আক্রমণাত্মক কুইন্টন। ছবি: আইপিএল।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক হিসেবে শুরুটা সুখের হল না অইন মর্গ্যানের। কুইন্টন ডি’ককের ঝোড়ো ইনিংসের সুবাদে শুক্রবার আবু ধাবিতে ৮ উইকেটে অনায়াসে কলকাতাকে হারাল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। ১৪৮ রান তাড়া করতে নেমে ১৬.৫ ওভারেই ম্যাচ জিতে নিল রোহিত শর্মার দল (১৪৯-২)।এই জয়ের ফলে পয়েন্ট তালিকায় এক নম্বরে উঠে এল মুম্বই। ৮ ম্যাচে তাদের পকেটে ১২ পয়েন্ট। জয় ৬টিতে। অন্য দিকে, ৮ ম্যাচে ৮ পয়েন্টে চার নম্বরেই থাকল কলকাতা।
মুম্বইয়ের এই দুরন্ত জয়ের নায়ক প্রোটিয়া ওপেনার কুইন্টন। ৪৪ বলে ৭৮ রানে অপরাজিত থেকে যান তিনি। তাঁর ইনিংসে ছিল ৯টি চার ও ৩টি ছয়। ১৭৭.২৭ স্ট্রাইক রেটে মাঠ শাসন করলেন বাঁ-হাতি। পাশাপাশি, কৃতিত্ব প্রাপ্য মুম্বইয়ের লেগস্পিনার রাহুল চহারেরও।
রান তাড়ায় শুরুটা আক্রমণাত্মক করেছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। প্রথম ৬ ওভারে ৫১ রান তুলেছিলেন রোহিত শর্মা ও কুইন্টন ডি’কক। সেটাই ১০ ওভারে দাঁড়াল ৯৪। মুম্বইয়ের প্রথম উইকেট পড়ল ওই ৯৪ রানে। শিবম মাভির বলে উইকেটকিপার দীনেশ কার্তিককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রোহিত (৩৬ বলে ৩৫)। কিন্তু, কুইন্টনকে থামানো যায়নি।
প্রথম ওভার অফস্পিনার ক্রিস গ্রিনকে দিয়ে শুরু করেছিল কলকাতা। কিন্তু লাভ হয়নি। আইপিএলে তাঁর প্রথম বলটাই সীমানায় পাঠিয়েছিলেন রোহিত। পাওয়ারপ্লে-র মধ্যে ২ ওভার হাত ঘুরিয়ে ১৬ রান দিলেন তিনি। তবে তাঁর বলে কুইন্টনের ক্যাচও পড়ল। তার খেসারতই দিতে হল এর পর। কুইন্টন রীতিমতো ছেলেখেলা করলেন কেকেআর বোলারদের নিয়ে।
মুম্বই ইনিংসের ৫০ এসেছিল ৩৪ বলে। রোহিতের তুলনায় বেশি আগ্রাসী ছিলেন কুইন্টন। এর মধ্যে তাঁর রান ছিল ২৬। রোহিতের ছিল ১৯। কুইন্টনের হাফ সেঞ্চুরি এসেছিল মাত্র ২৫ বলে। ৮টি চার ও ২টো ছয়ের সাহায্যে। সেখান থেকে ম্যাচ শেষ করে ফিরলেন তিনি।
মুম্বইয়ের দ্বিতীয় উইকেট পড়েছিল ১৩.৩ ওভারে ১১১ রানে। স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীকে মারতে গিয়ে ব্যাটে লাগিয়ে বোল্ড হয়েছিলেন তিনে নামা সূর্যকুমার যাদব (১০ বলে ১০)। কিন্তু, অন্য প্রান্তে শট খেলে চলেছিলেন কুইন্টন। বিশেষ করে অন সাইডে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন তিনি। মর্গ্যান বার বার বোলার বদলে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তা কাজে আসেনি। বরং চার নম্বরে নামা হার্দিক পান্ড্যও তুলেছিলেন ঝড়। অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেটে কুইন্টন-হার্দিক ২০ বলে যোগ করেছিলেন ৩৮ রান। হার্দিক ১১ বলে অপরাজিত ছিলেন ২১ রানে। তাঁর ইনিংসে ছিল তিনটি চার ও একটি ছয়।
তার আগে ম্যাচের প্রথমার্ধে প্যাট কামিংসের ঝোড়ো হাফ সেঞ্চুরি ও অইন মর্গ্যানের ব্যাটিং চাপ কাটিয়ে লড়াইয়ের জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সকে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৬১ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল দল। সেখান থেকে ষষ্ঠ উইকেটে মর্গ্যান ও কামিংসের জুটি পরিত্রাতা হয়ে উঠেছিল। পাঁচ উইকেটে ১৪৮ তুলেছিল নাইটরা। ৩৬ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন কামিংস। ২৯ বলে ৩৯ রানে নট আউট ছিলেন মর্গ্যান।
