কলকাতায় রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ। —নিজস্ব চিত্র।
একের পর এক প্রতিযোগিতা। দাবার বিশ্বকাপ খেলেই চলে গিয়েছিলেন জার্মানি। সেখান থেকে ফিরে বাড়ি ফিরেও বিশ্রাম পাননি। দিল্লি যেতে হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে। তার পরেই চলে আসেন কলকাতায়। এশিয়ান গেমসের প্রস্তুতি নিতে যোগ দেন ক্যাম্পে। একটি প্রতিযোগিতাতেও খেলবেন। তাতেও কোনও ক্লান্তি নেই। সোমবার কলকাতায় রমেশবাবু প্রজ্ঞানন্দ মুখোমুখি হন সাংবাদিকদের। ৩৬ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে জানালেন, দাবা ছাড়াও তাঁর পছন্দের একাধিক বিষয়ের কথা।
বয়েস মাত্র ১৮ বছর। এর মধ্যেই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছেন। বিশ্বনাথন আনন্দের পর তিনিই প্রথম ভারতীয়, যিনি এই কৃতিত্ব গড়লেন। যদিও জিততে পারেননি। কিন্তু ভারতীয়দের মধ্যে দাবা নিয়ে আগ্রহ তৈরি করার কাজটা করে ফেলেছেন। সেই প্রজ্ঞানন্দ জানালেন যে, ক্রিকেটও তাঁর পছন্দের খেলা। সোমবার প্রজ্ঞানন্দ বললেন, “আমি ক্রিকেট দেখি। ভারতীয় দলের খেলা দেখতে ভাল লাগে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন আমার প্রিয় খেলোয়াড় কারণ ও দাবা খেলতে পছন্দ করে।”
বিশ্বকাপের সময় দেখা গিয়েছে, প্রজ্ঞার মা নাগালক্ষ্মী সব সময় তাঁর পাশে রয়েছেন। প্রজ্ঞা মনে করেন দাবা খেলতে গেলে, পরিবারের পাশে থাকাটা খুব প্রয়োজন। না হলে বড় হওয়া যায় না। তিনি এটাও জানান যে, তাঁর মা মুখ দেখে বুঝে যান তিনি চাপে আছেন কি না। প্রজ্ঞানন্দ বললেন, “প্রতিপক্ষ হয়তো আমার মুখ দেখে বুঝতে পারে না, আমি চাপে আছি কি না। কিন্তু মা পারে। আমার মুখ দেখে মা বলে দিতে পারে ম্যাচের কোন সময় আমি একটু চিন্তিত। মায়ের পাশে থাকাটা আমার কাছে খুবই বড় একটা মানসিক জোর। প্রতিযোগিতা যখন চলে, সেই সময় আমার মাথায় দাবা ছাড়া আর কিছু থাকে না। মা সব কিছু সামলে নেয়। বাইরে খেলতে গিয়ে আমি যাতে ঘরের খাবার খেতে পারি, সেই ব্যবস্থাও করে মা। ভারতীয় খাবার খেতেই পছন্দ করি আমি।”
বয়েস মাত্র ১৮ বছর। এর মধ্যেই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছেন প্রজ্ঞানন্দ। —নিজস্ব চিত্র।
টানা দাবা খেলে যাওয়া অনেক সময় ক্লান্ত করে দিতে পারে। সেই কারণে প্রজ্ঞানন্দ বিভিন্ন ধরনের উপায়ে নিজেকে তরতাজা রাখেন। সদ্য বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা দাবাড়ু বললেন, “যখন প্রতিযোগিতা থাকে না, আমি সিনেমা দেখি। সব রকমের সিনেমা দেখতেই পছন্দ করি। এ ছাড়া যোগব্যায়াম করি। তাতে আমার মনোযোগ বাড়ে। যদিও প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেলে সে সবের সময় পাই না।”
বিশ্ব ক্রমতালিকায় ১৯ নম্বরে উঠে এসেছেন প্রজ্ঞানন্দ। ভারতীয়দের মধ্যে তাঁর সামনে ডি গুকেশ (অষ্টম) এবং বিশ্বনাথন আনন্দ (নবম)। প্রজ্ঞানন্দ জানালেন তাঁর দাবা শেখার পিছনে বিরাট কৃতিত্ব রয়েছে আনন্দের। ১৮ বছরের তরুণ দাবাড়ু বললেন, “আমি এখনও শিখছি। আশা করি ভবিষ্যতে আরও ভাল খেলব। আমার মধ্যে বিশ্বসেরা হওয়ার মতো ক্ষমতা রয়েছে। ভিসি স্যরের (আনন্দ) সঙ্গে আমার প্রায়ই কথা হয়। যে কোনও বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারি। অনেক কিছু শিখি আমি ওঁর থেকে। ভিসি স্যরের খেলা দেখেও শিখি।”
বিশ্বকাপ জেতার পর প্রত্যাশার চাপ থাকার কথা। কিন্তু এখনও সেটা বুঝতে পারছেন না প্রজ্ঞানন্দ। তিনি বললেন, “এখনও চাপ অনুভব করছি না। তবে অন্যেরা কী ভাবছে সেটা নিয়ে আমি ভাবি না। নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী খেলি।” ম্যাগনাস কার্লসেনের বিরুদ্ধে অনলাইনে খেলেছিলেন প্রজ্ঞানন্দ। বিশ্বকাপে সামনে বসে খেললেন। অনলাইনে কার্লসেনকে হারালেও সামনে বসে পারলেন না। প্রজ্ঞানন্দ বললেন, “কার্লসেনের বিরুদ্ধে অনলাইনে খেলেছি। হারিয়েছি। সামনে বসে খেলার সময় বুঝতে পারছিলাম ও কখন চাপে পড়ছে। কিন্তু অনলাইন বা অফলাইন, যে ভাবেই খেলি না কেন, কার্লসেন সব সময়ই কঠিন প্রতিপক্ষ।”
ভারতের চার তরুণ দাবাড়ুরা এ বারের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছেন। আনন্দ বলছিলেন, “আগে ভারত থেকে আমি একাই থাকতাম দাবার প্রতিযোগিতাগুলোতে। এখন এক সঙ্গে অনেককে দেখে ভাল লাগছে।” প্রজ্ঞানন্দও মনে করেন ভারতীয় দাবাড়ুরা উন্নতি করছেন। গুকেশ, বিদিত গুজরাতি, অর্জুন এরিগাইসি এবং প্রজ্ঞানন্দ একসঙ্গে উন্নতি করছেন। প্রজ্ঞানন্দ বললেন, “আমরা সকলে ভাল খেলছি। নিহাল সারিনও ভাল খেলছে। হয়তো পরের প্রতিযোগিতাতেই ও আরও উপরের দিকে উঠে আসবে। প্রথম ২০ জনের মধ্যে দেখা যাবে ওকে। গুকেশ খুব ভাল খেলছে। আমরা সকলে পরিশ্রম করছি। আশা করি আমরা সকলেই আগামী দিনে ভাল ফল করব। আমরা সকলেই একে অপরের খুব ভাল বন্ধু। একে অপরকে আমরা সাহায্য করি। খেলার সময় সকলেই নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। আশা করি এশিয়া কাপেও দল ভাল ফল করবে।”