সুপার ওভারে প্রথম বলেই বোল্ড ওয়ার্নার। উল্লসিত ফার্গুসন। ছবি: আইপিএল।
সুপার ওভারেও বিধ্বংসী লকি ফার্গুসন। তার আগে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। সুপার ওভারে নিলেন ২ উইকেট। প্রথম বলেই ফেরালেন হায়দরাবাদ অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারকে। দ্বিতীয় বলে এসেছিল ২। আর তৃতীয় বলে বোল্ড করলেন আব্দুল সামাদকে। সুপার ওভারে ২ উইকেট পড়া মানেই শেষ ইনিংস। ফলে, জেতার জন্য ৬ বলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের দরকার ছিল মাত্র ৩ রান। রশিদ খানের চতুর্থ বলে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে গেল কলকাতা।
তার আগে ৪০ ওভারেও ফয়সালা হয়নি দ্বৈরথের। সুপার ওভারে গিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স-সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ম্যাচ। প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৬৩ তুলেছিল কলকাতা। জবাবে ৬ উইকেটে ১৬৩ রানে থেমেছিল হায়দরাবাদ।
দুরন্ত লকি ফার্গুসনের আগুনে পেসেই সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফিরেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। পর পর কেন উইলিয়ামসন, প্রিয়ম গর্গ, মণীশ পাণ্ডেকে ফিরিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু চার নম্বরে নামা হায়দরাবাদ অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার সেখান থেকে টানলেন দলকে। ৩৩ বলে তাঁর ৪৭ রানের ইনিংসের কারণেই ম্যাচ টাই হল।
১৬৪ রানের জয়ের লক্ষ্য তাড়া করে ভালই এগোচ্ছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। প্রথম উইকেটে পঞ্চাশ তুলে ফেলেছিলেন কেন উইলিয়ামসন ও জনি বেয়ারস্টো। পাওয়ারপ্লে-র ৬ ওভারে উঠেছিল ৫৮। কিন্তু, সেখান থেকে ৮২ রানে চতুর্থ উইকেট পড়ে গেল তাদের। ২৪ রানের মধ্যে ৪ উইকেট ফেলে দিয়ে বিপক্ষকে জোরে ধাক্কা দিয়েছিল কলকাতা।
পাওয়ারপ্লে-র পরই প্রথম আঘাত হেনেছিল কলকাতা। পর পর দুই উইকেট নিয়েছিলেন লকি ফার্গুসন। প্রথমে তাঁর বলে কেন উইলিয়ামসন (১৯ বলে ২৯) ক্যাচ দিয়েছিলেন নীতিশ রানাকে। ৫৮ রানে প্রথম উইকেট পড়ার পর দ্বিতীয় উইকেট পড়েছিল ৭০ রানে। প্রিয়ম গর্গ (৭ বলে ৪) বোল্ড হয়েছিলেন। দলীয় ওই রানেই ফিরেছিলেন বেয়ারস্টো (২৮ বলে ৩৬)। বরুণ চক্রবর্তীর বলে আন্দ্রে রাসেলকে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। এর পর ঘন্টায় ১৪৮ কিমি গতির ইয়র্কারে বোল্ড হলেন মণীশ পাণ্ডে (৭ বলে ৬)। তাঁর বোলিং গড় ৪-০-১৫-৩।
পঞ্চম উইকেট পড়েছিল ১৫.২ ওভারে ১০৯ রানে। প্যাট কামিংসের বলে শুভমন গিলকে ক্যাচ দিয়েছিলেন বিজয় শঙ্কর (১০ বলে ৭)। সেই পরিস্থিতি থেকে অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ও আব্দুল সামাদ টানছিলেন কমলা জার্সিধারীদের। শেষ ৩ ওভারে হায়দরাবাদের দরকার ছিল ৩৭ রান। হাতে ছিল ৫ উইকেট। সেটাই দাঁড়াল ২ ওভারে ১২ রানে।
শিবম মাভির সেই ওভারের ষষ্ঠ বলে সীমানায় রিলে ক্যাচে ফিরেছিলেন সামাদ (১৪ বলে ২৩)। ফার্গুসন ভারসাম্য হারানোর আগে বল ছুড়ে দিয়েছিলেন উঠল শুভমন গিলকে। ১৪৬ রানে পড়ল ষষ্ঠ উইরেট। শেষ ৬ বলে হায়দরাবাদের দরকার ছিল ১৮ রান। ৪ বলে সেটাই দাঁড়াল ১২ রানে। আন্দ্রে রাসেলকে পর পর তিন বলে বাউন্ডারি মেরে তা ২ বলে ৪ রানে কমিয়ে আনলেন ওয়ার্নার। শেষ বলে দরকার ছিল ২। ওয়ার্নারের ব্যাটে এল মাত্র ১। ফলে, টাই হল ম্যাচ।
