথায় আউট হন। যদিও ব্যাট করতে নেমে প্রথম দুই বলে চার মেরে দলকে লড়াইয়ে রাখেন রভম্যান পাওয়েল। খলিলের বলে অনামী শুভম দুবেও বড় শট মারছিলেন। ১২ বলে ২৫ রান করে আউট হন তিনি। ২০ বলে দরকার ছিল ৪২ রান।
১৮তম ওভারে বল করতে আসেন কুলদীপ যাদব। প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা ডোনোভান ফেরেরাকে ১ রানে আউট করেন তিনি। স্পিনারদের বলে বড় শট মারতে সমস্যা হচ্ছিল। অশ্বিনকেও সেই ওভারে ফেরান তিনি। মাত্র ৪ রান দেন। শেষ ওভারে পাওয়েলকে আউট করেন মুকেশ। ফলে অনেক চেষ্টা করেও জিততে পারেনি রাজস্থান। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০১ রানে শেষ হয় তাদের ইনিংস। ২০ রানে জিতে মাঠ ছাড়ে দিল্লি।