আবার ফাইনালে কলকাতা। ছবি আইপিএল
আবার দুই ওপেনারের দাপট। আবার কলকাতার দুর্দান্ত জয়। বুধবার মহাষ্টমীর রাতে শারজায় দিল্লি ক্যাপিটালসকে ৩ উইকেটে হারিয়ে আইপিএল-এর ফাইনালে চলে গেল কলকাতা। শুক্রবার, অর্থাৎ দশমীর দিন চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে দুবাইয়ে ফাইনাল খেলবে তারা। ২০১৪ সালের পর ফের ফাইনালে উঠল কলকাতা। ২০১২ সালে প্রথম বার আইপিএল জয়ের সময়ও তাদের প্রতিপক্ষ ছিল চেন্নাই।
বুধবার কলকাতাকে জেতালেন দুই ওপেনার। ১৩৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে প্রথম উইকেটেই ৯৬ উঠে যায়। দুর্দান্ত অর্ধশতরান করলেন বেঙ্কটেশ আয়ার। এই আইপিএল-এ তৃতীয় অর্ধশতরান হয়ে গেল তাঁর। যোগ্য সঙ্গত দিলেন শুভমন গিলও। কিন্তু ম্যাচ শেষ ওভারে নিয়ে গিয়ে সমর্থকদের হৃৎকম্প একসময় বাড়িয়ে দিয়েছিলেন কলকাতার ব্যাটাররা। প্রথম উইকেটে ৯৬ তোলার পরেও একসময় জেতা ম্যাচ হারতে বসেছিল কেকেআর। একে একে ব্যাটাররা ফিরে যাচ্ছিলেন সাজঘরে। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে রাহুল ত্রিপাঠি ছয় মারায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন সমর্থকরা।
ম্যাচের আগে থেকেই হয়তো ঋষভ পন্থ চেয়েছিলেন যে কোনও মূল্যে টসটা জিততে। আগের ম্যাচে টস জিতে বিরাট কোহলী যে ভুল করেছিলেন সেটা একেবারেই করতে চাননি তিনি। কিন্তু টস ভাগ্যের ব্যাপার। ভাগ্য বুধবার পন্থের উপরে সদয় ছিল না। ফলে কলকাতার অধিনায়ক অইন মর্গ্যান যা চাইছিলেন তাই হল। টসে জিতে স্বাভাবিক ভাবেই বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।
দিল্লির শুরুটা অবশ্য খারাপ হয়নি। পৃথ্বী প্রথম থেকেই চড়াও হয়েছিলেন কেকেআর বোলারদের উপর। সুনীল নারাইন হোক লকি ফার্গুসন, কাউকে ছাড়ছিলেন না তিনি। কিন্তু ভুল করতে বাধ্য হলেন বরুণ চক্রবর্তীর কাছে। পঞ্চম ওভারে এসে প্রথম বলেই বরুণ তুলে নিলেন তাঁকে। তিনে নামতে দেখা গেল চোট সারিয়ে দলে ফেরা মার্কাস স্টয়নিসকে। যেখানে দিল্লির দলে শ্রেয়স আয়ার, শিমরন হেটমায়ারের মতো মারকুটে ব্যাটসম্যান রয়েছে, সেখানে তিনে কেন স্টয়নিসকে নামানো হল সেটা পন্থই ভাল বলতে পারবেন।
এমন কিছুই করতে পারলেন না স্টয়নিস যা ম্যাচের মোড় ঘোরাবে। উল্টে একের পর এক বল নষ্ট করে দিল্লির পরের দিকে ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ বাড়িয়ে দিলেন। ২৩ বলে ১৮ করে ফিরলেন তিনি। রানের গতি বাড়াতে পারছিলেন না দিল্লির কোনও ব্যাটসম্যানই। ক্রিজে জমে গিয়ে শেষ দিকে মারার পরিকল্পনা করেছিলেন শিখর ধবন। কিন্তু কলকাতার বোলারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ের সামনে একসময় অধৈর্য হয়ে মারতে গেলেন এই ওপেনার এবং উইকেটও খোয়ালেন। হেটমায়ারের ভাগ্য ভাল। বরুণের বলে আউট হয়ে ফিরেছিলেন। কিন্তু তামিলনাড়ুর স্পিনার সেটি নো-বল করায় দলের খাতায় অতিরিক্ত কিছু রান যোগ করেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটার। শারজার মন্থর পিচে মারতে পারছিলেন না শ্রেয়সের মতো ব্যাটসম্যানও। তবুও শিবম মাভির শেষ ওভারে ১৫ রান দিল্লির স্কোরকে পৌঁছে দেয় ১৩৫-এ।
আমিরশাহি পর্বে কেকেআর-এর ওপেনিং জুটি নিয়ে কেউই কোনও প্রশ্ন তোলার সাহস পাচ্ছেন না। দু’একটি ম্যাচ বাদ দিলে প্রায় প্রতি ম্যাচেই দলকে ভরসা দিচ্ছেন শুভমন এবং বেঙ্কটেশ। বুধবারও তার ব্যতিক্রম হল না। ১৩৬ রান তাড়া করতে গিয়ে প্রথম উইকেটে ৯৬ উঠে গেলে আর কিছুই পড়ে থাকে না। আইপিএল-এর তৃতীয় অর্ধশতরান হল বেঙ্কটেশের। সেটাও এল এমন একটা ম্যাচে, যেখানে একটা ভুল মানেই সবকিছু শেষ। লক্ষ্য কম ছিল বলে আগাগোড়া মাথা ঠান্ডা রেখে খেলে গেলেন শুভমন এবং বেঙ্কটেশ। প্রথমে খুচরো রান নিতে থাকলেন, মারার বল পেলেই সোজা বাউন্ডারিতে পাঠালেন। দিল্লির হাতে এমন কোনও বোলার ছিল না যারা কলকাতার দুই ওপেনারকে বিপদে ফেলতে পারেন।
৯৬ রানের মাথায় বেঙ্কটেশ ফেরার পর মনে হয়েছিল অনায়াসে জিতবে কলকাতা। কিন্তু ঘটনাক্রম তেমন হয়নি। উল্টে মর্গ্যানের দল একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে। ১৮তম ওভারে রাবাডা মাত্র এক রান দিলেন। এক উইকেট নিলেন। ১৯তম ওভারে অনরিখ নোখিয়া ৩ রান দিয়ে এক উইকেট নিলেন। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৭ রান। কিন্তু মর্গ্যান এবং শাকিব আল হাসানকে ফিরিয়ে রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অবশেষে রাহুলের ছয়ে ফিরল শান্তি। ফলস্বরূপ সাত বছর পর ফের এক বার আইপিএল ফাইনালের মঞ্চে দেখা যাবে কলকাতাকে।