অতিথি আপ্যায়ন। আশরাফুলের বাড়িতে আমন্ত্রিত ভাজ্জি ও সচিন। —নিজস্ব চিত্র।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাঁর আবির্ভাব হয়েছিল ধূমকেতুর মতো। অভিষেক টেস্টে কলম্বোর মাঠে সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করে নজির গড়েছিলেনতিনি। ক্রিকেটবিশ্বকে তাঁর ব্যাট জানান দিয়েছিল, ‘আমি এসে গিয়েছি।’
বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে মহম্মদ আশরাফুলের নাম ছড়িয়ে পড়েছিল আইপিএল-এর বিশ্বেও। ২০০৯ সালে সচিন তেন্ডুলকরের মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তাঁকে কিনে নিয়েছিল নিলামে। স্বপ্ন সত্যি হয়েছিল আশরাফুলের। ১১ বছর পরেও আইপিএল নিয়ে বাংলাদেশের প্রাক্তন তারকা সমান উচ্ছ্বসিত। পদ্মাপাড় থেকে এক নিঃশ্বাসে তিনি বলতে থাকেন, ‘‘মুম্বই ইন্ডিয়ান্স-এর হয়ে খেলা আমার জীবনের সেরা ঘটনা। আমার রোল মডেল সচিন তেন্ডুলকর। আর সেই সচিনের সঙ্গে একই ড্রেসিংরুমে ৪৫ দিন কাটিয়েছিলাম। সব ঘটনা আমার মনে আছে।’’
লোকসভা ভোটের জন্য ২০০৯ সালের আইপিএল চলে গিয়েছিল দেশের বাইরে। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত সে বারের আইপিএলে একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন আশরাফুল। ব্যাট হাতে তিনি যখন নেমেছিলেন, তখন ক্রিজে ছিলেন ‘মাস্টার ব্লাস্টার’। সেই স্মৃতি এখনও আশরাফুলের মনে জীবন্ত। স্মৃতির পাতা উলটে আশরাফুল বলেন, ‘‘ওই ম্যাচের কথা আমার মনে আছে। রান করতে পারিনি আমি। মাত্র ২ রান করেছিলাম। আমি যখন ব্যাট করতে নামি, তখন স্ট্রাইকে ছিল সচিন।’’
আরও পড়ুন: ‘কলকাতা আমার, ইডেন আমার, কিন্তু কেকেআর কখনওই আমার নয়’
আইপিএল-এর জন্যই ‘আইডল’-এর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সেই সম্পর্কের শিকড় এতটাই গভীরে ছিল যে, ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ পৌঁছে যান আশরাফুলের বাংলাদেশের বাড়িতেও। সে বারের টুর্নামেন্টের পরেই বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিল ভারত। ওয়ানডে-তে দলে ছিলেন না সচিন। পরে টেস্ট দলের সঙ্গে যোগ দেন‘লিটল মাস্টার’। সেই সফর চলাকালীন হরভজন সিংহ এক দিন আশরাফুলের কাছে আবদার করে বসেন, ‘‘তোমার বাড়িতে নিয়ে যাবে না?’’সেই প্রসঙ্গে আশরাফুল বলেন, ‘‘আমার কাছে সেটা দারুণ একটা মুহূর্ত ছিল। সচিন আমার বাড়িতে এসেছিল। একদিন হরভজন আমাকে বলল, তোমার বাড়িতে নিয়ে যাবে না?’’ সচিন-ভাজ্জিকে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন আশরাফুল। সেদিন তাঁর বাড়িতে যেন নেমে এসেছিল আকাশের চাঁদ। সচিন-হরভজনের পাতে ইলিশ তুলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের তারকা। তিনি বলছিলেন, ‘‘ওই মুহূর্ত ভোলার নয়। সচিন আমার বাড়িতে এসেছিল, এ আমার সারাজীবন মনে থাকবে।’’
২০০৯ সালের আইপিএল-এ মাত্র একটি ম্যাচই খেলেন তিনি। তার পর আর ফ্র্যাঞ্চাইজির বিশ্বে দেখা যায়নি আশরাফুলকে। দলে ঢোকার লড়াইটাও ছিল তীব্র। তিনি বলছিলেন, ‘‘দলে ঢোকার জন্য তীব্র লড়াই হত। ১০ জনের মধ্যে থেকে চার জন হওয়া ছিল খুবই কঠিন।’’ এখনও তিনি মুম্বই পরিবারেরই অংশ। আইপিএল-এর ১০ বছর পূর্তিতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের তরফে তাঁকে মেল পাঠিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। একটা টি শার্টও পাঠানো হয়েছিল। তবে মুম্বইয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে আশরাফুলের পক্ষে এ দেশে আসা আর সম্ভব হয়নি।
এ বারের আইপিএল-এ পদ্মাপাড়ের কোনও প্রতিনিধি নেই।মুস্তাফিজুর রহমানকে চেয়েও দলে পায়নি কেকআর। আমিরশাহিতে ফ্র্যাঞ্চাইজির টুর্নামেন্ট শুরু হলে কোন দিকে ঝুঁকবে বাংলাদেশ? এত দিন পর্যন্ত সে দেশের সমর্থন তো ভাগ হয়ে যেত শাকিব-মুস্তাফিজের ফ্র্যাঞ্চাইজির দিকে। এ বার শাকিব নেই। নেই মুস্তাফিজও। মুশফিকুর রহিম একাধিক বার নিলামের তালিকায় থাকলেও দল পাননি। আশরাফুল বলছেন, ‘‘শাকিব একটা সময়ে আইপিএল মাতিয়েছে। এ বার ও নেই। খুব ভাল ভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখবেন, বাংলাদেশে সে রকম টি টোয়েন্টি প্লেয়ারও নেই।’’
টি টোয়েন্টি প্লেয়ার নেই পদ্মাপাড়ে? শুনে অনেকেই অবাক হতে পারেন। আশরাফুল ব্যাখ্যা করে বলছেন, ‘‘বাংলাদেশ টি টোয়েন্টি ফরম্যাটের ক্রিকেট কম খেলে। তা ছাড়া অল্প কয়েকটা টি টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে জায়গা পাওয়া যায় না। আইপিএল-এর মতো টুর্নামেন্টে জায়গা পেতে হলে অনেকগুলো শর্তপূরণ করতে হয়। প্রথমত খুব ভাল স্ট্রাইক রেট হতে হয়। তামিম ইকবালও দুর্দান্ত ক্রিকেটার। কিন্তু অধিকাংশ ফ্র্যাঞ্চাইজির কোচই বিদেশি। তাঁরা আবার তাঁদের চেনা, পছন্দের ক্রিকেটারকেই দলে পেতে চান। ফলে আমাদের প্লেয়ারদের দল পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: ‘শাহরুখ নিয়ে আমার ভাল স্মৃতি নেই’, প্রথম আইপিএলের বিস্ফোরক স্মৃতিচারণে প্রাক্তন সিএবি প্রেসিডেন্ট
আইপিএল-এর বল গড়ানোর আগে থেকেই উত্তাপ বাড়তে শুরু করে দিয়েছে। এ বার চ্যাম্পিয়ন হবে কে? এক মুহূর্ত না ভেবে আশরাফুলের জবাব, ‘‘আমি মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সমর্থক। আমার পুরনো দলই ফেভারিট এ বার।’’ আইপিএল তো শুধুমাত্র একটা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নয়। এ তো সম্পর্ক তৈরি করারও মঞ্চ। একবার যা তৈরি হয়ে যায়, তা চিরকাল অটুট থাকে।