বিশাখাপত্তনমে চেন্নাই সুপার কিংসের সমর্থক। ছবি: আইপিএল।
দিল্লি ক্যাপিটালসের ঘরের মাঠ আপাতত বিশাখাপত্তনম। কিন্তু রবিবার সেটা মনে হল না। আসলে খেলাটা যে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে। বলা ভাল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বিরুদ্ধে। তিনি যেখানে খেলতে নামছেন, সেটাই যে তাঁর ঘরের মাঠ হয়ে যায়। গত বার আইপিএলে খুব পরিচিত দৃশ্য ছিল ধোনির ম্যাচ মানেই চেন্নাইয়ের জার্সি ভর্তি গ্যালারিতে। সঙ্গে পতাকাও। সে কলকাতা, জয়পুর, দিল্লি, যেখানেই খেলা হোক না কেন। চেন্নাইয়ের ম্যাচ মানেই গ্যালারির রং হলুদ। রবিবার সেই দৃশ্য আবার ফিরল বিশাখাপত্তনমে। সমর্থন চেন্নাই পেলেও ম্যাচ জিতে নিল দিল্লি ক্যাপিটালস। দিল্লির তোলা ১৯১ রানের জবাবে ধোনির চেন্নাই থেমে গেল ১৭১ রানে।
ম্যাচটা ছিল দিল্লি ক্যাপিটালস বনাম চেন্নাই সুপার কিংসের। ক্রিকেট দলগত খেলা হলেও কিছু কিছু চরিত্র থাকেন, যাঁদের আলাদা করে নজর দিতে হয়। আইসিসি-র সব ট্রফিজয়ী অধিনায়ক ধোনি তেমনই একটি চরিত্র। ভারতকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এক দিনের বিশ্বকাপ এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন ধোনি। আইপিএল জিতেছেন পাঁচ বার। ২০১৯ সালে ভারতের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলা ধোনিকে এখনও দেশের সব মাঠে দর্শক বরণ করে নেয় আবেগ দিয়ে। কিন্তু আবেগ দিয়ে মন জেতা যায়, ম্যাচ নয়।
বিশাখাপত্তনমে হলুদ জার্সিধারি দর্শকেরা সংখ্যা ছিল বেশি। সর্বক্ষণ ধোনির জন্য চিৎকার করলেন তাঁরা। ঋষভ পন্থের দিল্লি ক্যাপিটালস প্রথমে ব্যাট করে তোলে ১৯১ রান। গাড়ি দুর্ঘটনার পর মাঠে ফিরে প্রথম বার অর্ধশতরান করলেন পন্থ। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন পন্থ। এ বারের আইপিএলেই মাঠে ফিরলেন তিনি। দিল্লির অধিনায়ক প্রথম দু’টি ম্যাচে খুব বেশি রান করতে পারেননি। ফর্ম ফিরে পেতে সময় লাগছিল তাঁর। তবে তৃতীয় ম্যাচেই বুঝিয়ে দিলেন যে, তিনি এখনও আগের মতোই সাবলীল। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ৩২ বলে ৫১ রান করেন পন্থ। তিনটি ছক্কা এবং চারটি চার মারেন তিনি। পাথিরানাকে যে ভাবে ১৯তম ওভারে বাউন্ডারির বাইরে পাঠাচ্ছিলেন, তাতে আগামী দিনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে পন্থকে দেখা গেলে অবাক হওয়ার থাকবে না। তিনি ব্যাট করার সময় যদিও গ্যালারি তাঁর জন্যেও গলা ফাটাল।
দিল্লির হয়ে এই ম্যাচে ওপেন করতে নেমেছিলেন পৃথ্বী শ। এত দিন তাঁকে খেলায়নি দিল্লি। রবিবার পৃথ্বী ২৭ বলে ৪৩ রান করেন। ওয়ার্নার করেন ৩৫ বলে ৫২ রান। তাঁরা ৯৩ রানের জুটি গড়েন। ওভারে ১০ রান করে তুলছিলেন তাঁরা। কিন্তু পর পর দু'ওভারে দুই ওপেনার আউট হয়ে যান। সেই সঙ্গে রানের গতিও ধাক্কা খায়। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার পেসার পাথিরানা নজর কাড়েন। তাঁর গতি এবং নিখুঁত ইয়র্কার সামলাতে গিয়ে হিমশিম খান দিল্লির ব্যাটারেরা। মিচেল মার্শ (১৮) এবং ট্রিস্টিয়ান স্টাবসকে (০) বোল্ড করেন তিনি।
চেন্নাইয়ের হয়ে প্রথম উইকেটটি নেন মুস্তাফিজুর রহমান। শুরুতে তাঁকে বল করানো হয়নি। চেন্নাইয়ের হয়ে নতুন বলে শুরু করেছিলেন দীপক চাহার এবং তুষার দেশপাণ্ডে। চাহার তাঁর ৪ ওভারে ৪২ রান দেন। তুষার দেন ২৪ রান। তাঁরা কেউই কোনও উইকেট পাননি। তবে ওয়ার্নারের আউট ক্ষেত্রে মুস্তাফিজুরের থেকেও বেশি কৃতিত্ব পাথিরানার। তিনি যে ভাবে লাফিয়ে এক হাতে ক্যাচ নিলেন তাতে অবাক হয়ে যান মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।
ম্যাচে পাথিরানা তিনটি উইকেট নেন। পন্থকে আউট করেন তিনিই। অফ স্টাম্পের বাইরের বল লং অফের উপর দিয়ে মারতে গিয়েছিলেন পন্থ। কিন্তু ধরা পড়ে যান রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের হাতে। ৫১ রানে থেমে যায় পন্থের ইনিংস।
দিল্লির তোলা ১৯১ রান তাড়া করতে নেমে চেন্নাই শুরুতেই দুই ওপেনারের উইকেট হারায়। অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড় (১) এবং রাচিন রবীন্দ্রের (২) উইকেট তুলে নেন খলিল আহমেদ। সেই ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করেন অভিজ্ঞ অজিঙ্ক রাহানে। ৩০ বলে ৪৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন তিনি। কিন্তু শিবম দুবে এবং ড্যারিল মিচেলেরা তাঁকে সাহায্য করতে পারলেন না।
বাংলার মুকেশ কুমারের প্রশংসা করতে হবে। ১৪তম ওভারে প্রথম বল করতে আসেন তিনি। আর সেই ওভারেই রাহানের উইকেট তুলে নেন। একই ওভারে আউট করেন সমির রিজ়ভিকে। পরে শিবমকেও আউট করেন মুকেশ। মাঝের ওভারে তাঁর একের পর এক উইকেট নেওয়া এবং ১৯তম ওভারে ধোনিকে বড় শট খেলতে না দেওয়া দিল্লিকে ম্যাচ জিতিয়ে দেয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে মুকেশ ডেথ ওভারে যে ভাবে বল করলেন, তাতে নির্বাচকদের খাতায় তাঁর নাম থাকতেই পারে।
এ বারের আইপিএলে প্রথম জয় পেল দিল্লি। যা স্বস্তি দেবে রিকি পন্টিং, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়দের। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে নামার আগে বাড়তি আত্মবিশ্বাস পেয়ে গেল সৌরভের দিল্লি।