অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে ভারতকে ১-২ ফলে হারতে হয়েছে। প্রায় একই দল নিয়ে খেলে সেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ ভারত এক ম্যাচ বাকি থাকতে জিতে নিয়েছে।
টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারতীয় দলের সাফল্যের মূল কারণ আইপিএল। নিঃসন্দেহে আইপিএল বছরের পর বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেটকে টি-টোয়েন্টির জন্য প্লেয়ারের জোগান দিয়ে যাচ্ছে।
ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি সিরিজ জেতার পর সবার আগে বলেন, এই ক্রিকেটাররা প্রত্যেকে অন্তত ১৪টি করে ম্যাচ খেলেছে। ফলে জানে কার কী ভূমিকা। এরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মধ্যে রয়েছে।
আইপিএলে খেলার ফলে ক্রিকেটাররা খুব দ্রুত শিখতে পারছে। আইপিএলেও অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে চাপ সামলে খেলতে হয়। ফলে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এসে কারও দ্রুত মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে না।
ভারতীয় দল গত ১০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। ফলে টি-টোয়েন্টিতে ভারত বারবরই একটা বড় শক্তি।
একদিনের সিরিজ ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সের আকাশ পাতাল তফাৎ মূলত দু’জনের জন্য। প্রথম জন লোকেশ রাহুল। একদিনের সিরিজে তাঁকে পাঁচ নম্বরে নামানো হয়েছে। তিনটি ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৯৩ রান। গড় ৩১.০০।
টি-টোয়েন্টি সিরিজে দু’টি ম্যাচেই রাহুল ওপেন করেছেন। প্রথম ম্যাচে করেছেন ৪০ বলে ৫১ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে ২২ বলে ৩০। স্ট্রাইক রেট ১৩০.৬৪।
দু’টি সিরিজের মধ্যে দ্বিতীয় তফাৎ গড়ে দিয়েছেন ফাস্ট বোলার থিরু নটরাজন। একদিনের ম্যাচে ভারত যখন সিরিজ হেরে গেছে, তখন তৃতীয় ম্যাচে তাঁকে সুযোগ দেওয়া হয়। ১০ ওভারে ৭০ রান দিয়ে নটরাজন তুলে নেন লাবুশানে ও আগরের উইকেট।
টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু থেকেই খেলেছেন তামিলনাড়ুর এই পেসার। প্রথম ম্যাচে ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন। দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সেরা হার্দিক পাণ্ড্য বলেই দিয়েছেন, তিনি ভেবেছিলেন নটরাজনই ম্যাচের সেরা হবেন।
প্রাক্তন ক্রিকেটার হরভজন সিংহ মনে করছেন দুই ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়া নটরাজনই সিরিজের সেরা নির্বাচিত হবেন। একদিনের সিরিজে তাঁকে শুরু থেকে না খেলানোটা বড় ভুল বলেও মনে করেন তিনি।
নটরাজনের একটা বড় সুবিধে, এখনও তাঁকে কেউ সেভাবে চেনেন না। ব্যাটসম্যানরা এখনও তাঁর বোলিংয়ের কাটাছেঁড়া করেননি। তাঁর ইয়র্কার কতটা বিষাক্ত হতে পারে, ব্যাটসম্যানদের সে সম্পর্কে তেমন ধারণাতৈরি হয়নি।
কোনও সন্দেহ নেই, যত দিন গড়াবে, নটরাজনের পরীক্ষা তত কঠিন হবে। কারণ, ব্যাটসম্যানরা ক্রমশ তাঁর বোলিংয়ের খুঁটিনাটি জেনে যাবেন।
রাহুল, নটরাজনকে বাদ দিলে টি-টোয়েন্টি সিরিজে যিনি তফাৎ গড়ে দিয়েছেন, তিনি হার্দিক পাণ্ড্য। দ্বিতীয় ম্যাচে ২২ বলে ৪২ রান করেন।
পাণ্ড্যকে নিয়ে কোহালি উচ্ছ্বসিত। বলেন, ও এখন নিজের মূল্য বুঝতে পারবে। নিজের উইকেটের কদর করতে পারবে। আমরা আগামী ৪-৫ বছরের জন্য একজন ফিনিশার পেয়ে গেলাম।
হার্দিক এখন এতটাই পরিণত যে সবার আগে ঠিক করে ফেলতে পারছেন বিপক্ষের কোন বোলারকে মারবেন আর কাকে সমীহ করে খেলবেন। এই কাজটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হার্দিক টি-টোয়েন্টি সিরিজে সফলভাবে সেটা করতে পেরেছেন।
টি-টোয়েন্টি সিরিজে সাফল্যের জন্য বলতে হবে সঞ্জু স্যামসন, শ্রেয়স আইয়ারের কথাও। এই দু’জনেই রান হয়ত খুব বেশি করেননি।কিন্তু অল্প রানের যে ঝোড়ো ইনিংস খেলেছেন, সেটাই ভারতকে জেতাতে সাহায্য করেছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই ছোট ছোট ঝোড়ো ইনিংসগুলোই ম্যাচে তফাৎ গড়ে দেয়। এই ইনিংসগুলো একদিনের ম্যাচে ততটা কাজে দেয় না। সেখানে বড় রানের ইনিংস দরকার হয়।
একদিনের সিরিজে হারের বড় কারণ, বোলারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতা। প্রথম দু’টি ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৩৭৪ এবং ৩৮৯ রান তুলেছিল। ম্যাচ তখনই কোহালিদের হাতের বাইরে চলে যায়।
একদিনের সিরিজে মোট ১০টি ক্যাচ পড়েছে। প্রথম ম্যাচে ৫টি, দ্বিতীয় ম্যাচে ২টি, তৃতীয় ম্যাচে ৩টি ক্যাচ ফেলেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিরুদ্ধে সিরিজে ১০টি ক্যাচ ফসকালে জেতার সম্ভাবনা থাকে না।