পরামর্শ: কালীঘাট ক্লাবের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ঋদ্ধি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ছেড়ে দিয়েছিল হার্দিক পাণ্ড্যকে। সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদ রাখেনি রশিদ খানকে। ডেভিড মিলার ও রাহুল তেওটিয়া জায়গা পাননি রাজস্থান রয়্যালস শিবিরে। কলকাতা নাইট রাইডার্স ছেড়ে দিয়েছিল শুভমন গিলকে। ঋদ্ধিমান সাহা, তিনি তো নিলামেই অবিক্রিত ছিলেন। তবুও গুজরাত টাইটান্স তাঁদের উপরে আস্থা রেখেছে। আবির্ভাবেই আইপিএল জিতে প্রমাণ করেছে, ঋদ্ধিমানদের উপরে আস্থা রাখা হলে তাঁরা কী করে দেখাতে পারেন। বুধবার সকালেই আমদাবাদ থেকে কলকাতা পৌঁছে গিয়েছেন ঋদ্ধি। সন্ধ্যায় আনন্দবাজারকে সাক্ষাৎকার দিতেও রাজি হয়ে গেলেন তিনি।
ট্রফি জেতার রেশ এখনও কাটেনি। কাটা সহজও নয়। আমদাবাদ শহরে হুড খোলা বাসে ট্রফির প্রদর্শনীর মুহূর্ত সারা জীবনের মতো মনে গেঁথে গিয়েছে তাঁর। ঋদ্ধি বলছিলেন, ‘‘আলাদা ধরনের উন্মাদনা হয়েছে আমাদের নিয়ে। জেতার পরে সকলে প্রাণ খুলে আনন্দ করতে পেরেছি। ঘরের মাঠে দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মজাই আলাদা। এক লক্ষেরও বেশি দর্শকের সমর্থন পেয়ে দল এমনিতেই চাঙ্গা হয়ে গিয়েছিল। তাঁদের চিৎকারই বিপক্ষকে অনেকটা চাপে ফেলে দেয়। সহজ করে দেয় আমাদের কাজটা।’’
হার্দিক পাণ্ড্যের নেতৃত্ব খুবই উপভোগ করেছেন ঋদ্ধি। তাঁর কথায়, ‘‘কী ভাবে একটি দল পরিচালনা করতে হয়, তা খুব ভাল করে জানে হার্দিক। প্রত্যেকের সঙ্গে মিলেমিশে থাকাই একজন অধিনায়কের সব চেয়ে বড় গুণ। হার্দিকের মধ্যে তার কোনও অভাব নেই। আগে ওকে যেমন চঞ্চল দেখেছিলাম, এখন একেবারেই বদলে গিয়েছে। আমূল পরিবর্তন হয়েছে ওর মধ্যে। মাঠে কেউ ভুল করলে কখনও খারাপ কিছু বলত না।সব চেয়ে ভাল বিষয়, সবার উপরে ভরসা রেখেছে।’’ যোগ করেন, ‘‘বিভিন্ন দল যাদের ছেড়ে দিয়েছিল, যাদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল, তাদের উপরে ভরসা রেখেছে ও। আমিই যেমন অবিক্রিত ছিলাম। শুরুর দিকে সুযোগ পাচ্ছিলাম না। যে দিন আমাকে এসে ও বলে ওপেনারের দায়িত্ব পালন করতে হবে, সে দিনই আমার মধ্যেও আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করার মঞ্চ দিয়েছে ও। হার্দিকের এই অবদান ভোলার নয়। আমরা যদিও ওর আস্থার মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যার যতটুকু দায়িত্ব, সে সেটা পালন করেছে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য এর চেয়ে বেশি কিছু লাগে না।’’
ঋদ্ধি মনে করেন, সকলের উপরে পূর্ণ আস্থা ছিল বলেই গুজরাত অনেক কঠিন পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ বার করেছে। তাঁর কথায়, ‘‘তেওটিয়া যেমন পঞ্জাবের বিরুদ্ধে মাত্র তিন বল খেলার সুযোগ পেয়েছিল। তাতেই ম্যাচ জিতিয়ে ফিরেছিল। রশিদও ব্যাট করে ম্যাচ জিতিয়েছে। ইডেনে যেমন মিলার ও হার্দিক আমাদের ফাইনালে তুলল। এ ধরনের ম্যাচগুলোই একটি দলের ভরসা তৈরি করে। মিলারের উপরে আস্থা রাখা হলে ও কী করতে পারে, আবারও প্রমাণ করে দিল।’’
ঋদ্ধি নিজেও ভারতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছেন না। তাঁর কাছে এই আইপিএল ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর মঞ্চ। ফের প্রমাণ করা যে বয়স শুধুমাত্র একটি সংখ্যা। তাঁর কথায়, ‘‘বয়স নিয়ে আমি কখনওই চিন্তা করিনি। আগামী দিনেও করব না। কোথাও সুযোগ পাচ্ছি না, সেটা ভেবে বসে থাকলে খেলায় প্রভাব পড়তে বাধ্য। আমার যতটুকু প্রতিভা আছে, তার মধ্যেই নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করেছি। দল উপকৃত হয়েছে। এর চেয়ে ভাল কী হতে পারে!’’
শুভমন গিল ও তাঁর ওপেনিং জুটির উপরে নির্ভর করে থাকত দল। ১১ ম্যাচে ৩১৭ রান করেছেন। সমালোচনার সব জবাব দিয়েছেন ব্যাটেই। ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন দু’টি। হার্দিক কী বললেন তাঁর এই মরসুমের পারফরম্যান্সের পরে? ঋদ্ধির উত্তর, ‘‘ওপেনারেরা ভাল খেললে অধিনায়ক খুশি হবেই। ও যে আমার উপরে আস্থা রেখেছে, সেটাই আসল। হার্দিক বলেছে, একাধিক ম্যাচে আমরা শুরুটা ভাল না করলে ডাগ-আউটে চাপ বাড়তে পারত। ওপেনার হিসেবে আমার দায়িত্ব এটাই। যত দিন যাবে, আরও পরিণত হওয়ার চেষ্টা করব।’’
রশিদ খানের সঙ্গে শেষ বারও খেলেছেন ঋদ্ধি। রশিদের বিরুদ্ধে কিপিং করার অভিজ্ঞতা ছিল না ম্যাথু ওয়েডের। ঋদ্ধির উপরে সেই দায়িত্বও এসে পড়ে। বলছিলেন, ‘‘ওর কব্জির উপরে নজর না রাখলে, বোঝা যাবে না কোনটা লেগস্পিন আর কোনটা গুগলি। ওর বিরুদ্ধে কিপিং করা সত্যি কঠিন কাজ। আমি এত দিন ধরে ওর সঙ্গে খেলছি বলে কোনও সমস্যাহচ্ছে না।’’
৩৬ বছর বয়সেও কী ভাবে আরও উন্নতি করবেন, তা নিয়ে ভেবে চলেছেন ঋদ্ধিমান। বলা হয় না, ‘‘বয়স শুধুই সংখ্যা মাত্র।’’ ঋদ্ধি বারবার সেটাই প্রমাণ করে চলেছেন।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।