বিধ্বংসী: ২৫ বলে ৪৭। ওপেনার নারাইনের ব্যাটের দাপটে ছয় ওভার আগেই শেষ ম্যাচ। রবিবার। এএফপি
রবিবার রাতে ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে জয়পুরে আছড়ে পড়েছিল বালিঝড়। যা থেমে যায়। কিন্তু ম্যাচ শুরু হওয়ার পরে সোয়াই মান সিংহ স্টেডিয়ামে আছড়ে পড়ল অন্য একটা ঝড়।
কেকেআর-ঝড়, সুনীল নারাইন ঝড়। যে ঝড়ে স্রেফ উড়ে গেল রাজস্থান রয়্যালস। অজিঙ্ক রাহানের দলকে আট উইকেটে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচে চার জয় তুলে নিল কলকাতা। যে জয়ের ফলে লিগ তালিকাতেও ফের শীর্ষে চলে এল নাইটরা।
জয়পুরে দুই পয়েন্ট পাওয়া ছাড়াও নাইটদের প্রাপ্তি হবে বাড়তি আত্মবিশ্বাস। এ বারের আইপিএলে এই প্রথম আন্দ্রে রাসেলের কোনও অবদান ছাড়াই জিতল কেকেআর। রাসেল বল করল না, ব্যাট করল না। কিন্তু ছয় ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ দীনেশ কার্তিকদের পকেটে!
আরও পড়ুন: ভয়ডরহীন ব্যাটিং না বিপক্ষের সাদামাটা বোলিং? নাইটদের হেলায় রাজস্থান বধের কারণ কী?
এই ম্যাচ থেকে আরও কয়েকটা প্রাপ্তি থাকছে কেকেআরের। যেমন এক, ক্রিস লিন-সুনীল নারাইনের ওপেনিং জুটি। এই জুটি ক্লিক করলে কী হয়, সেটা বুঝে গেল রাজস্থানের বোলাররা। স্পিনার নারাইন নয়, ম্যাচ জেতাল ব্যাটসম্যান নারাইন (২৫ বলে ৪৭)। শুধু জেতালই না, নেট রান রেটও বাড়িয়ে রাখল দলের। দুই, হ্যারি গার্নি আর পীযূষ চাওলার বোলিং। পাওয়ার প্লে-তে বল করে জস বাটলারকে আটকে রেখে দিল পীযূষ। আর মাঝের ওভারে গার্নির স্লো বলের হদিশ পেল না স্টিভ স্মিথ, স্টোকসরা।
রাজস্থান যখন ১৩৯ রানে আটকে গেল, তখনই বুঝেছিলাম নাইটদের থামানো কঠিন। কিন্তু এত সহজে যে জিতবে, ভাবিনি। প্রথম ওভারে উঠল ১০ রান, দ্বিতীয় ওভারে ২২। অফস্পিনার কৃষ্ণাপ্পা গৌতমের করা ওই ওভারে চারটে চার ও একটা ছয় পাওয়া গেল নারাইনের ব্যাট থেকে। ম্যাচ ওখানেই প্রায় শেষ। বাটলার, স্মিথরা যখন ব্যাট করছিল, মনে হচ্ছিল উইকেট খুব মন্থর। বল আসছে না। নারাইনের মার দেখে মনে হল, এ তো ব্যাটিংয়ের স্বর্গ। এতটাই মারমুখী ছিল ক্যারিবিয়ান অফস্পিনার।
তবে ইনিংসের শুরুর দিকে অদ্ভুত ভাবে ভাগ্যের সাহায্যও পেয়েছে কেকেআর। চতুর্থ ওভারে ধবল কুলকার্নির করা বল লিনের লেগ স্টাম্পে লাগলেও বিস্ময়কর ভাবে বেল পড়ল না। আমি বহু বছর ধরে ক্রিকেট খেলেছি, ক্রিকেট দেখছি। কিন্তু এ রকম কখনও দেখিনি যে, পেস বোলারের বল উইকেটে লাগলেও বেল পড়ছে না। কে জানে, উইকেটের মাথার খাঁজটা একটু বেশি কি না। যে কারণে হয়তো বেল আটকে যাচ্ছে। এর আগে চেন্নাই ম্যাচে রান আউট করতে গিয়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি একবার বল উইকেটে মারলেও বেল পড়েনি। যাই হোক, ওখানে লিন আউট হলেও মনে হয় না ম্যাচের ফল অন্য রকম হত। হয়তো আর কয়েকটা ওভার বেশি লাগত জিততে।
গার্নির কথায় আসি। ইংল্যান্ডের বাঁ হাতি পেসার সাদা বলের মাস্টার। ৩২ বছর বয়স, যথেষ্ট অভিজ্ঞ। দুর্দান্ত স্লো বল করে। এ দিন ২৪টি বৈধ বলের মধ্যে চারটে হয়তো জোরের ওপর করেছিল। বাকিগুলো সব স্লো ডেলিভারি। কখনও বলের গতি তো ঘণ্টায় একশো কিলোমিটারের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করেছে। জয়পুরের এই মন্থর পিচে সে সব স্লো বলের হদিশ পায়নি স্মিথ, বাটলার, স্টোকসরা। স্মিথ (৫৯ বলে ৭৩) সর্বোচ্চ রান করলেও প্রয়োজনের সময় রান রেট বাড়াতে পারেনি।
কলকাতা লকি ফার্গুসনের বদলে গার্নিকে খেলায়। একেবারে ঠিক সিদ্ধান্ত। কেকেআর ম্যানেজমেন্টকে আরও ধন্যবাদ দিতে হবে ঠিক বোলারকে খুঁজে দলে নেওয়ার জন্য। অধিনায়ক দীনেশ কার্তিকও দারুণ ভাবে ব্যবহার করল গার্নি আর পীযূষকে। আইপিএল যত গড়াবে, বিভিন্ন কেন্দ্রের পিচ তত মন্থর হবে। তখন কিন্তু এই গার্নির মতো বোলারের আরও বেশি করে প্রয়োজন পড়বে। এ দিন ২৫ রানে দু’উইকেট নিয়ে গার্নিই ম্যাচের সেরা।
পীযূষের বোলিংও খুব ভাল লেগেছে। পাওয়ার প্লে-তে এসে রান রেট আটকে দিল। উইকেট না পেলেও চার ওভারে দিল মাত্র ১৯ রান। ওর গুগলিগুলো মারতে সমস্যায় পড়েছে ব্যাটসম্যানরা। গতি আর মানসিকতার জন্য নজর কাড়ল প্রসিদ্ধ কৃষ্ণও।