মধ্যমণি: বিজয়, রিচার্ড ইভান্স ও কিম ক্লিস্টার্সের সঙ্গে লিয়েন্ডার। ছবি: রয়টার্স।
ভারতীয় টেনিসের স্মরণীয় দিন। দুই প্রজন্মের দুই কিংবদন্তিকে রবিবার একই সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হল আন্তর্জাতিক টেনিসের ‘হল অব ফেম’-এ। তাঁরা— লিয়েন্ডার পেজ এবং বিজয় অমৃতরাজ।
দু’জনের হাত ধরে ভারতীয় টেনিস বহু গর্বের মুহূর্ত উপহার পেয়েছে। আবারও তাঁরা গর্বিত করলেন দেশকে। পুরুষদের মধ্যে এশিয়ার কেউ প্রথম এই সম্মান পেলেন। তাও একই সঙ্গে
দুই ভারতীয়।
৫১ বছরের লিয়েন্ডার ১৯৯৬ সালে আটলান্টা অলিম্পিক্সে সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ জিতেছেন। এখনও পর্যন্ত অলিম্পিক্স থেকে টেনিসে ভারতের একমাত্র পদক। এ ছাড়া পুরুষদের ডাবলসে আটটি ও মিক্সড ডাবলসে ১০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী তিনি। পাশাপাশি ডেভিস কাপে বহু স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দেওয়া লিয়েন্ডারকে টেনিসের এই সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হয় ‘খেলোয়াড়দের বিভাগ’-এ।
৭০ বছর বয়সি বিজয় অমৃতরাজ পুরুষদের সিঙ্গলসে উইম্বলডন ও যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে দু’বার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলেন। এ ছাড়া ডেভিস কাপে ভারতকে দু’বার ফাইনালে তুলেছেন তিনি ১৯৭৪ ও ১৯৮৭ সালে। এক সময় তিনি বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে সিঙ্গলসে ১৮ ও ডাবলসে ২৩ নম্বরেও ছিলেন। তিনি এবং ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক রিচার্ড ইভান্সকে বিশেষ অবদান রাখায় বেছে নেওয়া হয় এই সম্মানের জন্য।
মেয়ে আইয়ানা-র হাত থেকে আন্তর্জাতিক টেনিসের ‘হল অব ফেম’এ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পদক নিয়ে আবেগরুদ্ধ লিয়েন্ডার বলেছেন, ‘‘কলকাতার রাস্তায় খালি পায়ে ক্রিকেট, ফুটবল খেলা একটা ছেলের কাছে এই মুহূর্তটা কল্পনাও করা যায় না। আমি সেই প্রত্যেকটি তরুণ, তরুণীর প্রতিনিধি যাদের চোখে স্বপ্ন, হৃদয়ে আবেগ আর সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার খিদে রয়েছে।’’
ডাবলসে ৩৭ সপ্তাহ বিশ্বের এক নম্বরে থাকার পাশাপাশি পেশাদার ট্যুরে ৫৪টি ডাবলস খেতাব রয়েছে লিয়েন্ডারের। টেনিসের ইতিহাসে তিনি সেই তিন খেলোয়াড়ের অন্যতম যাঁর দুটি বিভাগেই কেরিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম রয়েছে। সঙ্গে টানা সাতটি অলিম্পিক্সে প্রতিনিধিত্ব করার নজিরও। শুধু তাই নয়, মিক্সড ডাবলসে তিনি জুটি বেঁধেছিলেন দুই কিংবদন্তির সঙ্গে — মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা এবং মার্টিনা হিঙ্গিস। এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন নাভ্রাতিলোভাও। যাঁকে ‘হল অব ফেম’-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয় ২০০০ সালে। তিনি লিয়েন্ডারকে নিয়ে বলেছেন, ‘‘লিয়েন্ডার যে ভাবে টেনিসটা খেলে, আমরা সবাই সে ভাবে খেলতে চাই। আর নেটের কাছাকাছি যখন ও থাকে তখন তো কথাই নেই। চিতার মতো ক্ষিপ্র, প্রত্যেকটা বলের পিছনে দৌড়বে আর ওর আয়ত্তে থাকুক, না থাকুক ডাইভ দেবে। টেনিসের জন্য ওর যে ভালবাসা সেটা বর্ণনা করা যায় না।’’
অনুষ্ঠানে ছিলেন মার্কিন কিংবদন্তি আন্দ্রে আগাসি, ক্রিস এভার্ট, হল অব ফেম-এর প্রেসিডেন্ট কিম ক্লিস্টার্স। তাঁদের সামনে লিয়েন্ডার আবেগরুদ্ধ ভাবে আরও বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক দিন যে সব কিংবদন্তিরা আমায় প্রেরণা দেন তাঁদের সামনে এই মঞ্চে
থাকতে পারাটা বিরাট এক সম্মান।’’ যোগ করেন, ‘‘শুধু এঁরা সবাই গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন, শুধু এই খেলাটায় এত অবদান রেখেছেন বলে নয়, এঁরা প্রত্যেকে দুনিয়াকে বদলেছেন। এই ভারতীয় ছেলেটাকে আশা দেখানোর জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।’’
বিজয় অমৃতরাজের এটিপি ট্যুরে অভিষেক ১৯৭০ সালে। তিনি ভারতের ডেভিস কাপ দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন বহু বছর। অবসরের পরে ধারাভাষ্যকার হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়া অমৃতরাজ বলেছেন, ‘‘ভারতে আর দেশের বাইরে সমস্ত ভারতীয়দের ধন্যবাদ। বড় শহর হোক বা ছোট আমায় সবাই যে ভাবে স্বাগত জানিয়েছেন।’’ তাঁর সাফল্যে বাবা-মার প্রভাব নিয়ে বলেছেন, ‘‘এই দুই সাধারণ মানুষ অসাধারণ প্রভাব রেখেছে আমার জীবনে। উপর থেকে তাঁরা সব দেখছেন। আর আমার মা নিশ্চয়ই বলছেন, ‘দেখেছিস তো আমি আগেই বলেছিলাম।’ তাঁরা অসম্ভব এক স্বপ্ন দেখেছিলেন। এমন একটা সফরে আমাকে পাঠিয়েছেন যা আমাকে এই সর্বোচ্চ সম্মানের মঞ্চে পৌঁছে দিল।’’