আস্থা: নাইটদের দলীয় সংহতি দেখে মুগ্ধ জুহি। —নিজস্ব চিত্র।
বুধবার আইপিএল ফাইনাল খেলতে চেন্নাই উড়ে যাওয়ার সময় টিম হোটেলের বাইরে ভিড় করেছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের সমর্থকেরা। নাইটদের অন্যতম কর্ণধার জুহি চাওলা তাঁদের দেখেই হাত নাড়ান। চেঁচিয়ে ওঠেন, ‘‘উৎসবে মেতে ওঠো। আমরা ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছি।’’
টিম হোটেল থেকে বেরোনোর সময় আনন্দবাজারকে জুহি বললেন, ‘‘চোখ বন্ধ করলেই স্টেডিয়ামের হুঙ্কার কানে বাজছে। আমদাবাদ যেন কলকাতা হয়ে উঠেছিল। স্টেডিয়ামে আমাদের পতাকাই বেশি দেখতে পেলাম।’’
২০১২ সালের সঙ্গে চলতি আইপিএলের গতিপ্রকৃতি অনেকটাই মিলে যাচ্ছে। গৌতম গম্ভীরের নেতৃত্বে প্রথম ট্রফি জয়ের সময় প্রথম কোয়ালিফায়ারে জিতে ফাইনালে পৌঁছেছিল কেকেআর। হারিয়েছিল দিল্লি ডেয়ারডেভিলসকে (এখন দিল্লি ক্যাপিটালস)। এ বার সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদকে হেলায় হারিয়ে চেন্নাই এক্সপ্রেসে উঠে পড়লেন
শ্রেয়স আয়াররা।
প্রথম ট্রফি জয়ের সেই রাত এখনও তরতাজা জুহির স্মৃতিতে। বলছিলেন, ‘‘এখনও মনে পড়ে চিদম্বরম স্টেডিয়ামের রেলিংয়ে উঠে পড়েছিল শাহরুখ। চেন্নাইয়ে ওদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্যিই কঠিন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি তখন সেরা ছন্দে। ২০১১ সালে ভারতকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে এসেছে। ধোনির দলকে তাদেরই মাঠে হারানোর ক্ষমতা আমাদের ছিল। মাঠে সেটা প্রমাণও করেছিল ক্রিকেটারেরা। এ বারও মন বলছে ২০১২-র সেই রাত ফিরবে। চেন্নাইয়ে প্রতিপক্ষ যারাই হোক, কেকেআর ট্রফি জিতেই দেখাবে।’’
চেন্নাই এক্সপ্রেসে যাঁর সৌজন্যে উঠে পড়া, সেই মিচেল স্টার্কের উপরে কতটা সন্তুষ্ট নাইট কর্ণধার? ২৪.৭৫ কোটি টাকায় তাঁকে নেওয়ার পর থেকে সমালোচনার স্রোত বয়ে যায় ক্রিকেটবিশ্বে। অথচ বিপক্ষের সব চেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ট্র্যাভিস হেডকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন স্টার্ক। পাওয়ার-প্লের মধ্যে বিপক্ষের মেরুদণ্ড ভেঙে নাইট শিবিরের জয় নিশ্চিত করেন ২৪.৭৫ কোটির ক্রিকেটার। যা নিয়ে জুহি বলে দিলেন, ‘‘স্টার্ক নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে দিয়েছে। বোলিংয়ের মাধ্যমেই বন্ধ করেছে সমালোচকদের মুখ। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কারা ছন্দে ফেরে জানেন তো? বড় ক্রিকেটারেরা। স্টার্ক দেখিয়ে দিল, আসল মঞ্চে ও কী করতে পারে।’’
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে বুধবার। মিচেল স্টার্কের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত পাঁচটি ম্যাচ খেলেছেন হেড। বাঁ-হাতি পেসারের বিরুদ্ধে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর? এক রান। বাকি চারটি ম্যাচেই ফিরেছেন শূন্য রানে। ম্যাচ শেষে টিম হোটেলে মিচেল স্টার্ককে সামনে রেখে কেক কাটেন ক্রিকেটারেরা। শাহরুখ কন্যা সুহানা খানের জন্মদিনও পালন করা হয় একই পার্টিতে।
কিন্তু স্টার্ক কী করে বিপক্ষের দুই ওপেনারকে দ্রুত ফিরিয়ে দিলেন, সেই গল্প তুলে ধরেন রহমনুল্লা গুরবাজ়। সাংবাদিক বৈঠকে এসে গুরবাজ় বলে যান, ‘‘আমরা নিজেদের শক্তির উপরে ভরসা রেখেছি। সকলেই জানত ওরা প্রথম ছয় ওভারে বিধ্বংসী ইনিংস খেলার চেষ্টা করে। স্টার্ক ও হেড একই দেশের ক্রিকেটার। কী ভাবে ওকে আউট করা যায়, তা স্টার্কের চেয়ে ভাল আর কে জানবে?’’
রহমনুল্লা গুরবাজ়ের মা এখনও সুস্থ হননি। কাবুলের এক হাসপাতালেই ভর্তি। ফিল সল্ট দেশে ফিরবেন জেনে তাঁকে খবর দেওয়া হয়। দ্রুত ভারতে ফেরার নির্দেশ পেয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবিরে যোগ দেন আফগান উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। ফিল সল্ট যদি দেশের হয়ে খেলতে না যেতেন, তা হলে হয়তো কাবুল থেকে ফিরতেন না গুরবাজ়।
সাংবাদিক বৈঠকে আসার সময় মুখে এক গাল হাসি ছিল গুরবাজ়ের। মাঠের মতোই প্রাণোচ্ছল ও চনমনে। কিন্তু একটি প্রশ্ন তাঁকে যেন কুঁকড়ে দিয়ে যাচ্ছে। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনার মা অসুস্থ ছিলেন। তিনি এখনও কেমন আছেন? তিনি সুস্থ হওয়ার পরেই
কি আপনি ভারতে ফিরে এলেন?’’ গুরবাজ় প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। হয়তো ভাবছিলেন সত্যিটা বলবেন কি না। কিন্তু বলে দিলেন লড়াইয়ের গল্প।
গুরবাজ় বলেন, ‘‘আপনাদের সামনে পুরো ছবিটাই পরিষ্কার করে দিতে চাই। আমার মা সুস্থ হননি। হাসপাতাল থেকে এখনও ছাড়া পাননি।’’ তাঁর কথা শোনার পরে সাংবাদিক সম্মেলনের ঘরও স্তব্ধ হয়ে যায়। গুরবাজ় যোগ করেন, ‘‘কলকাতা নাইট রাইডার্স
থেকে আমাকে ফোন করে বলা হয়, সল্টকে দেশে ফিরে যেতে হচ্ছে। তোমাকে আমাদের প্রয়োজন। কেকেআর শিবিরও আমার অন্যতম পরিবার। তাই ফিরে আসতে দু’বার ভাবিনি। মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছে। কিন্তু এখনও পুরো সুস্থ হননি তিনি।’’