১৭ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা বরুণ। শনিবার ইডেনে। ছবিঃ সুদীপ্ত ভৌমিক।
শনিবারের বিকেলে মেঘের গর্জন ইঙ্গিত দিয়েছিল বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির। কিন্তু ৭.৪০ বাজতেই উধাও মেঘের ঘনঘটা। দমকা হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে যায় কালো মেঘ। ফুরফুরে পরিবেশ আশ্বস্ত করে ইডেনের দর্শকদের। খেলা শুরু হওয়ার সম্ভাবনাই ভরিয়ে তোলে গ্যালারির প্রত্যেক কোণ।
সন্ধে ৭টার সময়ও ফাঁকা ছিল গ্যালারি। ৮.৩০-র মধ্যে পুরো চিত্র পাল্টে গেল। কলকাতা যে ক্রীড়াপ্রেমী শহর, তা বারবার প্রমাণ করেছে। আইএসএলে শুধুমাত্র মোহনবাগান ভক্তেরা ভরিয়ে তুলেছেন যুবভারতী। আইপিএলের বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচও উপহার দিয়ে গেল দর্শকভর্তি ইডেন। তাঁদের সামনেই ১৮ রানে জিতে প্রথম দল হিসেবে প্লে-অফ নিশ্চিত কেকেআরের। সাংবাদিক বৈঠকে এসে পীযূষ চাওলাও জানিয়ে গেলেন, এই কেকেআর চ্যাম্পিয়ন হলে বিস্মিত হবেন না। ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়ন নাইট শিবিরে তিনিও ছিলেন অন্যতম যোদ্ধা। মুম্বই স্পিনার বলে গেলেন, ‘‘ঠিক ২০১৪ সালের মতোই খেলছে কেকেআর। ওরা চ্যাম্পিয়ন হলে অবাক হব না।’’
সি ভি বরুণ ও সুনীল নারাইনের ঘূর্ণি মুগ্ধ করেছে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন তারকা অফস্পিনার গ্রেম সোয়ানকে। ম্যাচ শেষে বললেন, ‘‘আইপিএলের সেরা স্পিন আক্রমণ কেকেআরের। অসাধারণ বল করছে প্রত্যেক ম্যাচে। স্পিনাররাই বাড়তি ভরসা দিচ্ছে শ্রেয়স আয়ারকে।’’ সোয়ান বিশেষ প্রশংসা করলেন বরুণের। বললেন, ‘‘শেষ দু’বছর সে ভাবে জ্বলে উঠতে পারেনি। এ বার নিজের জাত চেনাচ্ছে। বরুণকে যত দেখছি, ততই মুগ্ধ হচ্ছি। আশা করি, শেষ ম্যাচ পর্যন্ত এই ছন্দ ধরে রাখবে ও।’’
চলতি মরসুমে নাইটদের ম্যাচ দেখতে প্রথমবার ইডেনে এলেন অন্যতম কর্ণধার জুহি চাওলা। কিন্তু শাহরুখ খানকে দেখতে না পাওয়ায় অনেকেই হতাশ। যদিও ‘বি’ বক্সে উপস্থিত ছিলেন সুহানা খান ও বলিউডের অভিনেত্রী অনন্যা পাণ্ডে। তাঁদের সামনে আবারও মুম্বই-কাঁটা উপড়ে ফেলল কেকেআর। ম্যাচ শেষে দর্শকদের ধন্যবাদ জানিয়ে গেলেন গৌতম গম্ভীররা। নাইট ক্রিকেটারদের হাতে ছিল একটি ব্যানার। লেখা, ‘‘ধন্যবাদ কলকাতা।’’ তা নিয়ে মাঠ পরিদর্শন করেন আন্দ্রে রাসেলরা। দর্শকদের উদ্দেশে অটোগ্রাফ করা বল ছুড়ে দিচ্ছিলেন গম্ভীর। শনিবার বৃষ্টিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাঠ ভরিয়ে তুলেছিলেন নাইট সমর্থকেরা। তাঁদের সামনে জ্বলে উঠল কেকেআর।
মুম্বই দলের সমর্থনও যে কম হবে না, তার আন্দাজ পাওয়া গিয়েছিল শুক্রবারই। রোহিত শর্মার প্রিয় মাঠ ইডেন। এখানে এক দিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান ২৬৪ করেছিলেন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। টেস্টেও প্রথম শতরান এই মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। আইপিএলে নাইটদের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে শতরান। তাই মুম্বইয়ের অধিনায়ক হার্দিক পাণ্ড্য হলেও ইডেনে স্লোগান দিল, ‘‘মুম্বই কা রাজা কৌন?’’ বাকিরা বলে ওঠেন, ‘‘রোহিত শর্মা, রোহিত শর্মা।’’
মুম্বই ডাগআউটের পেছনে ‘এল’ ব্লক থেকেই উঠছিল সেই স্লোগান। ডাগআউট থেকে বেরিয়ে রোহিত তাঁদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়েন। বুঝিয়ে দেন, দর্শকদের ভাবনার সঙ্গে তাঁরও দ্বিমত নেই।
কিন্তু হার্দিক ব্যাট করতে নামতেই বিদ্রুপ উড়ে এল। কলকাতার দর্শকরাও বুঝিয়ে দেন, হার্দিককে অধিনায়ক করার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু আগামী মাসেই তো কুড়ির বিশ্বকাপ। হার্দিক সহ-অধিনায়ক! দেশের জার্সিতে আবারও নিজের সমর্থন কি ফিরে পাবেন হার্দিক? প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে।