কুড়ির বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন অলরাউন্ডারের
Hardik Pandya interview

ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং এখনও শুরুই করেননি, কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব মাঠে ফিরতে চাইছেন হার্দিক

হার্দিক পাণ্ড্য: চেষ্টা করছিলাম, যাতে অস্ত্রোপচার এড়ানো যায়। কিন্তু সব দিক দেখে মনে হল, পারা যাবে না। বড় অস্ত্রোপচারের পরে মাঠে ফেরা সহজ নয়। প্রত্যাবর্তনের লড়াইয়ে আমি একশো শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করছি। সব দিক যাতে ঠিকঠাক চলে, সে দিকে চোখ রাখছি। নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি, আমার দিক থেকে যেন ফাঁক না থাকে।  

Advertisement

সুমিত ঘোষ 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:০০
Share:

হার্দিক পাণ্ড্য।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি অন্যতম সেরা ম্যাচউইনার। অথচ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ভারত হারছে আর তিনি চোট সারাতে ব্যস্ত বলে মাঠের বাইরে। কবে ফিরতে পারবেন? আদৌ কি আগের আগ্রাসী অলরাউন্ডারকে দেখা যাবে? রিহ্যাব নিয়ে ব্যস্ত থাকার মাঝেই সোমবার দুপুরে হার্দিক পাণ্ড্য নানা কৌতূহল মেটালেন...

Advertisement

প্রশ্ন: কোমরের চোটের পরে অস্ত্রোপচার। এখন কী অবস্থা?

হার্দিক পাণ্ড্য: চেষ্টা করছিলাম, যাতে অস্ত্রোপচার এড়ানো যায়। কিন্তু সব দিক দেখে মনে হল, পারা যাবে না। বড় অস্ত্রোপচারের পরে মাঠে ফেরা সহজ নয়। প্রত্যাবর্তনের লড়াইয়ে আমি একশো শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করছি। সব দিক যাতে ঠিকঠাক চলে, সে দিকে চোখ রাখছি। নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি, আমার দিক থেকে যেন ফাঁক না থাকে।

Advertisement

প্র: মাঠ থেকে দূরে থাকতে থাকতে মূল্যবান শিক্ষা কী?

হার্দিক: জীবনে এমন কিছু জিনিস থাকে, যার উপরে নিজের কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। চোট-আঘাত সে রকমই একটা ব্যাপার। এটাই শিখলাম। এখন মনে হচ্ছে, আমি যদি নিজের শরীরের ব্যাপারে যত্নবানও হই, তবু চোট এক জন খেলোয়াড়ের জীবনের অঙ্গ। তৈরি থাকতে হবে কঠিন পরিস্থিতির জন্য। আমি মনোনিবেশ করছি শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসার উপরে।

প্র: এক দিক থেকে কি আশীর্বাদ যে, আগে হয়ে গেল। সামনের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ রয়েছে?

হার্দিক: একদমই তাই। আমি অপারেশনটা এখনই করিয়ে নিতে চেয়েছি ভবিষ্যতের কথা ভেবেই। প্রথমে ভেবেছিলাম, এখন ক’দিন খেলে নিই। এক মাস পরে করাব। কিন্তু তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হত। কোমরটা যে একশো শতাংশ দিচ্ছিল না, বুঝতেই পারছিলাম। তাই আর দেরি করতে চাইনি। ফিরে আসতে চার মাসের মতো দীর্ঘ সময় লাগলেও নিউজ়িল্যান্ড সফরের আগে সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটা ছিল পরিকল্পনা। যদি কয়েকটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে আইপিএলে যেতে পারি, তার পরেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। নিশ্চিত করা যাবে, সক্ষমতার চুড়োয় থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেতে পারব। আমার কাছে সব চেয়ে বড় ব্যাপার বিশ্বকাপ। কিছুতেই আমি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ হারাতে চাইনি।

আরও পড়ুন: যে কোনও মাঠে ছয় মারার ক্ষমতা রাখি, হুঙ্কার দিচ্ছেন শিবম

প্র: মানসিক দিক থেকে কতটা কঠিন এই ফিরে আসার লড়াই?

হার্দিক: কঠিন তো বটেই কিন্তু লড়েও যেতে হবে। ধারাবাহিক ভাবে ইতিবাচক থাকার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। মনের মধ্যে প্রশ্ন, সংশয় ঢুকতে দেওয়া যাবে না। কখনও যেন এই প্রশ্ন নিজেকে করে না ফেলি, কেন আমার ক্ষেত্রেই হল? কেন আমাকেই বারবার কামব্যাক করতে হচ্ছে? আমার মনের মধ্যে বরং জেদ চেপে গিয়েছে, যা-ই ঘটুক আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরব। আমি সব সময় শিখতে চাই। নেতিবাচক ভাবনা থেকে দূরে থাকতে চাই। আমি জানি, শারীরিক ভাবে ফিরে আসা যাবে ট্রেনিং করে। কিন্তু মনটা যেন ভেঙে না যায়। ওটাই আসল। আর সত্যি কথা বলতে কী, আমার জীবনে অনেক কিছুই তো ঘটে গিয়েছে। তাই মানসিক ভাবে আমি শক্তিশালী হয়ে গিয়েছি।

প্র: চোটের পরে এখন কী অবস্থা? ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন?

