বিরাট কওহালি এবং স্টিভ স্মিথ। —ফাইল চিত্র
মুখোমুখি ২ সেরা ব্যাটসম্যান। মাঠে নয়, মাঠের বাইরে। টেস্ট ক্রিকেটের এক এবং দুই নম্বর ব্যাটসম্যান একে অপরের দিকে ছুঁড়ে দিলেন কঠিন প্রশ্নবান। মাঠের বাইরে বন্ধুত্বপূর্ণ মুহূর্ত তৈরি হল ২ দেশের সেরা খেলোয়াড়ের মধ্যে। কখনও ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি প্রশ্ন করছেন স্টিভ স্মিথকে, আবার কখনও পাল্টা প্রশ্ন স্মিথ ফিরিয়ে দিচ্ছেন বিরাটকে। তাঁদের আড্ডায় উঠে এল নানা কাহিনী।
স্মিথ: তোমার প্রথম ক্রিকেটের স্মৃতি মনে পড়ে?
বিরাট: প্রথম ক্রিকেট খেলা বলতে বাবা বল ছুঁড়ে দিচ্ছেন আর আমি একটা প্লাস্টিকের ব্যাট দিয়ে মারছি। সেখান থেকেই শুরু। ওটা আমার কাছে বিশেষ মুহূর্ত, কারণ কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার হাতে ব্যাট ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকেই আমার বেড়ে ওঠা। তোমার মনে পড়ে কবে প্রথম ব্যাট ধরেছিলে?
স্মিথ: ব্যাট ধরতে পারার মতো বয়স হতেই ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পর থেকে কখনওই তা হাত থেকে নামাতে চাইনি। প্রতিদিন স্কুলের শেষে বিকেলবেলা প্র্যাকটিস করতাম। তারপর ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা, র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে পৌঁছনো। সব সময় ক্রিকেটার হতে চেয়েছি আর আজ আমরা এখানে। তুমি কি প্রথম থেকেই ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলে, নাকি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের পর?
বিরাট: আমি সবসময় চাইতাম ক্রিকেটের সেরা পর্যায়ে খেলতে। বাবা মারা যাওয়ার পর ভেবে নিয়েছিলাম আমাকে ক্রিকেট খেলতেই হবে। নিজের লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছিলাম, ভারতের হয়ে খেলতেই হবে। প্র্যাকটিসে নিজেকে উজাড় করে দিতাম। কোনও ভাবেই যাতে দল থেকে বাদ না পড়তে হয় সেই দিকে নজর দিতাম। তবে তোমার সঙ্গে বোধ হয় আমার প্রথম দেখা হয় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেই।
স্মিথ: তোমার তো দারুণ স্মৃতিশক্তি বিরাট! আচ্ছা কোন ইনিংস খেলে মনে হয়েছিল যে আন্তর্জাতিক স্তরে খেলার জন্য তুমি তৈরি?
বিরাট: ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে জোহানেসবার্গে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ম্যাচে। কেমার রোচের প্রথম বলটাই প্রায় দেড়শ কিমি বেগে এসে লাগলো আমার বাইসেপে। মনে হল কী ভাবে সামলাবো। ওর একটা স্লো বলে বাউন্ডারি মারি। তাতেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই। সেই ম্যাচে ৭৯ রানে অপরাজিত ছিলাম। প্রথমবার ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়েছিলাম সেদিন। মনে হয়েছিল হ্যাঁ, আমিও পারি। তুমি যখন প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে এলে সকলে মনে করেছিল অস্ট্রেলিয়া নতুন শেন ওয়ার্ন পেয়েছে। সেখান থেকে আজ তুমি বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট ব্যাটসম্যান। কী ভাবে সম্ভব হল?
