আগমন: কলকাতায় পৌঁছে গেলেন রাহুলরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
ইউরো ২০২০-র সময় ড্রেসিংরুমে একটি বিশেষ গান গেয়ে নিজেদের উদ্বুদ্ধ করতেন ইংল্যান্ড দলের ফুটবলারেরা। হ্যারি কেন থেকে রাহিম স্টার্লিং, কাইল ওয়াকার থেকে জর্ডান হেন্ডারসন গলা মেলাতেন একসঙ্গে। জার্মানিকে হারানোর পরে ড্রেসিংরুমে নাচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেই গান তাঁরা গেয়েছিলেন ২৫ মিনিট ধরে। ইংল্যান্ড ফুটবল দলের সেই গান এখন উদ্বুদ্ধ করছে লখনউ সুপার জায়ান্টসকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় গায়ক নিল ডায়মন্ডের গাওয়া ‘সুইট ক্যারোলিন’ এখন কে এল রাহুলদের উৎসবের গান। লখনউ ড্রেসিংরুমের প্রত্যেককে এই গান শিখিয়েছেন দলের ফিজ়িয়ো জেমস পাইপ। তিনিও এক সময় ক্রিকেটার ছিলেন। ইংল্যান্ডে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন। ফিজ়িয়ো হিসেবে কাজ শুরু করার পর থেকে বিভিন্ন ফুটবলারদেরও ট্রেনিং করিয়েছেন। তিনিই হ্যারি কেনদের মুখে এই গান শুনে লখনউ ড্রেসিংরুমে তাকে নতুন ভাবে ফিরিয়ে এনেছেন। প্রথম ম্যাচ জেতার পরে প্রত্যেকের হাতে একটি করে কাগজ ধরিয়ে দিয়েছিলেন জেমস। কাগজেই লেখা ছিল গান। জেমসের গলার সঙ্গে প্রত্যেকে গলা মিলিয়ে এই গান রপ্ত করে নেন। বুধবার কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে জেতার পরে ড্রেসিংরুমে সেই গান শুরু করেন আবেশ খান।
তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়ে তালে তালে নাচতে শুরু করেন রাহুলরা। বাদ্যযন্ত্র হিসেবে কেউ বেছে নেন খাবারের প্লেট ও চামচ, কারও পছন্দ জলের বোতল অথবা খাবার রাখার ট্রে। শুধুমাত্র জয়ের শেষেই নয়, ম্যাচ হারলেও নিজেদের উদ্বুদ্ধ রাখার জন্য এই গান শুরু হয় ড্রেসিংরুমে। কোনও ভাবেই হারের যন্ত্রণা নিয়ে টিম হোটেলে প্রবেশ করতে চান না লখনউয়ের ক্রিকেটারেরা। অ্যান্ডি বিকেল, গৌতম গম্ভীররা চান, ক্রিকেটারেরা সব সময় যেন ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে হোটেলে থাকেন। কারও উপরে বাড়তি চাপ দেওয়া তো দূরের কথা, খারাপ পারফরম্যান্সের ব্যাখ্যাও চাওয়া হয় না। কে এল রাহুলও ঠান্ডা মাথার ক্রিকেটার। তিনি চান, দলের প্রত্যেকের মধ্যে যেন বোঝাপড়া অটুট থাকে। একেই জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থাকতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের। তাই এ ভাবেই মজা করার উপায় খুঁজে নিচ্ছেন ক্রিকেটারেরা।
শুক্রবার কলকাতায় পৌঁছে গেল লখনউ সুপার জায়ান্টস দল। বিমানবন্দর থেকে হোটেলে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় গ্রিন করিডোর তৈরি করে। শনিবার থেকে অনুশীলনে নেমে পড়বেন রাহুলরা। ইডেনে নামার আগে কোনও রকম ফাঁক রাখতে চান না লখনউ অধিনায়ক। তাই বাকি দলগুলোর চেয়ে এক দিন আগে থেকে অনুশীলন শুরু করবেন তাঁরা।
ইডেনে খেলতে মুখিয়ে রয়েছেন লখনউ অধিনায়ক রাহুল। কুইন্টন ডি’ককের সঙ্গে শেষ ম্যাচে আইপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি গড়েছেন তিনি। ২১০ রানের সেই অপরাজিত জুটি গড়ার পরে আত্মবিশ্বাসের দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে রাহুলের দল। তবুও বোলিং বিভাগের পারফরম্যান্স কিছুটা চিন্তার মধ্যে রাখছে তাঁদের। ইডেনে একই ভুল করতে চান না। ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিয়োয় রাহুল বলেছেন, ‘‘প্লে-অফ যাত্রা নিশ্চিত হলেও এখন আসল খেলা বাকি। ইডেনের পরিবেশ বরাবরই উপভোগ করি। আশা করব, আমাদের ম্যাচ দেখার জন্যও মাঠ ভর্তি থাকবে। প্লে-অফ কাদের বিরুদ্ধে পড়বে, তা নিয়ে ভাবতে চাই না। কী রকম খেলব, সেটাই আসল।’’
রাহুলদের স্বাগত জানানো হবে স্পোর্টিং পিচেই। ইডেনের পিচ থেকে ব্যাটারদের পাশাপাশি সাহায্য পেতে পারেন বোলাররাও। লখনউ দলে রাহুল, ডি’ককের মতো ব্যাটারদের পাশাপাশি মহসিন খান, রবি বিষ্ণোইদের মতো তরুণ বোলাররাও রয়েছেন। তাঁদের ছন্দের উপরেই নির্ভর করবে ম্যাচের ভাগ্য। ইডেনের ম্যাচ শেষে লখনউয়ের ড্রেসিংরুম থেকেও নিল ডায়মন্ডের সেই উৎসবের গান ভেসে আসে কি না, তা সময়ই বলবে। বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীরা তৈরি তো?