লক্ষ্য: কোচ ম্যাকালাম, অধিনায়ক মর্গ্যান জুটির অগ্নিপরীক্ষা। কেকেআর।
বিশ্বজয়ী কোচ। বিশ্বজয়ী অধিনায়ক। দু’জনে একই জার্সিতে নয়, প্রতিপক্ষ হিসেবে নামবেন আজ, রবিবার। অইন মর্গ্যান নেতৃত্ব দেবেন কলকাতা নাইট রাইডার্সকে। আর ট্রেভর বেলিস বসবেন সানরাইজ়ার্স ডাগআউটে, ডেভিড ওয়ার্নারদের কোচ হিসেবে।
এখানেই শেষ নয়। কাকতালীয় মনে হতে পারে, কিন্তু মর্গ্যান যেমন আগে কেকেআরের সংসারে কাটিয়ে গিয়েছেন, তেমনই ঘুরে গিয়েছেন বেলিস। নাহ্, শুধু ঘুরে গিয়েছেন বললে ঠিক বলা হয় না। ২০১২-২০১৫ বেলিস কোচ থাকাকালীনই দু’বার আইপিএল ট্রফি জিতেছিল শাহরুখ খানের দল।
বেলিসকে নিয়ে আরও উত্তেজনার চোরাস্রোত থাকতে পারে কারণ, দু’বছর আগে তাঁর কেকেআরের কোচ হয়ে আসা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে নাইট শিবিরের সঙ্গে কথাবার্তা বাঞ্চাল করে দিয়ে যোগ দেন সানরাইজ়ার্সে। নাইটরা এর পরে রিকি পন্টিংয়ের জন্য ঝাঁপায়। শেষ পর্যন্ত পন্টিংকে ছাড়েনি দিল্লি। শাহরুখের দলকে অগত্যা ব্যাটিং কোচ করে আনা ব্রেন্ডন ম্যাকালামকে প্রধান কোচের পদে বসাতে হয়।
মর্গ্যান যখন প্রথম বার কেকেআর সংসারে এসেছিলেন, একা একা বাইপাসের ধারের হোটেলে ঘুরতেন। খেলার সুযোগ পেতেন না। তখন ছিল ম্যাকালামদের যুগ। তখন ছিলেন মর্গ্যান-১। ইনি মর্গ্যান-২। সাদা বলের ক্রিকেটে ব্যাটিং নীতিতে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে অতি আগ্রাসী ব্যাটিং করে ইংল্যান্ড সীমিত ওভারের ক্রিকেটের ধরনই পাল্টে দিয়েছে। পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ জিতেছে।
গত বার মাঝপথে দীনেশ কার্তিককে সরিয়ে কেকেআর কর্তারা অধিনায়ক করেন মর্গ্যানকে। কারও কারও মতে, মরসুমের শুরুতেই এই শুভবুদ্ধির উদয় ঘটা উচিত ছিল তাঁদের। আমিরশাহিতে তত দিনে ঘন-ঘন ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন, উল্টোপাল্টা প্রথম একাদশ নির্বাচন, আন্দ্রে রাসেল-সুনীল নারাইনের ছন্দে না থাকা নিয়ে ক্ষতবিক্ষত কেকেআর। প্লে-অফের দরজাও আর খোলেনি। এ বারে শুরু থেকে দায়িত্ব পেয়েছেন মর্গ্যান। তাই নাইট ভক্তরা আশা করতেই পারেন, বিশ্বজয়ী অধিনায়ক তাঁর জাদু-স্পর্শ দেখাবেন।
আবার ক্রিকেটে বহু প্রচলিত সেই প্রবাদ, ‘অধিনায়ক ততটাই ভাল, যতটা ভাল তাঁর দল।’’ কলকাতা নাইট রাইডার্স মোটেও ওয়ান ডে ক্রিকেটে বিশ্বজয়ী ইংল্যান্ড দল নয়। তাই ক্যাপ্টেন মর্গ্যানের জন্য লম্বা প্রশ্নপত্র তৈরি থাকছে। যেমন আন্দ্রে রাসেলকে আগের বিধ্বংসী রূপে ফেরানো যাবে কি? স্পিনার নারাইন এখনও ভেল্কি দেখাতে পারবেন কি না? নাইটদের সাফল্য এতটাই এই দুই ক্যারিবিয়ান তারকাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে যে, তাঁরা ছন্দে না থাকা মানে বিরাট শূন্যতা তৈরি হওয়া।
নারাইনের বিকল্প হিসেবে এ বারে তা-ও শাকিব-আল-হাসান রয়েছেন। এ বারের নিলাম থেকে সেরা ক্রয় বাংলাদেশের অলরাউন্ডার। এক বছর ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত থাকার পরে প্রত্যাবর্তন লগ্নে ক্ষুধার্তও থাকবেন শাকিব। তাঁর বাঁ হাতি স্পিন চেন্নাইয়ের পিচে কাজে আসতে পারে। সঙ্গে স্ট্রোকে ভরা আগ্রাসী ব্যাটিং। শাকিবকে রবিবার প্রথম একাদশে না রাখলেই ভুল হবে। নারাইনের জায়গা নিতে পারেন শাকিব, কিন্তু রাসেলের ছক্কা-বৃষ্টি না ঘটলে তার বিকল্প কোথায় পাওয়া যাবে? বিশেষ করে যখন উল্টো দিকে সানরাইজ়ার্স হায়দরাবাদে ব্যাটিং ঝড় তোলার মতো বড় বড় সব নাম রয়েছে। শুরুতেই ডেভিড ওয়ার্নারের মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান রয়েছেন। তাঁর সঙ্গী সদ্য ভারতের বিরুদ্ধে সফল হওয়া ইংল্যান্ডের ওপেনার জনি বেয়ারস্টো। গত বার ওপেনার হিসেবে সকলকে চমকে দেওয়া বাংলার ঋদ্ধিমান সাহাকে বাইরে রাখা কঠিন হবে। মিডল অর্ডারে মণীশ পাণ্ডে, কেন উইলিয়ামসনেরা আছেন। বোলিং বৈচিত্র ও ভারসাম্যে ভরা। ভুবনেশ্বর কুমারের সুইং, ইয়র্কার বিশেষজ্ঞ টি নটরাজন, টি-টোয়েন্টিতে বরাবর দারুণ সফল সন্দীপ শর্মা সামলাবেন পেস বোলিং বিভাগ। সঙ্গে থাকছে আফগান তারকা রশিদ খানের লেগস্পিন জাদু।
নাইটদের হাতে তেমনই প্রতিভাবান সব তরুণ ভারতীয় ক্রিকেটার রয়েছে। ব্যাটিংয়ে শুভমান গিল, পেস বোলিংয়ে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, শিবম মাভি, কমলেশ নগরকোটি। বিস্ময় স্পিনার হিসেবে গত বারই নজর কেড়েছেন বরুণ চক্রবর্তী, তবে হালফিলে তাঁর শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। চেন্নাইয়ের স্পিন-সহায়ক পিচে প্রচুর ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে হরভজন সিংহের। তাঁকে প্রথম একাদশে রাখা হয় কি না, দেখার। প্রসিদ্ধদের নেতৃত্বে গতির বিভাগে থাকছেন অস্ট্রেলীয় প্যাট কামিন্স।
২০১৮ সালের পরে প্লে-অফের মুখ দেখেনি কেকেআর। ২০১৪-তে এসেছিল শেষ আইপিএল ট্রফি। নতুন মরসুম, নতুন অভিযান, নতুন অধিনায়ক। নতুন ভাগ্যেরও খোঁজে নাইট রাইডার্স ভক্তরা।