৫ বলে ৫ ছক্কা মেরে কেকেআরের নায়ক রিঙ্কু সিংহ। ছবি: আইপিএল
রিঙ্কু সিংহ, রিঙ্কু সিংহ, রিঙ্কু সিংহ..... আগের ম্যাচে দেখিয়েছিলেন, কী ভাবে দৌড়ে রান নিয়ে ছন্দে থাকা শার্দূল ঠাকুরকে খেলাতে হয়। আর যে ম্যাচে কেউ চলল না, সেই ম্যাচে চললেন রিঙ্কু। পর পর ৫ বলে ৫টি ছক্কা মেরে দলকে জেতালেন তিনি। রিঙ্কুর ঝড়ে উড়ে গেল গত বারের চ্যাম্পিয়ন গুজরাত টাইটান্স। এক ইনিংসে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের নাম খোদাই করে নিলেন উত্তরপ্রদেশের এই ক্রিকেটার।
প্রথম ইনিংস শেষে মনে হয়েছিল, এই উইকেটে ম্যাচ জেতা কঠিন হবে কলকাতা নাইট রাইডার্সের। কিন্তু কেকেআরের দুই ব্যাটার বেঙ্কটেশ আয়ার ও নীতীশ রানা ভাল খেলছিলেন। জেতার আশা জাগিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু রশিদ খানের হ্যাটট্রিকে আর একটু হলেই খানখান হয়ে যাচ্ছিল কেকেআরের স্বপ্ন। আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইন, শার্দূলরা পারলেন না। কিন্তু পারলেন রিঙ্কু। বুঝিয়ে দিলেন ক্রিকেটের সেই অমোঘ বাক্য, ‘ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা।’ শেষ বল না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোনও কিছুই নিশ্চিত নয়।
টসেই প্রথম চমক গুজরাতের। নীতীশ রানার সঙ্গে টস করতে নামেন রশিদ খান। তার পরেই জানা যায়, হার্দিক পাণ্ড্য অসুস্থ। তাই এই ম্যাচে খেলবেন না তিনি। ব্যাট করতে নেমে অবশ্য হার্দিকের অভাব বোধ করতে দিলেন না কোনও ব্যাটার। শুরুটা ভাল করেন গুজরাতের দুই ওপেনার ঋদ্ধিমান সাহা ও শুভমন গিল। আগের ম্যাচে ৪ উইকেট নেওয়া বরুণ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে শুরু থেকেই আক্রমণ শুরু করেন তাঁরা। ফলে বরুণকে ৪ ওভার বলই করাতে পারলেন না নীতীশ।
গুজরাতকে প্রথম ধাক্কা দেন সুনীল নারাইন। ১৭ রানের মাথায় ঋদ্ধিকে আউট করেন তিনি। ভাল খেলছিলেন শুভমন। তাঁকেও ফেরান নারাইন। ৩৯ রান করেন শুভমন। এই ম্যাচেও গুজরাতের ইনিংসকে টানলেন সাই সুদর্শন। আবার ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে নেমে নিজের কাজ করলেন তিনি। আগের ম্যাচে অর্ধশতরান করেছিলেন। এই ম্যাচেও অর্ধশতরান করলেন তিনি। তাঁকেও আউট করেন নারাইন।
মাঝের ওভারে নারাইনের সঙ্গে মিলে কলকাতাকে খেলায় রেখেছিলেন দলের রহস্য স্পিনার সুযশ শর্মা। অভিনব মনোহরের উইকেট নেন তিনি। দেখে মনে হচ্ছিল ১৮০-১৮৫ রান করবে গুজরাত। কিন্তু শেষ দু’ওভারে হাত খুললেন বিজয় শঙ্কর। লকি ফার্গুসনের ১৯তম ওভারে ২৪ রান করলেন তিনি। ফলে এক ধাক্কায় ২০০ পেরিয়ে গেল গুজরাতের রান। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ২০৪ রান করল গুজরাত। ২৪ বলে ৬৩ রান করে অপরাজিত থাকেন শঙ্কর।
জবাবে রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভাল হয়নি কেকেআরের। দলের দুই ওপেনার রান পাননি। এই ম্যাচে আরও এক বার নিজেদের ওপেনিং জুটি বদলায় কেকেআর। তাতে লাভ হয়নি। রহমানুল্লা গুরবাজ় ১৫ ও নারায়ণ জগদীশন ৬ রান করে আউট হয়ে যান।
দেখে মনে হচ্ছিল, ওপেনারদের হারিয়ে খেই হারিয়ে ফেলবে কলকাতার ব্যাটিং। কিন্তু তৃতীয় উইকেটে ১০০ রানের জুটি বাঁধলেন অধিনায়ক নীতীশ ও বেঙ্কটেশ আয়ার। দু’জনে মিলে হাত খোলা শুরু করেন। দলের অধিনায়ক রশিদের বিরুদ্ধেও বড় শট মারেন তাঁরা। ফলে চাপে পড়ে যায় গুজরাত। ২৬ বলে অর্ধশতরান করেন বেঙ্কটেশ।
গুজরাতকে আবার ম্যাচে ফেরান আলজারি জোসেফ। ৪৫ রানের মাথায় নীতীশকে আউট করেন। তার পরেই রানের গতি কিছুটা কমে যায়। কিন্তু তখনও জরুরি রানরেট সাধ্যের মধ্যেই ছিল।
কলকাতাকে জিততে শেষ ৩০ বলে করতে হত ৫৬ রান। ব্যাট চলছিল বেঙ্কটেশের। কিন্তু অন্য প্রান্তে রিঙ্কু সিংহ শুরু থেকেই বড় শট খেলতে পারছিলেন না। চাপে পড়ে বড় শট মারতে গিয়ে ৮৩ রানের মাথায় আউট হয়ে যান বেঙ্কটেশ। চাপে পড়ে যায় কেকেআর।
কলকাতার জয় নির্ভর করছিল আন্দ্রে রাসেলের হাতে। কিন্তু আগের ৩ ওভারে ৩৫ রান খাওয়া রশিদ নিজের শেষ ওভারে গিয়ে জ্বলে উঠলেন। পর পর তিন বলে রাসেল, নারাইন ও শার্দূল ঠাকুরকে আউট করে এ বারের আইপিএলে নিজের প্রথম হ্যাটট্রিক করলেন তিনি। রশিদের হ্যাটট্রিকের পর কলকাতার জয় ছিল স্বপ্ন।
শেষ ওভারে দরকার ছিল ২৯ রান। যশ দয়ালের প্রথম বলে ১ রান নেন উমেশ যাদব। পরের ৫ বলে ৫টি ছক্কা মারলেন রিঙ্কু। শেষ বল মেরে আর তাকাননি তিনি। সোজা ছোটেন ডাগআউটের দিকে। তখন উল্লাসে মত্ত কেকেআরের ক্রিকেটাররা। অন্য দিকে মাঠে হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে গুজরাতের ক্রিকেটাররা। তখনও হার বিশ্বাস হচ্ছে না তাঁদের।