আরও পড়ুন: স্মিথ খেলবেন প্রথম টেস্ট, আশা অধিনায়ক পেনের
স্মিথ: আমি বল করতে ভালবাসি। তবে লেগস্পিন বল করা খুব পরিশ্রমের। একই সময় বল, ব্যাট, ফিল্ডিং তিনটে দিকেই নজর দেওয়া বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। ধীরে ধীরে ব্যাটিংয়েই মন দিলাম।
বিরাট: হ্যাঁ, আমি শুনেছি তুমি দিনে ৩-৪ ঘণ্টা ব্যাট করো।
স্মিথ: কখনও, কখনও (চওড়া হাসি স্মিথের মুখে)। ২০১৯ বিশ্বকাপে ফ্যানেরা আমার উদ্দেশে যখন বিদ্রুপ করছিল, তুমি তাদের থামিয়েছিলে। কেন মনে হয়েছিল এটা করা উচিত? আমার মনে আছে তুমি খেলা শেষে আমাকে মেসেজও করেছিলে। ধন্যবাদ।
বিরাট: একটা দু্র্ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। তোমরা বুঝতে পেরেছিলে ভুল হয়েছিল। অনেকটা সময় পর তোমরা ফিরে এসেছিলে ক্রিকেট মাঠে। একটা খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে তোমরা গিয়েছিলে। আমার মনে হয়েছিল কোনও ব্যক্তিকে এই ভাবে আক্রমণ করা উচিত নয়। আজ আমরা এখানে বসে আড্ডা দিচ্ছি, আইপিএলের সময় দিয়েছি বেশ কয়েকবার। এটাই তো থেকে যাবে। খারাপ সময়টাকে মনে রাখার কোনও মানে হয় না। এবারের টেস্ট সিরিজে কে বেশি রান করবে, উইকেট নেবে, তুমি না মার্নাস লাবুশানে?
স্মিথ: কে সব থেকে বেশি রান করবে? (চিন্তিত স্বরে)
বিরাট: আমি জানি এটা তুমিই করতে চাইবে। (হাসতে হাসতে)
স্মিথ: ঠিক, ঠিক। (ঠোঁটের কোণে হাসির ঝিলিক) তবে বল করতে না হলেই ভাল। দলে ৫ জন বোলার আছে, প্ল্যান তৈরি আছে, তারাই বল করুক। তবে আমার মনে হয় একটা দারুণ সিরিজ হতে চলেছে। তুমি নিশ্চয়ই বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি ধরে রাখতে চাইবে।
আরও পড়ুন: লাল নাকি গোলাপি কোন বলে জয়ী ক্রিকেট?
বিরাট: নিশ্চয়ই। গতবার দারুণ একটা সিরিজ খেলেছিলাম আমরা। তুমি আর ডেভিড ওয়ার্নার ছিলে না ঠিকই, তবুও তোমাদের বোলিং অ্যাটাক শেষ কয়েক বছর ধরে একই রকমের ভয়ঙ্কর। এবার তোমরা ফিরে আসায় আরও শক্তিশালী দল তোমাদের। আমাদের কাছে সুযোগ নিজেদের আরও বড় পরীক্ষার মুখে ফেলার। তবে এবারের সিরিজে আমি চাইব জিঙ্কস (অজিঙ্ক রাহানে) প্রচুর রান করুক। আমার অনুপস্থিতিতে বড় দায়িত্ব থাকবে ওর ওপর। হনুমা বিহারীও আশা করি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভাল খেলবে।
স্মিথ: হ্যাঁ, এটা খুবই দুঃখের যে, তুমি মাত্র একটা ম্যাচ খেলবে এই সিরিজে। তবে দারুণ সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছ দেশে ফিরে যাওয়ার। তোমার প্রথম সন্তান আসছে পৃথিবীতে। এই সময় পরিবারের পাশে থাকা খুব প্রয়োজন। জানি তোমার মনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলেছে যে ফিরে যাবে নাকি খেলবে, তবে তোমার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। অভিনন্দন তোমাকে।
বিরাট: আমি সবসময় দর্শকদের সামনে খেলতে ভালবাসি। আইপিএলে খুব অদ্ভুত লাগছিল দর্শকহীন অবস্থায় খেলতে, এখানে এসে আবার দর্শকের সামনে খেলতে পেরে ভাল লাগছে। ধন্যবাদ আমাকে অভিনন্দন জানানোর জন্য। দেশের জন্য খেলা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ পরিবারের পাশে থাকাটা। আমার জীবনের খুব বিশেষ একটা মুহূর্ত এটা। পরিবারের পাশে থাকতে পেরে আমি গর্বিত। দারুণ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছি আমি।