ঈশানের দুরন্ত ইনিংস, প্রশংসা কোহলীর। ছবি রয়টার্স
সিরিজে সমতা ফেরাতে যে তারা মরিয়া, সেটা ভারতের প্রথম একাদশ নির্বাচনেই বোঝা গিয়েছিল। খেলা শুরুর কিছুক্ষণ আগেই দেখা গিয়েছিল গোটা দল গোল হয়ে দাঁড়িয়ে। তখনই টুপি তুলে দেওয়া হয় ঈশান কিষাণ এবং সূর্যকুমার যাদবের হাতে। আইপিএলে ‘অভিজ্ঞ’ দুই তরুণকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নামিয়ে দিয়েছিলেন বিরাট কোহলী। দু’জনেই আস্থার দাম রাখলেন। প্রথম জন ব্যাট হাতে অর্ধশতরান করে দলের জয় নিশ্চিত করলেন। আর একজন ফিল্ডিংয়ের সময় ঝাঁপিয়ে পড়ে অসাধারণ ক্যাচ নিলেন।
আইপিএল গোটা বিশ্বের সঙ্গে ক্রিকেটারদের দূরত্ব কতটা কমিয়ে দিয়েছে তা আরও এক বার প্রমাণিত হল। রবিবার রাতে ঈশানকে দেখে মনেই হয়নি তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছেন। যে ভাবে বেন স্টোকসকে পুল করে এবং আদিল রশিদকে সুইপ করে পরপর দুটি ছক্কা হাঁকালেন, তাতে ঈশানের পরিণত মানসিকতাটা পরিষ্কার বোঝা গেল। নন-স্ট্রাইকে দাঁড়িয়ে থাকা কোহলীকেও দেখা গেল বারবার এগিয়ে এসে ঈশানের পিঠ চাপড়ে দিতে।
টসে জিতে ফিল্ডিং নেন কোহলী। শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। তৃতীয় বলেই জস বাটলারকে ফিরিয়ে দেন ভুবনেশ্বর কুমার। কিন্তু দাউইদ মালান এবং জেসন রয় ঘাব়ড়ে যাননি। ধীরে ধীরে ভারতীয় বোলারদের ঘাড়ে চেপে বসেন তাঁরা। কোহলীকে কিছুটা হলেও দিশেহারা দেখাচ্ছিল। সামনে যাঁকেই আনছিলেন, মালান এবং রয় রেয়াত করছিলেন না।
ম্যাচ ঘুরল যুজবেন্দ্র চহালের বলে। সময় নির্বাচনে ভুল হওয়ায় ছয় মারতে গিয়ে ফিরলেন মালান। কিছুক্ষণ পরে রয় ফিরে যেতেই চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। ক্রিজে দুই নতুন ব্যাটসম্যান মানিয়ে নিতে সময় নেন। ইংরেজ অধিনায়ক অইন মর্গ্যান সামান্য সময়ের জন্যে ঝড় তুলেছিলেন। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
জনি বেয়ারস্টো বা বেন স্টোকস উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রাখতে ব্যর্থ। ফলস্বরূপ ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে উঠল না বড় রান। ভুবনেশ্বর, ওয়াশিংটন সুন্দর এবং শার্দূল ঠাকুর কেউ বেশি রান দেননি। উল্টে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিয়ে ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের চাপে রেখেছিলেন।
ভারতের শুরুটাও ভাল হয়নি। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যর্থ কে এল রাহুল। এ বারও ফিরলেন শূন্য রানে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ছন্দে থাকা রাহুলের এহেন অফ ফর্ম কোহলীর যে চিন্তা বাড়াল তাতে সন্দেহ নেই। দলে ঋষভ পন্থ থাকায় ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলছেন রাহুল। সেটা তাঁকে আলাদা চাপে রেখেছে কি না, সেটাও দেখতে হবে কোহলীকে।
তবে রাহুল ফিরতে আর রোখা যায়নি ভারতকে। শুরু থেকেই দাপট দেখাতে থাকেন কোহলী। যোগ্য সঙ্গত দেন ঈশানও। ইংরেজ বোলারদের ঘাড়ে চেপে বসেন তাঁরা। কারেন ভাইরা, স্টোকস, রশিদ, জফ্রা আর্চার কেউ বাদ যাননি। রশিদকে পরপর দুটি ছক্কা মেরে অর্ধশতরান পূরণ করেন ঈশান। অজিঙ্ক রাহানের পর তিনি দ্বিতীয় ভারতীয়, যিনি দেশের হয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই অর্ধশতরান করলেন।
ভিতটা ঈশান গড়ে যাওয়ার পর বাকিটা নিয়ে ভাবতে হয়নি ভারতকে। আগের দুটি ইনিংসে শূন্য করার পর তৃতীয় ইনিংসে পুরনো ঝলক দেখা গেল কোহলীর ব্যাটে। ইংরেজ বোলারদের শাসন করলেন আগাগোড়া। টম কারেনকে ছক্কা মেরে অর্ধশতরান পূরণ করলেন।
মাঝে এসে স্বভাবোচিত ভঙ্গিতে ঝোড়ো ইনিংস খেলে যান ঋষভ পন্থ। তিনি যখন ফিরলেন, তখন লক্ষ্যমাত্রা কার্যত হাতের মুঠোয়। ফলে তাড়াহুড়ো করতে হয়নি কোহলীদের। জর্ডানকে পর পর চার এবং ছয় মেরে জয় নিশ্চিত করেন কোহলী। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ৩০০০ রানও হয়ে গেল তাঁর।