বেগুনী জার্সিতে ফের একবার নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। ফাইল চিত্র
দেশের হয়ে মাত্র তিনটি একদিনের ম্যাচ খেলেই জাত চিনিয়ে দিয়েছেন। তবে বিরাট কোহলীর অধিনায়কত্বে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেক করা প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর ধ্যান জ্ঞান এখন শুধুই কলকাতা নাইট রাইডার্স। গত তিন বছর নাইটদের হয়ে ২৪ উইকেট নেওয়া কর্নাটকের তরুণ ইতিমধ্যেই দলের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছেন। ঋষভ পন্থ, ডেভিড ওয়ার্নার, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, কে এল রাহুলদের নাম নোটবুকে ইতিমধ্যেই তুলে রাখা আছে। তবে সেই খাতায় সবার উপরে রয়েছে তিনজনের নাম। বিরাট কোহলী, রোহিত শর্মা ও মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে সাজঘরে ফেরাতে মরিয়া ২৫ বছরের তরুণ। প্রস্তুতি পর্বের মাঝেই জাতীয় দলে অভিষেক থেকে শুরু করে আইপিএলে বিশেষ ইচ্ছে, গ্লেন ম্যাকগ্রা থেকে দীনেশ কার্তিকের সঙ্গে বন্ধুত্ব সবকিছু নিয়ে আনন্দবাজার ডিজিটালকে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিলেন এই ডানহাতি জোরে বোলার।
প্রশ্ন: অভিষেক ম্যাচেই সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। কিন্তু সিরিজের প্রথম ম্যাচেই খেলার সুযোগ পাবেন, এটা আদৌ ভেবেছিলেন?
প্রসিদ্ধ: আমি যে কোনও পরিস্থিতির জন্য সব সময় তৈরি থেকেছি। ছোটবেলা থেকে এটাই আমার স্বভাব। তাই নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই মাঠে নামার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম। এর পর টিম হোটেলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই প্রধান প্রশিক্ষক রবি শাস্ত্রী আমাকে আগলে রাখতেন। ওঁর কথা শুনে বুঝে গিয়েছিলাম যে প্রথম একদিনের ম্যাচেই মাঠে নামতে হবে। আর সেটাই হল। অভিষেক ম্যাচের হিসাবে অনেকের মতে ভাল ফল মনে হলেও পাঁচ উইকেট নিতে পারলে বেশি খুশি হতাম।
প্রশ্ন: দিনের শেষে ৫৪ রানে ৪ উইকেট দেখালেও সেই ম্যাচের শুরুটা ভাল হয়নি। চাপের সময় বিরাট কোহলী কী বলেছিলেন?
প্রসিদ্ধ: প্রথম ৩ ওভারে ৩৭ রান দিয়েছিলাম। দুই ওপেনার জেশন রয় ও জনি বেয়ারস্টো যেন আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তবে মাঝের ওভারে বিরাট আমার কাছে এসে আক্রমণাত্মক বোলিং করার পরামর্শ দিয়েছিল। ওর কথা শুনে বুঝেছিলাম যে ফুল লেন্থ বোলিং করে কোনও লাভ নেই। তারপর থেকেই গুড লেন্থ থেকে বল করা শুরু করলাম। বাকি কাজটা সাদা বল করেছে।
অধিনায়ক বিরাটের এখন তাঁর বিপক্ষে। ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন: দেশের হয়ে ভাল ফল করার সুবাদে আপনার উপর প্রত্যাশা বেড়েছে। এ বারের আইপিএলে কোন কোন ব্যাটসম্যানদের ফেরাতে চাইবেন?
প্রসিদ্ধ: একজন জোরে বোলার হিসেবে বিপক্ষের প্রথম সারির সব ব্যাটসম্যানকে আউট করাই আমার প্রধান কাজ। কিন্তু এই টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যানদের জব্দ করা মোটেও সহজ নয়। যদি পছন্দের কথা বলেন তাহলে বিরাট, রোহিত ও মাহি ভাইকে সাজঘরে ফেরানোই আমার প্রধান লক্ষ্য।
প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টিতে স্লোয়ার বাউন্সার, স্লোয়ার ইয়র্কার, নাকল বল এখন বোলারদের প্রধান অস্ত্র। আপনি তো এই বলগুলোতে একেবারে সিদ্ধহস্ত।
প্রসিদ্ধ: ধারাবাহিকতাই আমার অস্ত্র। আউটসুইং, ইনসুইং তো রয়েইছে। কিন্তু একই জায়গা থেকে বলকে দু’দিকে সুইং করানোর জন্য প্রয়োজন ধারাবাহিকতা। সেটা নিয়ে অনেক দিন ধরে কাজ করছি। এ বারের বিজয় হজারে ট্রফিতে সেটা খুব কাজে দিয়েছে। একদিনের সিরিজে ভুবনেশ্বর কুমারের কাছ থেকেই এই ব্যাপারে পরামর্শও নিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: গ্লেন ম্যাকগ্রা ও এমআরএফ পেস অ্যাকাডেমি আপনাকে কতটা সাহায্য করেছে?
