ফাইল চিত্র।
চূড়ান্ত চূক্তিতে সই করা নিয়ে ইস্টবেঙ্গল বনাম লগ্নিকারী সংস্থার মধ্যে সমঝোতার সুর তো দেখা যাচ্ছেই না, উল্টে ডামাডোল বেড়ে চলেছে। বুধবারই শ্রী সিমেন্টের তরফে চিঠি এবং ফের টার্মশিট (কার্যত প্রাথমিক খসড়া) ও চূড়ান্ত চুক্তিপত্র পাঠানো হয়েছে কর্তাদের কাছে। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা চুক্তিতে সই করতে রাজি কি না, তা জানাতে বলা হয়েছে।
যদি সত্যিই বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তখন কী হবে? শোনা যাচ্ছে, এখনই বিচ্ছেদ হয়ে গেলে ক্লাবের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের শর্ত রাখার কথা ভাবা হয়েছে চুক্তিতে। তা নিয়ে জটিলতা আরও বেড়েছে। লগ্নিকারী সংস্থা ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে, কর্তারা যা দিতে নারাজ বলেই ইঙ্গিত।
সূত্রের খবর, জল অত দূর গড়ালে আইনি লড়াইয়ের পথে যেতে পারে লগ্নিকারী সংস্থা। তাদের হিসাব অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই প্রায় ৬৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে আইএসএলে খেলার জন্য ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। ফুটবলারদের বেতন বাবদ খরচ হয়েছে ১৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। কোচিং স্টাফ ও অন্যান্য কর্মীদের বেতন খাতে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি টাকা। ৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে আইএসএলের সময় গোয়ার হোটেলে থাকা ও যাতায়াতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের জন্য খরচের পরিমাণ ৫ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা। ১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে চিকিৎসা এবং স্টেডিয়ামের মধ্যে বিজ্ঞাপন বাবদ। এ ছাড়া প্রায় ৯ কোটি টাকা আইএসএলের জরিমানা ও অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের কর্মীদের জন্য অঙ্গীকার পত্র (ইনডেমিনিটি বন্ড) হিসেবে ২ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা জমা দিতে হয়েছে। পিন্টু মাহাতো-সহ গত মরসুমের দুই বিদেশির বকেয়া মেটাতে ৪ কোটি ৭ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।
বিচ্ছেদের পথে গেলে লগ্নিকারী সংস্থা ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের শর্ত দিতে পারে, অন্তত ৬০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। শোনা যাচ্ছে, বৎসর ভিত্তিক ক্ষতিপূরণও দাবি করতে পারে তারা। অর্থাৎ, এক বছর পরে বিচ্ছেদ হলে এই টাকা দিতে হবে, দ্বিতীয় বছরে সরে গেলে অমুক টাকা। যা কর্তারা মানবেন কি না সংশয় রয়েছে। তাঁরা নাকি পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, লগ্নিকারী সংস্থার না পোষালে চলে যাবে, তার জন্য ক্লাবকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে কেন?
দু’পক্ষের এই যুদ্ধং দেহি মনোভাব বজায় থাকলে বিচ্ছেদের সুর বাজলে আইনি লড়াই সম্ভবত ঠেকানো যাবে না। যদিও এই প্রসঙ্গে এখনই সরকারি ভাবে মন্তব্য করতে চাননি কেউ। বল এখন লাল-হলুদ কর্তাদের কোর্টে। তাঁরা আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনার পরে কী জবাব দেন, তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে ফুটবল মহল।
ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের দাবি, গত ১ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে তাঁরা যে প্রাথমিক খসড়ায় সই করেছিলেন, তার সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অমিল রয়েছে। তাই যত ক্ষণ না আসল চুক্তিপত্রে তাঁদের সুপারিশ অনুযায়ী সেই সব পাল্টে যাওয়া শর্তগুলি ফের সংশোধন করা হচ্ছে, তাঁরা সই করবেন না। লগ্নিকারী সংস্থার আধিকারিকেরা যদিও ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের এই দাবি মানছেন না। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আইনজীবীরা টার্মশিট অনুযায়ী এই চুক্তিপত্র বানিয়েছেন। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা তো সব দেখেই টার্মশিটে সই করেছিলেন। তা হলে এখন কেন প্রশ্ন তুলছেন?’’ তাঁরা যোগ করছেন, ‘‘চুক্তিপত্রের সঙ্গে টার্মশিটও পাঠিয়েছি আমরা। এ বার ওঁরা তা হলে লিখিত ভাবে জানান, চূড়ান্ত চুক্তিতে টার্মশিটের থেকে কী কী পরিবর্তন করা হয়েছে?’’
শতবর্ষে লগ্নিকারীর সঙ্গে কর্তাদের কাজিয়ায় করুণ এক অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কারা? না, লাল-হলুদকে বুকে আঁকড়ে থাকা কোটি কোটি ভক্তরা! কে ভাবে তাঁদের কথা!