চহালের পুনরুত্থানের কাহিনি ছবি আইপিএল
গত বছরের ১৩ অক্টোবর দিনটা বোধ হয় কখনও ভুলতে পারবেন না যুজবেন্দ্র চহাল। ওই দিনই ঘোষণা হয়েছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল। বিস্ফারিত চোখে চহাল দেখেছিলেন, সেই দলে কোথাও নেই তাঁর নাম। অথচ, দুবাইয়ে হওয়া আইপিএলের দ্বিতীয় পর্বে ঝুরি ঝুরি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। তার পরেও চেতন শর্মার নির্বাচক কমিটি তাঁকে ব্রাত্য করে রাখে! চহাল বিশ্বাস করতে পারেননি।
ঠিক যেমন বিশ্বাস করতে পারেননি যে তাঁকে দলে না রেখে আইপিএলের নিলামে তুলে দেবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। কেনার জন্যেও বিশেষ উৎসাহও দেখাবে না। এক সাক্ষাৎকারে আক্ষেপের সঙ্গে বলেছিলেন, “ওরা আমাকে এক বার জিজ্ঞাসাও করেনি যে আমাকে ধরে রাখবে কি না বা আমি ওদের দলে থাকতে চাই কি না। সরাসরি আমাকে বলে দেওয়া হয়, তোমাকে আমরা নিলামে তুলছি।”
কয়েক মাসের ব্যবধানে দুটো ধাক্কা মানসিক ভাবে অনেকটা শক্তিশালী করে দিয়েছিল চহালকে। বার বার জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার যে ব্যথা ছিল, তার থেকেও বেশি ব্যথা ছিল বেঙ্গালুরুর সঙ্গে এ ভাবে বিচ্ছেদে। কিন্তু চহাল মেনে নিয়েছিলেন। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবেন। সেটাই করেছেন। আইপিএলে তাঁর নামের পাশে ২৬টি উইকেট সে কথাই বলছে।
জাতীয় দলে এক সময় প্রথম একাদশ তাঁকে ছাড়া ভাবাই যেত না। কুলদীপের সঙ্গে জুটি বেধে একের পর এক ম্যাচ জিতিয়েছেন ভারতকে। ঝুরি ঝুরি উইকেট তুলেছেন। কিন্তু ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ব্যর্থতা চহালকে জাতীয় দলের পথ থেকে আচমকাই লাইনচ্যুত করে দেয়। এর পর থেকে প্রথম একাদশ তো দূর, নিয়মিত জাতীয় দলেও জায়গা পাচ্ছিলেন না। পারফর্ম করলে থাকছিলেন, না হলেই বাদ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছিল সবচেয়ে বড় ধাক্কা।
প্রত্যাবর্তনের পথ কঠিন ছিল, কিন্তু অসম্ভব নয়। চহালের সবচেয়ে বড় গুণ হল, দল থেকে বাদ পড়েও তিনি কখনও নিজের উপর বিশ্বাস হারাননি। বরং যে ছোটখাটো ব্যাপারগুলো তাঁকে ভোগাচ্ছিল, অবসর সময়ে সেগুলির উপরে জোর দিয়েছেন।
চহাল ঠিক কী ধরনের পরিবর্তন এনেছেন নিজের খেলায়? আগে যেমন কোনও ম্যাচে বেশি রান খেলেই প্রভাবিত হতেন। এখন কিন্তু সেই জিনিস হয় না। কোনও ম্যাচে মার খেলেও নিজের দক্ষতার উপরে জোর দেন। সেটাই সাফল্য এনে দেয় তাঁকে। আগে চেষ্টা করতেন গুগলি এবং টপ-স্পিনের উপর বেশি ভরসা করে উইকেট তোলার। এখন তিনি প্রথাগত লেগ-স্পিনেই ভরসা রাখেন। সেটাই তাঁকে সাফল্য এনে দিচ্ছে।
আরও একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে তাঁর। সেটি হল শৃঙ্খলা। বেশি রান দিলেই অনিয়ন্ত্রিত বোলিং করার অভ্যাস তাঁর চলে গিয়েছে। এখন তিনি অনেক শান্ত। অনেক বেশি ধীরস্থির। এই গুণ তাঁর এসেছে দাবা খেলার কারণেই। ছোটবেলায় চুটিয়ে দাবা খেলেছেন। শৃঙ্ঘলা শিখেছেন সেখান থেকেই। পরে ক্রিকেটে এসেও নিজের অভ্যাস বদলাননি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার পর গত বছরই ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে জাতীয় দলে জায়গা পান। এর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেও খেলেছেন। আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও তিনি খেলতে চলেছেন। ফলে নিজেকে প্রমাণ করার একটা সুযোগ ফের পেতে চলেছেন তিনি। আইপিএলে ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। এ বছর অস্ট্রেলিয়ার বিমান যাতে মিস্ না হয়ে যায়, সেটাই এখন লক্ষ্য চহালের।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।