কেকেআরকে হারিয়ে দু’ম্যাচ পর জয়ে ফিরল ধোনিদের চেন্নাই। ছবি: আইপিএল।
চিপকের ২২ গজ বিস্মিত করল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটপ্রেমীদের। প্রথম থেকেই বল থমকে ব্যাটে আসছিল। কলকাতা নাইট রাইডার্সের ব্যাটারদের দেখে পিচ কঠিন মনে হলেও চেন্নাই সুপার কিংসের ইনিংসের সময় অন্য রকম দেখাল। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে কলকাতা নাইট রাইডার্স তোলে ৯ উইকেটে ১৩৭ রান। জবাবে চেন্নাই সুপার কিংস করল ১৭.৪ ওভারে ৩ উইকেটে ১৪১ রান। বোলারদের সহায়ক পিচেও মার খেলেন ২৫ কোটির মিচেল স্টার্ক। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পাড়ায় লড়াই করতেই পারল না কেকেআর।
সুনীল নারাইন এবং অঙ্গকৃশ রঘুবংশী ছাড়া কেকেআরের আর কোনও ব্যাটার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মেজাজে ব্যাট করতে পারলেন না। ইনিংসের প্রথম বলেই তুষার দেশপান্ডের বলে আউট হন ফিল সল্ট (শূন্য)। দ্বিতীয় উইকেটে জুটিতে নারাইন-রঘুবংশী তুললেন ৫৬ রান। এই জুটি ভাঙার পর কার্যত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগোল কেকেআরের ইনিংস। রবীন্দ্র জাডেজা, মুস্তাফিজুর রহমানদের বলের সামনে অস্বস্তিতে থাকলেন সকলেই। চাপের মুখে পিচের এক দিক আগলে রেখে দলকে লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছে দিলেন শ্রেয়স আয়ার।
কলকাতার ইনিংসের সপ্তম ওভারে বল করতে এসে বড় করতে বড় ধাক্কা দেন জাডেজা। রঘুবংশী এবং নারাইনকে আউট করেন তিন বলের তফাতে। ফলে ১ উইকেটে ৫৬ থেকে ৩ উইকেটে ৬০ হয়ে যায় কলকাতা। নারাইন করলেন ২০ বলে ২৭। মারলেন ৩টি চার এবং ২টি ছয়। রঘুবংশীর ব্যাট থেকে এল ১৮ বলে ২৪। তিনি মারলেন ৩টি চার, ১টি ছক্কা। এই চাপ ইনিংসের শেষ পর্যন্ত সামলাতে পারল না কেকেআর। পর ব্যর্থ হলেন বেঙ্কটেশ আয়ার (৩), রমনদীপ সিংহ (১৩), রিঙ্কু সিংহ (৯), আন্দ্রে রাসেলরা (১০)। ব্যাট হাতে স্টার্কের অবদান শূন্য। একা লড়াই করলেন শ্রেয়স। তিনি ৩২ বলে ৩৪ করলেন ৩টি চারের সাহায্যে। শেষ পর্যন্ত ২২ গজে ছিলেন অনুকূল রায় (৩) এবং বৈভব অরোরা (১)। দ্বিতীয় উইকেট ছাড়া বড় রানের কোনও জুটিই তৈরি করতে পারল না কেকেআর। শ্রেয়সদের গোটা ইনিংসে হল ১১টি চার এবং ৪টি চার।
পিচের চরিত্র অনুযায়ী বল করলেন চেন্নাইয়ের বোলারেরা। জাডেজা ৩ উইকেট নিলেন ১৮ রান দিয়ে। তুষারের ৩ উইকেট ৩৩ রানে। শেষ ওভারে চমক দিলেন মুস্তাফিজুর। কেকেআর ২০তম ওভারে তুলল ২ রান। হারাল ২ উইকেট। বাংলাদেশের জোরে বোলার ২২ রান খরচ করে ২ উইকেট পেলেন। ২৮ রানে ১ উইকেট মাহিশ থিকশানার।
জয়ের জন্য ১৩৮ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মন্থর হয় চেন্নাইয়েরও। তবে স্টার্কের দিশাহীন পারফরম্যান্স চেন্নাইয়ের ইনিংসে রানের গড়ি বৃদ্ধিতে সাহায্য করল। আগ্রাসী হতে গিয়ে বৈভবের বলে উইকেট হারালেন রাচিন রবীন্দ্র। তাঁর ব্যাট থেকে এল ৮ বলে ১৫ রানের ইনিংস। ৩টি চার মারলেন নিউ জ়িল্যান্ডের অলরাউন্ডার। উইকেটের অন্য প্রান্তের দায়িত্বশীল ইনিংস খেললেন চেন্নাই অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড়। তাঁকে সঙ্গ দিলেন ডারিল মিচেলও। দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে স্বচ্ছন্দে ব্যাট করলেন তাঁরা। কেকেআরের ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে নামা অনুকূল কোনও প্রভাবই ফেলতে পারলেন না চেন্নাইয়ের ২২ গজে। তাঁকে ১ ওভারের বেশি ব্যবহারই করতে পারলেন না শ্রেয়স। কেকেআরের অন্য বোলারেরাও সমস্যায় তৈরি করতে পারেননি। মিচেলকে আউট করে চেন্নাইয়ের দ্বিতীয় উইকেটের জুটি ভাঙেন নারাইন। মিচেল করেন ১৯ বলে ২৫ রান। একটি করে চার এবং ছক্কা মারেন। তার আগে রুতুরাজের সঙ্গে ৭০ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন। ব্যাট হাতে চেন্নাইয়ের জয় নিশ্চিত করলেন অধিনায়কই। দলের ইনিংসকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন। ভরসা দিলেন চার নম্বরে নামা শিবম দুবেও। তিনি করলেন ১৮ বলে ২৮ রান। মারলেন ১টি চার, ৩টি ছয়। রুতুরাজ শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেন ৫৮ বলে ৬৭ রানে। তাঁর ব্যাট থেকে এল ৯টি চার। শেষ বেলায় ব্যাট হাতে নামলেন ধোনিও। ১ রানের অপরাজিত থাকলেন তিনি। জোড়া বিশ্বকাপজয়ী ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও জয়ের রান নিলেন না। রুতুরাজকে জয়ের রান নেওয়ার সুযোগ করে দিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জিতে নিলেন।
কলকাতার বোলারদের মধ্যে স্টার্ক ৩ ওভার বল করে ২৯ রান দিলেন। বরুণ চক্রবর্তী দিলেন ২৬ রান। অনুকূল ১ ওভারে ১২ রান। নারাইন ৩০ রানে ১ উইকেট নিলেন। সফলতম বৈভব ২ উইকেট পেলেন ২৮ রান দিয়ে।