মঞ্চ: ওয়েলিংটনে বেসিন রিজার্ভের বাইশ গজ। এতটাই সবুজের সমারোহ যে, আউটফিল্ড থেকে আলাদা করা কঠিন। প্রথম টেস্ট শুরুর আগের দিন এই ছবি টুইটারে দেয় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডই।
যাঁরা ভেবেছিলেন নিউজ়িল্যান্ডে সবুজে ভরা, ভয়ঙ্কর সেই সব পিচের দিন শেষ, তাঁদের জন্য উত্তর ওয়েলিংটনে বেসিন রিজার্ভের বাইশ গজ। টেস্ট শুরুর এক দিন আগে এমনই সবুজের উপস্থিতি ছিল যে, আউটফিল্ডের থেকে পিচকে আলাদা করাই কঠিন হচ্ছিল। এর সঙ্গে বেসিন রিজার্ভের ঝোড়ো হাওয়া মিশে আধুনিক প্রজন্মের সব চেয়ে ভয়ঙ্কর বডিলাইন দ্বৈরথ না উস্কে দেয়, তা নিয়েই চলছে জোর জল্পনা।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড তাদের সরকারি টুইটারে বেসিন রিজার্ভের এই মারণ পিচের ছবি তুলে দেয়। তার পর ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে টুইট করতে শুরু করে দেন যে, এ রকম বাইশ গজে নিউজ়িল্যান্ডের শক্তিশালী পেস আক্রমণের সামনে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের কী হাল হতে পারে! ঘটনা হচ্ছে, বিরাট কোহালির হাতেও যোগ্য জবাব দেওয়ার মতো পেস শক্তি রয়েছে। নিউজ়িল্যান্ডের যেমন রয়েছে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি এবং নবাগত কাইল জেমিসন, তেমনই ভারতের হাতে রয়েছে যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি এবং ইশান্ত শর্মা। এত উন্নত পেস বোলিং আক্রমণ নিয়ে আর কখনও রিচার্ড হ্যাডলির দেশে আসেননি কোনও ভারত অধিনায়ক। যদি চোট থেকে ফেরা ইশান্ত কোনও কারণে খেলতে না-ও পারেন, উমেশ যাদব আছেন। বুমরা যখন চোটের জন্য বাইরে ছিলেন, দেশের মরা পিচে আগুন ঝরাচ্ছিলেন উমেশ।
ব্যাটিং শক্তি বাড়ানোর জন্য ভারতীয় দল তাদের প্রথম একাদশে উইকেটকিপার হিসেবে ঋদ্ধিমান সাহার জায়গায় ঋষভ পন্থকে আনতে চাইছে। নিউজ়িল্যান্ড যদিও তাদের অন্যতম সেরা পেস অস্ত্র, বাঁ হাতি নিল ওয়্যাগনারকে পাচ্ছে না। যাঁর হাতে এই মুহূর্তে সব চেয়ে বিপজ্জনক বাউন্সার রয়েছে। সন্তানের জন্ম হবে বলে স্ত্রীর পাশে থাকতে চান ওয়্যাগনার, তাই প্রথম টেস্টে খেলতে পারছেন না। তাঁর জায়গায় ওয়ান ডে সিরিজে নজর কাড়া, ৬ ফুট ৮ ইঞ্চির কাইল জেমিসন খেলবেন। বাড়তি গতি এবং বাউন্স আমদানি করার জন্য যে তাঁকে আনা হচ্ছে, সন্দেহ নেই। রস টেলর শততম টেস্ট খেলতে নামছেন।
ভারতীয় ভক্তরা পিচ দেখে উদ্বিগ্ন হলেও তাঁদের আশ্বস্ত করার মতো তথ্যও রয়েছে। বোল্টের বিরুদ্ধে টেস্টে কোহালির গড় ৬৬, সাউদির বিরুদ্ধে ৪৬.৫। তবে কোহালির জন্য আরও তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, নিউজ়িল্যান্ডে গত ২৮টি টেস্টে ২৫টি ক্ষেত্রে টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছেন অধিনায়কেরা। পিচ প্রস্তুতকারক হ্যাগেন ফেথ ভিজে ভাব রেখেছেন, যাতে গোটা টেস্ট ধরে পিচে গতি এবং বাউন্স থাকে। যদিও হালফিলে নিউজ়িল্যান্ডে পিচের চরিত্র হচ্ছে, যত সময় যায়, তত ব্যাটিং সহজ হয়ে আসে। কোহালি বা উইলিয়ামসন যে টস জিতলেই এক মুহূর্ত না ভেবে ‘বোলিং করব’ বলবেন, তা বলার জন্য গোয়েন্দা হওয়ার দরকার নেই।
কোহালিরা সাত টেস্টে অপরাজিত এবং ইতিমধ্যেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার সব চেয়ে বড় দাবিদার। ইংল্যান্ডে ১-৪ হারার পরে কোনও টেস্ট সিরিজে হারেননি তাঁরা। আবার নিজেদের দেশে গত ১৪টি সিরিজে মাত্র দু’টি টেস্ট হেরেছে নিউজ়িল্যান্ড। বেসিন রিজার্ভের সবুজ মঞ্চে কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না।