প্রসিদ্ধ: এমআরএফ পেস অ্যাকাডেমি আমাকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক সাহায্য করেছিল। দেশের সেরা জোরে বোলাররা সেখানে থাকায় ব্যাপক প্রতিযোগিতা চলে। তাছাড়া সেখানে থাকার সময় গ্লেন ম্যাকগ্রার সঙ্গে পরিচয় হয়। পরবর্তী সময় ওঁর সাহায্যেই অস্ট্রেলিয়া গিয়ে অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাই ম্যাকগ্রা ও এমআরএফ পেস অ্যাকাডেমির কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ।
অনুপ্রেরণা গ্লেন ম্যাকগ্রা।
প্রশ্ন: কেকেআরে খেলা আপনাকে কতটা সাহায্য করেছে?
প্রসিদ্ধ: অনেক সাহায্য করেছে। প্রচুর উন্নতি করেছি। তবে দলকে কতটা সাহায্য করতে পেরেছি সেটা তো সিনিয়র ও সমর্থকরা বলতে পারবে। আমাদের দলে একাধিক তারকা। শুভমন গিল, আন্দ্রে রাসেল, অইন মর্গ্যান, দীনেশ কার্তিকদের মতো ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে নেটে বোলিং করলে অনেক কিছু শেখা যায়। তাছাড়া গত তিন বছর আইপিএলে একাধিক ম্যাচ খেলার সুবাদেও নিজের ভুলত্রুটির ব্যাপারে অনেক কিছু উপলব্ধি করেছি।
প্রশ্ন: মাইকেল ভন, শোয়েব আখতারের মতো প্রাক্তন আপনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কেমন অনুভূতি হয়?
প্রসিদ্ধ: পৃথিবীর সবাই প্রশংসা শুনতে চায়। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। তাই মাইকেল ভন, শোয়েব আখতারের মতো মানুষদের কাছ থেকে প্রশংসা শুনলে অবশ্যই লাগে। ওঁদের ইতিবাচক মন্তব্য আমাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
প্রশ্ন: আচ্ছা দীনেশ কার্তিক আপনার কাছে দাদা না বন্ধুর মতো?
প্রসিদ্ধ: ডিকে আমার কাছে যেমন দাদা, তেমনই আবার প্রিয় বন্ধু। যখন ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হয় তখন ও দাদার মতো হাতে ধরে ভুলভ্রান্তি বুঝিয়ে দেয়। একাধিক ম্যাচেও সেটা দেখেছি। কিন্তু ক্রিকেটের বাইরে আড্ডা হলে ওর চেয়ে মজার মানুষ আর দুটো নেই। পার্টি জমানোর ক্ষেত্রে ডিকে একাই একশ।
লক্ষ্যে অবিচল প্রসিদ্ধ। ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন: আপনাদের জোরে বোলিং নিয়ে কিছু বলুন। প্যাট কামিন্সের থেকে কিছু শিখতে পেরেছেন?
প্রসিদ্ধ: এখনও মাঠে বল পড়েনি। তবে আমার মতে আমাদের জোরে বোলিং এই মুহূর্তে সেরা। প্যাট কামিন্স, লকি ফার্গুসনের সঙ্গে কমলেশ নগরকোটি, শিবম মাভি, সন্দীপ ওয়ারিয়র আছে। আমিও আছি। তাই আমরা যে কোনও ব্যাটিংকে ধাক্কা দিতে পারি। আর প্যাট কামিন্স দারুণ মনের মানুষ। বোলিং নিয়ে খুঁটিনাটি আলোচনা ছাড়াও ওর সঙ্গে আড্ডা দেওয়া যায়। ফলে গত কয়েক বছরে আমাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। মাঠেও সেটা প্রতিফলিত হয়।
প্রশ্ন: পরপর জৈব সুরক্ষা বলয়ে থেকে খেলা কতটা কঠিন? মাথা শান্ত রাখার জন্য বিশেষ কিছু করেন?
প্রসিদ্ধ: আমি তো এই ব্যাপারটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। কোভিডের জন্য গত এক বছরে অগণিত মানুষ মারা গিয়েছেন। কত মানুষ বেকার হয়ে গিয়েছেন। অনেকে ঘরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। সেই দিক থেকে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করি। ক্রিকেট খেলে সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাতে পারছি। জীবনে আর কি চাই! তাই আমার অন্তত জৈব বলয়ে থাকতে কোনও আপত্তি নেই।