প্রস্তুতি: চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্টের আগে অনুশীলনে ঋদ্ধি, ঋষভ, শুভমন, বিরাট, রাহানেরা। বুধবার। বিসিসিআই
অস্ট্রেলিয়ায় ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেরার পরে ক’টা দিন আর কেটেছে! কোথায় তিনি দেশের ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা জয়ের স্রোতে ভাসতে থাকবেন। তা না, অধিনায়কত্বের ব্যাটন তুলে দিতে হচ্ছে সদ্য পিতা হওয়া বিরাট কোহালির হাতে।
অজিঙ্ক রাহানে কিন্তু খুশি। বরাবর ব্যক্তির আগে দলকে রাখা তারকারা যেমন হন আর কী! ‘‘দেখুন, এখন আমার কাজ হচ্ছে পিছনের সারিতে থাকা এবং বিরাটকে সাহায্য করা,’’ চেন্নাইয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট শুরুর দু’দিন আগে যখন বলছেন কোহালির সহকারী, মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছে সাংবাদিকেরা। ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে রাহানে বলে চলেন, ‘‘এক জন অধিনায়কের মাথায় কত কিছু ঘুরতে থাকে। তাই সহ-অধিনায়কের কাজ হচ্ছে, আগাম ভেবে রাখা কী ঘটতে পারে। এবং, তার পরে অধিনায়ক যদি পরামর্শ চায়, তাকে সঠিক উপদেশটা দেওয়া।’’ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে এর পরে রাহানে যোগ করেন, ‘‘আমার কাজ তাই খুব সহজ। আমি পিছনের সারিতে থাকছি। যখনই দরকার পড়বে আমি গিয়ে ক্যাপ্টেনকে পরামর্শ দেব। অথবা আমাকে ক্যাপ্টেন কিছু জিজ্ঞেস করলে, আমি বলব।’’ কে বলবে, সদ্য ইনি অস্ট্রেলিয়া থেকে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জিতে আসা অধিনায়ক! সারা বিশ্ব যাঁর শান্ত, ধীরস্থির নেতৃত্বের বন্দনায় ব্যস্ত। রাহানেরা যেমন হন আর কী! বলে দেবেন, ‘‘সহ-অধিনায়ক থাকার সময়ে আমি পিছনের সারিতেই থাকতে পছন্দ করি।’’
ক্রিকেট বিশ্বের যত নজর এখন অধিনায়ক বিরাট কোহালি এবং সহ-অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানের উপরে। এক জন ‘কিং কোহালি’। ভারতীয় ক্রিকেটের অবিসংবাদী রাজা। কিন্তু তাঁর অনুপস্থিতিতে যে ভাবে রাহানে অনমনীয় ভঙ্গিতে নেতৃত্ব দিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে সিরিজ জিতে ফিরেছেন, তাতে রাহানেকে নিয়ে চর্চাও তুঙ্গে। কেভিন পিটারসেনের মতো কেউ কেউ মনে করেন, কোহালি এবং রাহানের নেতৃত্ব নিয়ে গোটা সিরিজে জোর আলোচনা চলবে।
রাহানেকে জিজ্ঞেস করুন, কোহালির প্রত্যাবর্তন নিয়ে। জবাব আসবে, ‘‘বিরাট ফিরে আসায় ভারতীয় দল আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। আমরা প্রত্যেকে খুব খুশি আমাদের অধিনায়কের প্রত্যাবর্তনে। বিরাটই আমাদের অধিনায়ক। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ও না থাকায় নেতৃত্বের দায়িত্ব আমাকে নিতে হয়েছিল। সেই দায়িত্ব পালন করতে পেরে আমি উচ্ছ্বসিত ঠিকই, কিন্তু আমি যে সহ-অধিনায়ক সেটা প্রত্যেককেই মানতে হবে।” ফের প্রশ্ন, অধিনায়ক হিসেবে সিরিজ জয়ের সাফল্য কি সহকারী হিসেবে কিছুটা সাহায্য করবে? রাহানের উত্তর, “অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সাফল্য আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলেছে ঠিকই, কিন্তু সে সব ভুলে নতুন সিরিজের উপরেই মনোনিবেশ করছি।”
৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট চেন্নাইয়ের এম এ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে। রাহানের ধারণা, প্রথম টেস্টের পিচও সাহায্য করবে স্পিনারদেরই। ইংল্যান্ড দলে জফ্রা আর্চার, বেন স্টোকসের মতো তারকা রয়েছেন। শ্রীলঙ্কা সফরে একটি ডাবল সেঞ্চুরি ও একটি সেঞ্চুরি করে ভারতে এসেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুট। ইংল্যান্ড দলে কাকে বেশি সমীহ করবে ভারত? রাহানের জবাব, “আমরা আলাদা করে কারও উপর বেশি মনোনিবেশ করতে চাই না। প্রত্যেককে সমান গুরুত্ব দেওয়া হবে। আমরা নিজেদের শক্তি নিয়েই বেশি ভাবছি।” আইপিএলে আর্চার ও স্টোকসের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। তাতে কি কিছুটা সুবিধা পেতে পারে ভারত? রাহানে বলে দিচ্ছেন, “আইপিএলে একসঙ্গে খেললেও সব পরিকল্পনা নিয়ে কিন্তু আমাদের মধ্যে কথা হয় না। টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে আইপিএলের কোনও সম্পর্ক নেই।”
মহড়া: নেটে ব্যাটিংয়ে আগ্রাসী মেজাজে বিরাট। বিসিসিআই
প্রথম একাদশ কী হতে পারে, তা নিয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও রাহানে জানিয়ে দিলেন, হার্দিক পাণ্ড্য অনুশীলনে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন। নেটে বোলিং করছেন। ব্যাটিংয়েও সাবলীল দেখাচ্ছে তাঁকে। তাই হার্দিক হয়তো দ্রুত টেস্টের আসরে ফিরতে পারেন।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে নিউজ়িল্যান্ড। কেন উইলিয়ামসনদের প্রতিপক্ষ হওয়ার লড়াই ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যে। রাহানে অবশ্য বলে দিচ্ছেন, “বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে আপাতত ভাবছি না। আমাদের লক্ষ্য এই সিরিজ জেতা। তা করতে পারলে ফাইনালে ওঠার দৌড়ে এগিয়ে যাব।”
আগাম কিছু ধরে নেব না, অতীত সাফল্য আঁকড়েও পড়ে থাকব না। অজিঙ্ক রাহানেরা যেমন হন আর কী! নতুন দিন, নতুন পরীক্ষা, নীরবে চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে চলো। এই তো তাঁদের মন্ত্র! তা সে অধিনায়কত্বের মুকুট মাথায়
থাকুক কী না থাকুক!