হরেন্দ্র সিংহ: বিশ্বজয়ী কোচ।
যুব হকি বিশ্বকাপে টিমকে চ্যাম্পিয়ন করা কোনও কোচের পরবর্তী লক্ষ্য কী হওয়া উচিত?
উত্তরটা দিতে তিন সেকেন্ডেরও কম লাগা উচিত। হিসেব তো জলবৎ তরলং। এর পর সে সিনিয়র হকি টিমে কোচিংয়ের স্বপ্ন দেখবে। স্বপ্ন দেখবে, সিনিয়র টিমকে নিয়ে বিশ্বজয়ী হওয়ার।
হওয়া উচিত, কিন্তু হচ্ছে না। খেলাধুলোর ধর্ম মেনে চললে ভারতের বিশ্বজয়ী যুব হকি টিমের কোচ হরেন্দ্র সিংহর একই রাস্তায় হাঁটা উচিত, কিন্তু হাঁটছেন না। উল্টে তিনি যা করছেন, বিস্ময়ে তড়িৎপৃষ্ট হওয়ার মতো।
হরেন্দ্র এ বার ফুটবল কোচিং করাবেন!
আর ব্যাপারটা শুধু ভাবনা-চিন্তার পৃথিবীতে আটকে নেই, হরেন্দ্র বরং উঠেপড়ে লেগেছেন এমন অদ্ভুত স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে! ইতিমধ্যে ফুটবলে সি লাইসেন্সের আবেদন করে ফেলেছেন। আশা করছেন, সব ঠিকঠাক চললে একদিন ডার্বিতে কোচিং করাবেন। ঠিকই পড়েছেন। হরেন্দ্র মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলে কোচিং করানোর স্বপ্নই দেখছেন এখন!
‘‘ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের মতোই আকর্ষণীয় হয় কলকাতা ডার্বি। কোচ হিসেবে আমি একদিন কলকাতা ডার্বিতে নামতে চাই। আর সব ঠিকঠাক চললে সেটা হবেও,’’ মঙ্গলবার নয়াদিল্লি থেকে ফোনে বলছিলেন হরেন্দ্র। কিন্তু এ রকম অদ্ভুত ব্যাপারস্যাপার কেন? তাঁর তো গন্তব্য হওয়া উচিত সিনিয়র হকি টিম। সিনিয়র হকি টিমের কোচিং। ফুটবলের কোচিং তো তাঁর চিন্তাভাবনার ম্যাপেই আসা উচিত নয়!
শুনে হাসেন হরেন্দ্র। বলতে থাকেন, ‘‘বাবা-মা চেয়েছিলেন ছেলে আইপিএস বা আইএএস হোক। কিন্তু ছোটবেলা থেকে ফুটবল ভালবাসতাম। শুরুতে তো ফুটবলটাই খেলতাম। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে দাগ মেরে রাখতাম যাতে মিস না হয়ে যায়। নিজে স্টপার ছিলাম,’’ একটু থেমে বিশ্বজয়ী কোচ ফের জুড়ে দেন, ‘‘কিন্তু ফুটবলটা খেলা আর হল না। উল্টে হাতে হকি স্টিক এসে পড়ল। কিন্তু আজও পুরনো প্রেম ভুলতে পারিনি। ভারতকে হকিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করার পর ভাবলাম দেখি, এ বার ফুটবলের স্বপ্নটাকে নিয়ে কিছু করা যায় কি না।’’
এটা ঘটনা যে, ভারতীয় যুব হকি টিমের কোচের ফুটবলপ্রেম লোক দেখানো নয়। তাঁর অতীত, বর্তমান ঘাঁটলে সেটা বোঝা যায়। সুব্রত কাপ খেলেছেন। ৮২’তে তাঁর ব্যাচমেট ছিলেন প্রাক্তন মোহনবাগান কোচ সন্তোষ কাশ্যপ। এবং লা লিগা-ইপিএলের অন্ধ ভক্ত বিশ্বজয়ী কোচ নিজের ছেলেকে হকিতে নয়, ফুটবল কোচিংয়ে পাঠিয়েছেন। তাঁর আত্মজ অথর্ব সিংহ এখন নয়াদিল্লির ভাইচুং ভুটিয়া ফুটবল স্কুলের ছাত্র। হরেন্দ্র বলছিলেন, ‘‘আমি ভাগ্যবান যে ও ফুটবলে গিয়েছে। ও যদি ইউরোপ যেতে চায়, তার খরচ দিতেও তৈরি আমি।’’ বাবা-ছেলেতে ফুটবল নিয়ে বেশ ঝামেলাও হয়। স্বাভাবিক। ছেলে রিয়াল মাদ্রিদ ভক্ত আর বাবা বার্সেলোনার!
হকি ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে হরেন্দ্রর। এবং শোনা গেল, নিজের পরবর্তী লক্ষ্যের দিকে ঝাঁপাতে বিশেষ দেরিও করেননি। ফেডারেশনে আবেদন করেছেন কোচিং লাইসেন্সের জন্য। ফিফা ইনস্ট্রাকটর বন্ধু প্রদীপ দত্তকে বলেও রেখেছেন ফুটবল কোচিং লাইসেন্সের ব্যাপারে। হকিতে বিশ্বজয়ী ভারতীয় কোচ বললেন, ‘‘এআইএফএফ সুযোগ দিলে ভারতীয় ফুটবলের চেহারাও বদলে দেব। যে ভাবে হকিতে দিয়েছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ‘এ’ লাইসেন্সটা করতে হবে। ক্লাব কোচিংয়ে তা হলে আর কোনও অসুবিধে হবে না।’’ এবং হরেন্দ্র একটা স্বপ্নও দেখেন। বড় আশ্চর্য, বড় নাটকীয় সেই স্বপ্ন।
কলকাতার দুই প্রধানের কোনও একটার কোচ তিনি। আর সেই ক্লাবেরই জার্সি গায়ে নামছে তাঁর ছেলে, অথর্ব। বাবা-ছেলে জুটি নামছে স্বপ্নের ম্যাচে, অতীব সাধের কলকাতা ডার্বিতে!