শেষ মুহূর্তে ম্যাচের রং বদলে দিলেন জাদেজা। ছবি-সোশ্যাল মিডিয়া।
চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের। সেই ম্যাচ হেরে প্লে অফের রাস্তা কঠিন করে ফেলল কলকাতা। প্রথমে ব্যাট করে কলকাতা ২০ ওভারে করেছিল পাঁচ উইকেটে ১৭২ রান। রক্তের গতি বাড়িয়ে দিয়ে প্রায় হাতের বাইরে চলে যাওয়া ম্যাচ ছিনিয়ে নিল চেন্নাই। রবীন্দ্র জাদেজা অসম্ভবকে সম্ভব করলেন। এ দিন চেন্নাই জেতার ফলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স পৌঁছে গেল প্লে অফে। কলকাতাকে থাকতে হল অপেক্ষায়। ১৩ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে দু' বারের চ্যাম্পিয়নরা পাঁচ নম্বরে। হাতে রয়েছে কেবল একটি ম্যাচ। পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা ব্যাঙ্গালোর, দিল্লি ও পঞ্জাবের এখনও ২টি করে ম্যাচ বাকি। আজকের পর কলকাতার পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে গেল।
কলকাতার রান তাড়া করতে নেমে একসময়ে ম্যাচের রাশ ছিল চেন্নাইয়ের হাতে। ম্যাচের সেরা রুতুরাজ গায়কোয়াড় ও অম্বতি রায়ুডুর পার্টনারশিপ আশায় রেখেছিল চেন্নাই শিবিরকে। কিন্তু ১৩.৪ ওভারে কামিন্সের বলে রায়ুডু নিজের উইকেট ছুড়ে দিয়ে চেন্নাইকে বিপদে ফেলে দেন। সেই ওভারেই দুটো বাউন্ডারি মারা হয়ে গিয়েছিল রায়ুডুর। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় আউট হন রায়ুডু। অন্য দিকে ওপেন করতে নেমে রুতুরাজ দারুণ ইনিংস উপহার দেন। ৩৭ বলে ৫০ রান করেন তিনি। দুরন্ত সব শট খেলেন রুতুরাজ। এগিয়ে এসে চিপ করে তাঁর ছক্কা অনেক দিন মনে রাখবেন ক্রিকেটভক্তরা। ৫৩ বলে ৭২ রান করে কামিন্সের বলে বোল্ড হন রুতুরাজ। ম্যাচের শেষে অধিনায়ক ধোনি প্রশংসা করেন তরুণ ওপেনারের।
বছর তিনেক আগে চেন্নাইয়ের খেলা থাকলেই চিপকের স্ট্যান্ডে দেখা যেত বরুণ চক্রবর্তীকে। ধোনি এবং তাঁর দলের জন্য গলা ফাটাতেন। চেন্নাইয়ের নেট বোলার ছিলেন তিনি। সেই বরুণ চক্রবর্তীর স্পিনে এ দিন ঠকে যান ধোনি (১)। আগের সাক্ষাতেও ধোনির উইকেট নিয়েছিলেন বরুণ। তাঁর জন্যই এ দিন ম্যাচে ফিরে এসেছিল কলকাতা। কিন্তু কলকাতা বোলারদের জন্যই ম্যাচ হারতে হল অইন মর্গ্যানকে। রুতুরাজ যখন ফেরেন, তখন ১৭.২ ওভারে চেন্নাইয়ের রান ছিল ৪ উইকেটে ১৪০। শেষ ১২ বলে জেতার জন্য তিন বারের চ্যাম্পিয়নদের দরকার ছিল ৩০ রান। লকি ফার্গুসনের মতো বোলার ১৯তম ওভারে দিলেন ২০ রান। জাদেজার ব্যাট ঝলসে উঠল। লকি ফার্গুসনের দারুণ গতির বল তুলে ফেললেন গ্যালারিতে। শেষ ওভারের পঞ্চম ও শেষ বলে কমলেশ নাগারকোটিকে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ বের করে নেন ফিনিশার জাদেজা (১১ বলে ৩১ রান)।
চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে এই ম্যাচ ছিল মর্যাদার। এই পরিস্থিতিতে টস জিতে প্রথমে কলকাতাকে ব্যাট করতে পাঠায় চেন্নাই। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডারে ব্যাপক পরিবর্তন করে কলকাতা। কেন এত পরিবর্তন, তা ভাল বলতে পারবেন কলকাতা অধিনায়ক। এত পরিবর্তন অবশ্য কাজে আসেনি। ৫৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় কলকাতা। নিজের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই শুভমন গিলকে বোল্ড করেন কর্ণ। বল পড়ার পরে স্ট্রোক খেলার জন্য অনেকক্ষণ সময় নেন গিল। কর্ণর বল স্কিড করে গিলের উইকেট ভেঙে দেয়। ১৭ বলে ২৬ রানে আউট হন গিল। শুরুটা তিনি বেশ ভালই করেছিলেন। তখন মনে হয়েছিল গিলের ব্যাটে বড় রান লেখা আছে। কিন্তু কর্ণর ডেলিভারি ঠিক মতো বুঝতে না পারায় ফিরতে হল কলকাতার তরুণ ওপেনারকে।
নীতিশ রানা ওপেনার সমস্যা দূর করেছেন এই নাইট শিবিরে। এ দিন শুরুর দিকে চেনা ছন্দে ধরা না দিলেও, ম্যাচ যত গড়াতে থাকে রানা ততই খোলস ছেড়ে বেরোন। ৮৭ রানে এনগিডির বলে আউট হন রানা। তাঁর ইনিংসে ছিল ১০টি চার ও চারটি ছয়। তিন নম্বরে নেমে রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করেন সুনীল নারাইন। বেশিক্ষণ তিনি টিকতে পারেননি। স্যান্টনারকে মারতে গিয়ে রবীন্দ্র জাডেজার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ক্যারিবিয়ান তারকা (৭)। রিঙ্কু সিংহ এ দিন প্রথম একাদশে জায়গা পান। তাঁকে চারে পাঠান মর্গ্যান।জাডেজার বলে রিঙ্কু ফেরেন মাত্র ১১ রানে। পাঁচে নেমে মর্গ্যান করেন মাত্র ১৫ রান। কার্তিক ২১ রানে অপরাজিত থেকে যান। কলকাতা শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে করে ১৭২ রান। আরও রান যোগ করতেই পারত কলকাতা। কিন্তু ব্যাটিং অর্ডারে এত পরিবর্তন আনায় তা আর হয়নি। ফার্গুসন-নাগারকোটিদের হতশ্রী বোলিংয়ে নিজেদের অবস্থা আরও কঠিন করে ফেলল নাইটরা।
#CSK have won the toss and they will bowl first against #KKR#Dream11IPL pic.twitter.com/w1EwSpFG7l