আগামী শনিবারই সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে ১৩তম আইপিএলের বল গড়াতে চলেছে। ইতিমধ্যেই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো মরুশহরে অনুশীলনে নেমে পড়েছে। শেষ মুহূর্তের তুলির টান দিতে ব্যস্ত তারকারা। দেশীয় ক্রিকেটাররা শিবিরে যোগ দিলেও সব ফ্র্যাঞ্চাইজির বিদেশি তারকারা এখনও দলের সঙ্গে যোগ দেননি। ধীরে ধীরে যোগ দেবেন তাঁরা। মাঠের ভিতরে দেশীয় ক্রিকেটারদের পাশাপাশি বিদেশিদের পারফরম্যান্স পার্থক্য গড়ে দেয়। তাঁদের দিকেই তাকিয়ে থাকেন ক্রিকেটভক্তরা। এ বারের আইপিএলে যে বিদেশি তারকাদের দিকে নজর থাকবে, তাঁদের নিয়েই তৈরি করা হল একাদশ। দেখে নিন কারা রয়েছেন সেই তালিকায়।
অ্যারন ফিঞ্চ— আইপিএল-এ সব চেয়ে বেশি বার দল বদলেছেন অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে দলের ক্যাপ্টেন অ্যারন ফিঞ্চ। এ বার তিনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে খেলবেন। তাঁর অন্তর্ভূক্তি আরসিবি স্কোয়াডের ব্যাটিং বিভাগকে আরও শক্তিশালী করেছে বলেই মনে করছে ক্রিকেট মহল। আর অজি ওপেনার নিজে চাইছেন, আরসিবি-র হয়ে পাওয়ার প্লে-হিটারের ভূমিকায় ধরা দিতে। বিরাট কোহালির দলের হয়ে ফিঞ্চ কেমন খেলেন, সেই দিকেই নজর থাকবে সবার।
ডেভিড ওয়ার্নার— আইপিএলে ৪টি সেঞ্চুরির মালিক। তাঁর নেতৃত্বেই হায়দরাবাদে সূর্যোদয় হয়। সেই ডেভিড ওয়ার্নারের দিকে তাকিয়ে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। গত বার ১২ ম্যাচে ৬৯২ রান করেছিলেন। এ বারও তাঁর ব্যাট চওড়া হয়ে উঠবে এমনই আশা করছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ভক্তরা।
ইয়ন মর্গ্যান— মর্গ্যানের অন্তর্ভুক্তি কেকেআর-কে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। ঠান্ডা মাথায় তাঁর নেতৃত্ব ইংল্যান্ডকে প্রথম বার বিশ্বকাপ এনে দিয়েছে। নাইট শিবিরে অধিনায়ক দীনেশ কার্তিককে প্রয়োজনের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিতে পারবেন মর্গ্যান। এ ছাড়াও তাঁর ব্যাটিং দু’বারের আইপিএল জয়ী দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
স্টিভ স্মিথ- সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুণে ওয়ারিয়র্সের হয়ে খেলেই আইপিএলে নজর কাড়েন স্টিভ স্মিথ। আর এখন তো তিনি রীতিমতো তারকা। রাজস্থান রয়্যালসের চালিকাশক্তি স্মিথই। গত বার ১২ ম্যাচে ৩১৯ রান করেন অজি তারকা। তাঁর আগে শেন ওয়ার্নের হাত ধরে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রাজস্থান। স্মিথ কি ছুঁতে পারবেন ওয়ার্নকে?
আন্দ্রে রাসেল—গত বারের আইপিএল কেকেআর ভক্তদের কাছে মনে থাকবে শুধু আন্দ্রে রাসেলের জন্যই। তিন ওভারে পঞ্চাশ রান দরকার, এমন পরিস্থিতি থেকেও ম্যাচ বের করে এনে দলকে জিতিয়েছেন তিনি। গত বার ১৪ ম্যাচে ৫১০ রান করেছেন রাসেল। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতে নেন ১১টি উইকেট। এ বারও রাসেলকে সামনে রেখেই পরিকল্পনা তৈরি করছে কেকেআর। দলের মেন্টর ডেভিড হাসি ‘ক্যারিবিয়ান দৈত্য’কে ব্যাটিং অর্ডারে তিন নম্বরে পাঠানোর কথা ভাবছেন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস তিনে নামলে রাসেল টি টোয়েন্টি ফরম্যাটেও ডাবল সেঞ্চুরি করে দিতে পারবেন। এ রকম এক জন ম্যাচ উইনার অলরাউন্ডার যে কোনও দলের সম্পদ।
বেন স্টোকস—ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ জেতানোর নেপথ্য নায়ক বেন স্টোকস। সেই তারকাকে আইপিএলের শুরুর দিকে হয়তো পাচ্ছে না রাজস্থান রয়্যালস। ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার অসুস্থ বাবার পাশে রয়েছেন নিউজিল্যান্ডে। আইপিএল নিলামে স্টোকসকে সাড়ে ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে কেনে রাজস্থান রয়্যালস। ২৯ বছর বয়সি ইংল্যান্ডের তারকা এখনও পর্যন্ত ৬৭ টেস্ট, ৯৫ ওয়ানডে ও ২৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে একক দক্ষতায় টেস্টও জিতিয়েছেন তিনি। তিনি ফিরলে রাজস্থান রয়্যালসের শক্তি যে বেড়ে যাবে বেশ কয়েক গুণ তা বলাই বাহুল্য।