হার্দিক: একটা-একটা করে হার্ডল পেরনোর চেষ্টা করছি। এখনও বোলিং শুরু করিনি। দ্রুতই শুরু করতে পারব আশা করছি। প্রত্যাবর্তনের যে সূচি বানানো হয়েছে, সেটা ঠিকঠাকই যাচ্ছে। আমি নিশ্চিত খুব তাড়াতাড়ি ফিরতে পারবে। এখনই নির্দিষ্ট করে কিছু ঠিক করিনি যে, এই সিরিজটাতেই ফিরতে হবে। দেখতে হবে ধকল বাড়ানোর পরে শরীর কী রকম প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।

আরও পড়ুন: ডোপ বিরোধী নিয়ম লঙ্ঘনে ৪ বছরের জন্য নির্বাসিত রাশিয়া, নেই টোকিয়ো যজ্ঞে

প্র: পুরনো সেই হার্দিককে যাতে দেখা যায়, তার জন্য কোন দিকটায় নজর দেওয়া সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?

হার্দিক: আমি বলব না যে, পুরনো হার্দিককে আবার দেখা যাবে। বলব, আরও ভাল হার্দিকের সংস্করণ দেখা যাবে। আমি সেই চেষ্টাই চালাচ্ছি। সব কিছু নির্ভর করছে আমার শরীরের উপর। ক্রিকেটীয় নৈপুণ্য ধরে রাখাটা একটা দিক। আমি আত্মবিশ্বাসী, সেটা থাকবে। আমি চোদ্দো-পনেরো বছর ধরে ক্রিকেট খেলছি। ক্রিকেট আমি ভুলব না। কিন্তু চোটের পরে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়, একশো শতাংশ সুস্থ হয়ে ফিরতে পারছি কি না। বিরাটকে দেখে নিশ্চয়ই এখন সকলে বুঝতে পারছে ফিটনেসের মর্মটা। ফিট বিরাট ইজ দ্য বেস্ট বিরাট। শুরুতে ও যা ছিল আর ফিটনেস বাড়িয়ে যে জায়গায় পৌঁছেছে, তা দেখলেই বোঝা যাবে। আমারও তাই মনে হয়, সম্পূর্ণ ফিট হয়ে ফেরাটাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

প্র: সামনের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছে?

হার্দিক: আমরা বিশ্বকাপ জিততে চাই। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কাছাকাছি এসেছিলাম। ফাইনালে হেরে গেলাম পাকিস্তানের কাছে। আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, ২০১৯ বিশ্বকাপেও আমরা কাছাকাছি ছিলাম। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে হেরে গেলাম সেমিফাইনালে। অস্ট্রেলিয়া দারুণ এক দেশ। আমাদের খেলার ধরনের সঙ্গে মানানসই। আমি একটাই স্বপ্ন দেখছি। যেন টিমকে এবং দেশকে কাপ জিততে সাহায্য করতে পারি।

প্র: বোলিং শুরু করেননি। ব্যাটিং, ফিল্ডিংয়ের কী অবস্থা?

হার্দিক: আমি এখনও ক্রিকেট সম্পর্কিত কিছুই শুরু করিনি। আগে শরীরটাকে সর্বোচ্চ সক্ষমতার জায়গায় আগে নিতে চাই। শরীরটাকে আগে ঠিক করতে হবে কারণ শূন্য থেকে আবার আমাকে একশোতে উঠতে হবে। তাই নিশ্চিত করতে হবে একশোর ধকল নিতে গিয়ে শরীর যেন আবার ভেঙে না পড়ে। জোর করে মাঠে ফিরতে গেলে সেই ভয় থাকে। আমি অনেককেই চোট-আঘাতের পর্ব পেরিয়ে আসতে দেখেছি। যশপ্রীত বুমরাকে দেখেছি কী ভাবে হাঁটুর অস্ত্রোপচারের পরে ফিরে এসেছে। এখন দেখছি, আবার কী ভাবে ও চোটের ধাক্কা কাটিয়ে ফিরে আসছে। এক জন অ্যাথলিটের শরীরে এক বার ছুরি-কাঁচি চললে তার শরীর আগের মতো শক্তপোক্ত থাকে না। সেটা মাথায় রেখে এগোতে হবে।

প্র: কবে ফিরতে পারবেন বলে আপনার মনে হচ্ছে?

হার্দিক: আইপিএল আছে, বিশ্বকাপ আছে। তারও আগে নিউজ়িল্যান্ড সফর রয়েছে। কিন্তু আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাঠে ফিরতে চাই। যে মুহূর্তে আমি সম্পূর্ণ ফিট হয়ে যাব, পরক্ষণেই আমি মাঠে নামতে চাই। যদি আমি ফিট হয়ে যাই, তা হলে নিউজ়িল্যান্ডের বিমানেই উঠে পড়তে চাইব, যদি আমাকে দলে নেওয়া হয়। তবে হ্যাঁ, আবার বলছি, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনতে চাই না। আমার মন তৈরি, শরীরের অবস্থা বুঝে এগোতে চাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement