লখনউকে হারিয়ে উল্লাস দিল্লির ক্রিকেটারদের। ছবি: আইপিএল।
আগের ম্যাচে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের কাছে হারের পরে মাঠেই লখনউ সুপার জায়ান্টসের অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে ধমক দিয়েছিলেন দলের মালিক সঞ্জীব গোয়েন্কা। পরে বিতর্ক হওয়ায় নিজের বাড়িতে নৈশভোজে রাহুলকে আমন্ত্রণও করেন গোয়েন্কা। তার পরেও ফর্মে ফিরতে পারল না লখনউ। দিল্লি ক্যাপিটালসের কাছে হারল তারা।
মরণ-বাঁচন ম্যাচ জিতল দিল্লি ক্যাপিটালস। ঘরের মাঠে লখনউ সুপার জায়ান্টসকে হারাল তারা। এই জয়ের ফলে ১৪ ম্যাচে ১৪ পয়েন্টে শেষ করল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দল। এখনও প্লে-অফে যাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখলেন ঋষভ পন্থেরা। দিল্লির কাছে হারায় চাপ আরও বাড়ল লখনউয়ের। হারের হ্যাটট্রিকের পরে লখনউয়ের পয়েন্ট ১৩ ম্যাচে ১২। অর্থাৎ, গোয়েন্কার দলের প্লে-অফের আশা সরু সুতোর উপর ঝুলছে।
ঘরের মাঠে টস হারেন দিল্লির অধিনায়ক পন্থ। প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন লখনউয়ের অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। শুরুটা ভাল হয়নি দিল্লির। দ্বিতীয় বলেই ফর্মে থাকা জেক-ফ্রেজ়ার ম্যাকগার্ককে শূন্য রানে আউট করেন আরশাদ খান। আর এক ওপেনার অভিষেক ফর্মে ছিলেন। পাওয়ার প্লে কাজে লাগিয়ে একের পর এক বড় শট খেলছিলেন তিনি। বিশেষ করে লখনউয়ের পেসারদের বলের গতি ব্যবহার করছিলেন বাঙালি বাঁহাতি ব্যাটার। মাত্র ২৯ বলে অর্ধশতরান পূর্ণ করেন তিনি। অভিষেককে সঙ্গ দিচ্ছিলেন শাই হোপ। তিনিও দ্রুত রান করছিলেন।
পেসারেরা রান দেওয়ায় স্পিনারদের হাতে বল তুলে দেন রাহুল। অভিষেক ও হোপের ৯২ রানের জুটি ভাঙেন রবি বিষ্ণোই। ৩৮ রানের মাথায় হোপকে আউট করেন তিনি। ভাল ক্যাচ ধরেন অধিনায়ক রাহুল। তাঁর ক্যাচ দেখে গ্যালারিতে বসে থাকা সঞ্জীব গোয়েন্কাও দাঁড়িয়ে হাততালি দেন। আগের ম্যাচে হারের পরে রাহুলের সঙ্গে লখনউ মালিকের উত্তপ্ত কথোপকথনের একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল। দেখে মনে করা হচ্ছিল, রাহুলকে ভর্ৎসনা করছেন গোয়েন্কা। তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছে। যদিও এই ম্যাচে রাহুলের ক্যাচের পরে গোয়েন্কার মুখে দেখা গেল চওড়া হাসি।
দিল্লিকে বড় ধাক্কা দেন নবীন উল হক। ৩৩ বলে ৫৮ রান করে ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে বসেন অভিষেক। ভাল ক্যাচ ধরেন নিকোলাস পুরান। অভিষেক যত ক্ষণ ছিলেন তত ক্ষণ ওভার প্রতি ১০ রানের বেশি হচ্ছিল। তিনি আউট হওয়ার পরে রানের গতি কমে যায়। লখনউয়ের বোলারদের বিরুদ্ধে পন্থ ও স্টাবস তেমন হাত খুলতে পারছিলেন না।