তার আগে চাপ কাটিয়ে সম্মানজনক স্কোর খাড়া করেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। রবিবার আবু ধাবিতে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে চাপে পড়ে গিয়েছিল ইনিংস। সেখান থেকে অধিনায়ক অইন মর্গ্যান ও দীনেশ কার্তিকের জুটি ১৬৩ রানে পৌঁছে দিয়েছিল দলকে।
৪৮ রানে প্রথম উইকেট পড়েছিল কলকাতার। নটরাজনের বলে বোল্ড হয়েছিলেন রাহুল ত্রিপাঠী (১৬ বলে ২৩)। ১১.৪ ওভারে ৮৭ রানে পড়েছিল দ্বিতীয় উইকেট। রশিদ খানের লং অফে শুভমনের (৩৭ বলে ৩৬) ক্যাচ ধরেছিলেন প্রিয়ম গর্গ। তৃতীয় উইকেট পড়েছিল তার পরের ওভারে। বিজয় শঙ্করের বলে নীতিশ রানার (২০ বলে ২৯) ক্যাচ ধরেছিলেন প্রিয়ম। প্রিয়মের দুটো ক্যাচই প্রশংসা কুড়িয়েছিল। ৮৮ রানে তিন উইকেট হারিয়েছিল কলকাতা। চতুর্থ উইকেট পড়েছিল ১০৫ রানে। নটরাজনের বলে মারতে গিয়ে ফিরেছিলেন আন্দ্রে রাসেল (১১ বলে ৯)। পঞ্চম উইকেটে মর্গ্যান-কার্তিক ৩০ বলে যোগ করেছিলেন ৫৮ রান। ফলে, পাঁচ উইকেটে ১৬৩ রানে থেমেছিল কলকাতা।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ধীরে ধীরে গতি বাড়াচ্ছিল কলকাতা। প্রথম ৩ ওভারে উঠেছিল মাত্র ১৫। সেটাই পাওয়ারপ্লে-র ৬ ওভারে দাঁড়িয়েছিল ৪৮। ৯ ওভারের শেষে ১ উইকেট হারিয়ে বোর্ডে উঠেছিল ৬৪। কিন্তু, তার পর শুভমন-রানা ফেরায় মিডল অর্ডারে সমস্যা বেড়েছিল। তার উপর রাসেলও রান পাননি।
এ দিন দ্বিতীয় ওভারেই জীবন পেয়েছিলেন শুভমন গিল। নটরাজনের বলে ডিপ স্কোয়ারে তাঁর ক্যাচ ফেলেছিলেন রশিদ খান। শুভমনের তখন মাত্র ১। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেন না। রানের গতি বাড়াতে পারছিলেন না তিনি। এই অবস্থায় রশিদকেই মারতে গিয়ে দিয়েছিলেন উইকেট।
আরও খবর: অবশেষে হাতে আই লিগ, সবুজ-মেরুনে ছয়লাপ পাঁচতারা
আরও খবর: ট্রফি নিয়ে বিজয়োৎসব, রাজপথে শোভাযাত্রা মোহনবাগান সমর্থকদের
আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে শুরু করেছিলেন তিনে নামা নীতিশ রানা। কিন্তু তিনিও বেশিক্ষণ থাকেননি। চারে নামলেও রান পাননি রাসেল। পঞ্চম উইকেটে অধিনায়ক অইন মর্গ্যান ও প্রাক্তন অধিনায়ক দীনেশ কার্তিকের উপর দায়িত্ব পড়েছিল দলকে সম্মানজনক স্কোরে পৌঁছে দেওয়ার। মর্গ্যান ২৩ বলে ৩৪ করে ফিরেছিলেন ইনিংসের শেষ বলে। বাসিল থাম্পির বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। আর কার্তিক অপরাজিত ছিলেন ১৪ বলে ২৯ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে।
কলকাতা দলে এদিন দুটো বদল ঘটেছিল। এগারোয় এসেছিলেন কুলদীপ যাদব ও লকি ফার্গুসন। বাদ পড়েছিলেন ক্রিস গ্রিন ও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। হায়দরাবাদেও ঘটেছিল দুই পরিবর্তন। বাদ পড়েছিলেন খলিল আহমেদ ও শাহবাজ নাদিম। দলে এসেছিলেন বাসিল থাম্পি ও আব্দুল সামাদ।
এই সাক্ষাতের আগে ৮ ম্যাচে ৮ পয়েন্টে চার নম্বরে ছিল কলকাতা। জিতে ৯ ম্যাচে ১০ পয়েন্টে প্লে-অফের দিকে এগিয়ে গেল নাইটরা। অন্যদিকে, ৯ ম্যাচে ৬ পয়েন্টে পাঁচেই রয়ে গেল হায়দরাবাদ।