ডোয়েন ব্রাভো— মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। দুর্দান্ত এক নজির গড়েই আইপিএল খেলতে আসছেন ডোয়েন ব্রাভো। প্রথম বোলার হিসেবে টি-২০ ক্রিকেটে ৫০০ উইকেটের মাইলস্টোন টপকান এই ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। যদিও শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নয়, ব্রাভো এই নজির গড়েন ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মিলিয়ে। গত বার অবশ্য তিনি ব্যাট হাতে বেশি রান করতে পারেননি। ১২টা ম্যাচ থেকে মাত্র ৮০ রান করেন। বল হাতে তুলে নেন ১১টি উইকেট। গত বারের থেকেও এ বার ভাল পারফরম্যান্স করার উপরে জোর দিচ্ছেন ব্রাভো।
সুনীল নারিন—টি টোয়েন্টি ফরম্যাটে সুনীল নারিনের চারটে ওভার সব চেয়ে ভয়ঙ্কর। ওই চার ওভার ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। ২০১২ সাল থেকে এই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার আইপিএল খেলছেন। কিন্তু তাঁর রহস্যময় স্পিনের ধাঁধার সমাধান এখনও করতে পারেননি বিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা। ব্যাটসম্যান নারিনও কেকেআর-এর বড় ভরসা। ওপেন করতে নেমে তাঁর ঝোড়ো ব্যাটিং প্রতিপক্ষকে শুরুতেই ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়। প্রতি বারের মতো এ বারও নারিনের দিকেই তাকিয়ে থাকবে কেকেআর-এর থিঙ্ক ট্যাঙ্ক।
প্যাট কামিন্স—আকাশছোঁয়া সাড়ে ১৫ কোটি টাকায় কলকাতা নাইট রাইডার্স এ বার কিনেছে প্যাট কামিন্সকে। এর আগেও কেকেআর-এর হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে অজি পেসারের। অন্য দলের হয়েও খেলেছেন আইপিএল-এ। তবে সেই কামিন্স ও আজকের কামিন্সের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর কামিন্স নিজেই জানিয়েছেন, আইপিএল-এর অভিজ্ঞতা তাঁকে পরিণত করেছে। ডেথ ওভারে বল করার কৌশল, তাঁর ক্রিকেটীয় দক্ষতা বাড়তে সাহায্য করেছে। কেকেআর এ বার বদলে যাওয়া কামিন্সকে পেয়েছে। আমিরশাহির প্রাণ হীন পিচে বল হাতে কামিন্স ফুল ফোটাবেন, এই স্বপ্নই দেখছেন কেকেআর ভক্তরা।
রশিদ খান—সানরাইজার্স হায়দরাবাদের চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার রশিদ খান। আইপিএলে তাঁর চার ওভার ডেভিড ওয়ার্নারের আসল অস্ত্র। অনেকেই বলে থাকেন, আফগান স্পিনারের মানসিকতা ফাস্ট বোলারের মতো। তাঁর গুগলি পড়তে ব্যর্থ তারকা ব্যাটসম্যানরাও। ব্যাট হাতে রশিদ খানের ঝোড়ো ইনিংস সানরাইজার্সের সম্পদ। এ বারও ব্যাট-বল হাতে রশিদ খানের সেরাটা দেখতে চান ক্রিকেটভক্তরা।
ইমরান তাহির— হরভজন সিংহ নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন আইপিএল থেকে। তাই ইমরান তাহির ধোনির সেরা অস্ত্র হতে পারেন। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে তিনি বোলিং ওপেন করে চমকে দিয়েছিলেন। শুধু নতুন বল হাতে প্রথম ওভার করাই নয়, দ্বিতীয় বলে উইকেটও তুলে নিয়েছিলেন তিনি। সেই ইমরান তাহিরকে দিয়ে ধোনি যদি বোলিং ওপেন করান অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। গত বার ১৭ ম্যাচ থেকে ২৬ উইকেট নিয়েছিলেন তাহির। এ বারও তাঁর থেকে উইকেট চাইছেন সিএসকে ভক্তরা।
শেলডন কটরেল – লোকেশ রাহুলের ক্যাপ্টেন্সিতে খেলার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন শেলডন কটরেল। ২০১৯ বিশ্বকাপে ১২টি উইকেট নেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পেসার। এই পারফরম্যান্সের জন্যই আইপিএল নিলামে সাড়ে আট কোটি টাকার বিনিময়ে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব কিনে নেয় তাঁকে। বল হাতে গতির ঝড় তুলে উইকেট তুলতে চান কটরেল। আর তিনি উইকেট পেলেই তো মাঠে হবে স্যালুট-উদযাপন। সেই মুহূর্ত উপভোগ করতে তৈরি ক্রিকেটভক্তরাও। এই দলের দ্বাদশ ব্যক্তি তিনিই।