ধীরে-সুস্থে শুরু করেছিল কলকাতা। প্রথম দুই ওভারে উঠেছিল ১২ রান। তৃতীয় ওভারে অবিশ্বাস্য ক্যাচে রাহুল ত্রিপাঠীকে (৯ বলে ৭) ফেরালেন সূর্যকুমার যাদব। ট্রেন্ট বোল্টের বলে পয়েন্টে ধরেছিলেন দুরন্ত ক্যাচ। ১৮ রানে পড়েছিল কলকাতার প্রথম উইকেট।
রাহুল ফেরার পর তিনে নামা নীতিশ রানা (৬ বলে ৫) রান পাননি। নেথান কুল্টার-নিলের বলে তাঁর ক্যাচ ধরেছিলেন উইকেটকিপার কুইন্টন ডি’কক। ৩৩ রানে পড়েছিল দ্বিতীয় উইকেট। পাওয়ারপ্লে-র ছয় ওভারে ওটাই ছিল কলকাতার রান। সপ্তম ওভারে শুভমন গিল (২৩ বলে ২১) ফিরেছিলেন। রাহুল চাহারের বলে কায়রন পোলার্ডকে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। তৃতীয় উইকেট পড়েছিল ৪২ রানে। চতুর্থ উইকেট পড়েছিল পরের বলেই। ব্যাটে লাগিয়ে বল স্টাম্পে টেনে এনেছিলেন চার নম্বরে নামা দীনেশ কার্তিক (৮ বলে ৪)। নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে ব্যাটিংয়ে মন দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, ব্যাট হাতে ফের ব্যর্থ হলেন তিনি। পর পর দুই বলে উইকেট নিয়ে কলকাতাকে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন লেগস্পিনার রাহুল। তাঁর চার ওভারে উঠেছিল মাত্র ১৮ রান।
আরও পড়ুন: মরসুমের মাঝপথে নেতৃত্ব বদল স্বস্তির নয়, বলছেন ইরফান
আরও পড়ুন: হারলে কে দায় নিত? গেল-রাহুলদের তীব্র আক্রমণ সহবাগের
১০ ওভারের শেষে বোর্ডে উঠেছিল ৫৭। মনে করা হচ্ছিল, পাঁচে নামা মর্গ্যান ও ছয়ে নামা আন্দ্রে রাসেলের জুটি মেরামত করবে ইনিংস। কিন্তু, তা হয়নি। ৬১ রানে পড়েছিল পঞ্চম উইকেট। জশপ্রীত বুমরার বাউন্সারে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন রাসেল (৯ বলে ১২)। ১৪ ওভারের শেষে স্কোর দাঁড়াল পাঁচ উইকেটে ৮৯। বিরতিতে রাহুল চাহার জানালেন, মুম্বই শিবির তখন কলকাতাকে ১২০ রানের মধ্যে আটকে রাখার কথা ভেবেছিল।
কলকাতার অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টস জিতেছিলেন অইন মর্গ্যান। টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, বড় রান উঠল না। এক সময় অবশ্য আরও খারাপ দেখাচ্ছিল পরিস্থিতি। ৫৩ বলে প্রথম পঞ্চাশের পর ইনিংসের ১০০ রান এসেছিল ৯৭ বলে। ৬১ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে প্যাট কামিংসের সঙ্গে দলকে টানলেন মর্গ্যান। দু’জনের জুটিতে ৫০ রান এসেছিল ৪০ বলে। শেষ পর্যন্ত ৫৪ বলে দু’জনে যোগ করেছিলেন ৮৭ রান। কামিংসের পঞ্চাশ এসেছিল ৩৫ বলে। তাঁর ৫৩ রানের ইনিংসে ছিল পাঁচটি চার ও দুটো ছয়। মর্গ্যানের ৩৯ রানে ছিল দুটো চার ও দুটো ছয়।
মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে প্রথম দেখায় হেরেছিল কলকাতা। শুক্রবারের ম্যাচ তাই হয়ে উঠেছিল প্রতিশোধের। কিন্তু, তা ছাপিয়ে এই ম্যাচ হয়ে উঠেছিল অন্য কারণে গুরুত্বপূর্ণ। কার্তিককে ছেঁটে ফেলে এই ম্যাচ থেকেই কলকাতার নেতৃত্বে এসেছিলেন মর্গ্যান। অর্থাৎ, কেকেআরে শুরু হল কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের সঙ্গে মর্গ্যানের যুগলবন্দি। টস জিতে ভালই শুরু করেছিলেন মর্গ্যান। ব্যাট হাতেও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লড়াই চালালেন তিনি।
এ দিন কলকাতার দলে হয়েছিল দুটো পরিবর্তন। বাদ গিয়েছিলেন টম ব্যান্টন ও কমলেশ নাগরকোটি। এসেছিলেন ক্রিস গ্রিন ও শিবম মাভি। ফলে, এই ম্যাচেও দলে অনুপস্থিত থাকলেন সুনীল নারাইন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলে একটি পরিবর্তন ঘটেছেিল। জেমস প্যাটিনসনের জায়গায় এসেছিলেন নাথান কুল্টার-নিল।