ডেথ ওভারে বড় শট মারার চেষ্টা করেন দুই ব্যাটার। শুরুও করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ৩৩ রান করে নবীনের বলে আউট হন পন্থ। ফলে দলকে ২০০ বা তার বেশি রানে নিয়ে যাওয়ার সব দায়িত্ব দিয়ে পড়ে স্টাবসের কাঁধে। শেষ দুই ওভারে হাত খোলেন স্টাবস। নবীনের ওভার থেকে আসে ২১ রান। মাত্র ২২ বলে অর্ধশতরান করেন স্টাবস। তাঁর ব্যাটেই ২০০ পার হয় দিল্লির। তাঁদের কাজ কিছুটা সহজ করে দেন বিষ্ণোই। শেষ ওভারে দু’টি ক্যাচ ফেলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ২০৮ রান করে দিল্লি। স্টাবস ৫৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
চলতি আইপিএলে দিল্লির মাঠে প্রথম ইনিংসে গড় রান ২৪২। তাই এই ম্যাচ জিততে হলে ভাল শুরু করতে হত ইশান্ত শর্মা, মুকেশ কুমারদের। সেটাই হল। প্রথম ওভারেই রাহুলকে ৫ রানে আউট করলেন ইশান্ত। দু’ওভার পরে সেই ইশান্তের বলেই ১২ রান করে ফিরলেন কুইন্টন ডি’কক। দু’টি ক্যাচই ধরলেন মুকেশ। রান পাননি মার্কার স্টোয়নিস। ৫ রানের মাথায় অক্ষর পটেলের বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে স্টাম্প আউট হন তিনি। পাওয়ার প্লে-র মধ্যে দীপক হুডাকেও আউট করেন ইশান্ত। শূন্য রানে ফেরেন হুডা। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখালেন ইশান্ত।
লখনউকে খেলায় রাখেন পুরান। প্রথম বল থেকে বড় শট খেলা শুরু করেন তিনি। পাল্টা আক্রমণের পথে যান। অক্ষরের এক ওভারে নেন ২০ রান। দেখে মনে হচ্ছিল, অন্য পিচে ব্যাট করছেন তিনি। পুরান ভাল খেললেও বাকিরা পারছিলেন না। ৬ রানের মাথায় স্টাবসের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন আয়ুষ বাদোনি। লখনউয়ের সব আশা টিকে ছিল পুরানের উপর। অর্ধশতরান করেন তিনি। যখন দেখে মনে হচ্ছিল পুরান ও ক্রুণাল পাণ্ড্যের মধ্যে জুটি হবে তখনই মুকেশের বলে আউট হয়ে যান পুরান। ২৭ বলে ৬১ রান করেন তিনি। ভাল ক্যাচ ধরেন অক্ষর।
পুরান আউট হওয়ায় লখনউয়ের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়। ক্রুণাল ও আরশাদ লড়াই ছাড়েননি। কয়েকটি বড় শট খেলেন তাঁরা। কিন্তু জরুরি রানরেট বেড়েই যাচ্ছিল। বাধ্য হয়ে কুলদীপের বলে ক্রিজ় থেকে বেরিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে ১৮ রানের মাথায় আউট হন ক্রুণাল। ব্যাট হাতে চমক দিলেন আরশাদ। তিনি যত ক্ষণ ছিলেন, আশা বেঁচে ছিল রাহুলদের। প্রতি ওভারে বড় শট খেলছিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। মাত্র ২৫ বলে অর্ধশতরান করেন তিনি।
শেষ ১২ বলে লখনউয়ের জিততে দরকার ছিল ২৯ রান। সেই ওভারেই রান আউট হন বিষ্ণোই। উইকেট পড়তে থাকায় সঙ্গী পাচ্ছিলেন না আরশাদ। শেষ ৬ বলে ২৩ রান দরকার ছিল। ৯ উইকেট পড়ে যাওয়ায় সব বল খেলার সিদ্ধান্ত নেন আরশাদ। অনেক চেষ্টা করেও দলকে জেতাতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ১৯ রানে হারে লখনউ। ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন আরশাদ। দল হারলেও প্রশংসা কুড়োলেন এই তরুণ ব্যাটার।