চেষ্টা করেও নাওরেমদের আটকাতে পারলেন না কিংগস্লে-কিংশুকরা। ছবি: এআইএফএফ সৌজন্যে।
মোহনবাগান ১ (ডিপান্ডা ডিকা)
ইন্ডিয়ান অ্যারোজ ১ (রাহুল কান্নোলি)
ম্যাচ শেষ হতেই সাইডলাইনের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ইন্ডিয়ান অ্যারোজ কোচ নর্টন দে মাতোস মুঠো করা দু’হাত তুললেন আকাশের দিকে। যেন যুদ্ধ জিতে ফেরা কোনও সেনাপতি লড়াই শেষে শান্তির নিঃশ্বাস ফেললেন মোহনবাগান মাঠে।
হ্যাঁ, যুদ্ধই তো বটে! এক ঝাঁক তরুণ তুর্কি যে ভাবে সমানে সমানে লড়াই চালিয়ে আটকে দিলেন মোহনবাগানকে, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।
শুক্রবার ঘরের মাঠে ১-১ গোলে ইন্ডিয়ান অ্যারোজের বিরুদ্ধে আটকে গেল মোহনবাগান। শেষ আধ ঘণ্টা দশ জনের অ্যারোজকে পেয়েও হারাতে পারল না সঞ্জয় সেন ব্রিগেড।
ম্যাচ ড্র করলেও প্রথমার্ধে মোহনবাগানের খেলায় জয়ের চেষ্টা ছিল, কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে যেন পুরোটাই অফ কালার বাগান ব্রিগেড।
ম্যাচের ২০ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় বাগান। ডিকার বাড়ানো বল তিন কাঠিতে রাখতে ব্যর্থ হন ক্রোমা।
ম্যাচের ২৫ মিনিটে আশিস রাই বক্সের মধ্যে নিখিল কদমকে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় মোহনবাগান। কিন্তু এই পেনাল্টি নিয়ে বিতর্ক রয়েই গেল। আশিস রাই বল ক্লিয়ার করার সময় মাঠে পরে যান কদম। আর এর পরেই পেনাল্টি দেন রেফারি। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি ডিপান্ডা ডিকা।
এই গোলও ছিল নাটকীয়তায় ভরা। পেনাল্টি থেকে প্রথম শট গোলে গেলেও তা বাতিল করে দেন রেফারি তেজাস নাগভেঙ্কার। আবারও পেনাল্টি নিতে বলেন রেফারি ডিকা। দ্বিতীয় বারেও সফল ডিকা। ধীরাজ ঠিক জায়গায় ঝাঁপিয়েও বাঁচাতে পারেননি ডিকার শট।
তবে এই একটি গোল ছাড়া গোটা ম্যাচে মোহনবাগানের খেলা বিশ্লেষণ করা হলে উঠে আসবে শুধুই শূন্যতা। গগনে গগনে ফুটবল আর মিস পাসের বহর।
আরও পড়ুন: কেপ টাউনে পৌঁছে গেল টিম ইন্ডিয়া
আরও পড়ুন: ছেলেকে নিয়ে দুবাইতে আটকে রইলেন ধবনের স্ত্রী
এরই মধ্যে ম্যাচের ৩৩ মিনিটে রহিম আলির পাস থেকে গোল করে অ্যারোজকে সমতায় ফেরান রাহুল কান্নোলি। তবে গোলটি রাহুল করলেও এর পুরো কৃতিত্বতাই বাংলার ছেলে রহিমের।
যে ভাবে বাঁ দিক দিয়ে চকিতে গতি বাড়িয়ে কিংশুক দেবনাথকে এক দিকে ফেলে মাইনাস বাড়ালেন রহিম, তা থেকে স্পষ্ট বিশ্বকাপ এবং উন্নত ট্রেনিং অনেকটাই বদলে দিয়েছে আগামী প্রজন্মের তারকাদের।
এরই মধ্যে প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময় অসামান্য একটি সেভ করেন ধীরাজ মইরাংথেম।
চেষ্টা চালিয়েও দলকে জেতাতে পারলেন না ক্রোমা
আশা করা হয়েছিল ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে স্ট্র্যাটেজিতে পরিবর্তন এনে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াবেন সঞ্জয় সেন। কিন্তু কোথায় কী! সেই একই ফুটবল। ছোট ছোট পাসে আক্রমণ না তৈরি করে গগনে গগনে ফুটবল খেলার বহর দেখালেন ডিকা-শিল্টন ডি সিলভারা।
এরই মাঝে ম্যাচের ৬৫ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন অ্যারোজ অধিনায়ক অমরজিৎ সিংহ কিয়াম।
গ্যালারিতে উপস্থিত সমর্থকরা আশা করেছিলেন এ বার হয়তো ১০ জনের অ্যারোজের বিরুদ্ধে কাঙ্খিত গোলটি তুলে নেবে তাঁদের প্রিয় দল। কিন্তু না! আশা বাস্তবে রূপান্তরিত হল না। নিরাশ হয়েই মাঠ ছাড়তে হল পুরো গ্যালারিকে। ক্লাব কর্তৃপক্ষের হিসেব বলছে এ দিন গ্যালারিতে উপস্থিত ছিল ১৪ হাজার ৭৮০ জন সমর্থক।
তবে অ্যারোজের বিরুদ্ধে ড্র করে নিজের উপর চাপটা কিন্তু নিয়েই নিলেন আই লিগ জয়ী কোচ সঞ্জয় সেন। ক্ষিপ্ত মোহনবাগান জনতার কাছে ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি শুনতে হল চেতলার সঞ্জয়কে। ক্লাবের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন সমর্থকরা। মোহনবাগান সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠি উঁচিয়ে যেতেও দেখা যায় পুলিশবাহিনীকে। ঘরের মাঠে ড্রয়ের হ্যাটট্রিক করার ফলে ৬ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকায় চতুর্থ স্থানে রইল মোহনবাগান। সম সংখ্যক ম্যাচ খেলে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল।