—প্রতীকী চিত্র।
অরুণাচল প্রদেশে বসবাসকারী ভারতীয় খেলোয়াড়দের স্ট্যাপলড ভিসা (স্বাভাবিক ভিসা নয়) দিয়েছে চিন। সে দেশের সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গেমসে গোটা দলই পাঠাল না ভারত। মনে করা হচ্ছে, আগামী দিনে চিনের অরুণাচল নীতির প্রতিবাদে আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে দিল্লি থেকে চিনগামী বিমানে ওঠার কথা ছিল ভারতের আট সদস্যের উশু (এক ধরনের মার্শাল আর্ট) দলের। বিমানে ওঠার কয়েক মিনিট আগে দিল্লি বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয় গোটা দলকে। বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গেমসে অংশ নিতে চিনের চেংদু যাচ্ছিল দলটি। দলে ছিলেন পাঁচ খেলোয়াড়, দুই সাপোর্ট স্টাফ এবং কোচ রাঘবেন্দ্র সিংহ। এই দলে অরুণাচলের কোনও বাসিন্দা ছিলেন না। কিন্তু শুরুতে অরুণাচলের বাসিন্দা তিন উশু খেলোয়াড়েরও যাওয়ার কথা ছিল। গত ১৬ জুলাই চিনের ভিসার জন্য আবেদন করে গোটা দল। সকলের ভিসা মঞ্জুর করা হলেও অরুণাচলের ওই তিন খেলোয়াড়ের ভিসা মঞ্জুর করেননি চিনা কর্তৃপক্ষ। নেইমান ওয়াংসু, ওনিলু তেগা এবং মেপুং লামগু নামে ওই তিন খেলোয়াড়কে মঙ্গলবার আবার ভিসার আবেদন করার জন্য বলে চিনের দূতাবাস। বুধবার বিকালে তাঁদের স্ট্যাপলড ভিসা দেওয়া হয়।
অভিবাসন দফতরের আধিকারিকেরা এবং সিআইএসএফ জওয়ানেরা তাঁদের আটকেছেন বলে জানিয়েছেন দলটির কোচ রাঘবেন্দ্র। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের চিনের বিমানে উঠতে দেওয়া হয়নি। আমাদের কোনও কারণ বলা হয়নি। জওয়ানেরা শুধু জানিয়েছেন, তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ পালন করছেন।’’ সূত্রের খবর, আট সদস্যের উশু দলে অরুণাচলের বাসিন্দা কেউ না থাকলেও, চিনের অবস্থানের প্রতিবাদ হিসাবেই শেষ মুহূর্তে দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উশু ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার এক কর্তা বলেছেন, ‘‘চিনের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভারতের কোনও ক্রীড়াবিদকে সে দেশে পাঠাবে না। এই পরিস্থিতিতে কোনও ভারতীয় নাগরিকের চিনে যাওয়া উচিত নয়। তাই উশু খেলোয়াড়দেরও চিনে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে দিতে সরকার ইচ্ছুক নয়। তাই দলের সবার সব কিছু ঠিক থাকলেও কাউকে বিমানে উঠতে দেওয়া হয়নি।’’ ফলে বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গেমসে ভারতের উশু দল অংশগ্রহণ করছে না।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, ‘‘চিনের সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরণের ঘটনার উপযুক্ত জবাব দেওয়ার অধিকার ভারতের রয়েছে। আমাদের সহজ অবস্থান হল, বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে এমন ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বৈষম্যমূলক আচরণ করা উচিত নয়।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘চিনের কিছু প্রতিযোগিতায় ভারতের কয়েক জন নাগরিককে স্ট্যাপলড ভিসা দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কোনও ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। চিনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট।’’
অরুণাচল প্রদেশকে চিন রাজনৈতিক কারণে ভারতের অংশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয় না। তাই অরুণাচলের কোনও বাসিন্দা চিনে যেতে চাইলে তাঁর পাসপোর্টে ভিসা মঞ্জুরের স্ট্যাম্প দেয় না চিনের অভিবাসন দফতর। দেওয়া হয় স্টেপলড ভিসা। অর্থাৎ, একটি আলাদা কাগজে ভিসা মঞ্জুরের স্ট্যাম্প দিয়ে তা পাসপোর্টের সঙ্গে স্টেপল করে আটকে দেওয়া হয়। পরে কাগজটি ছিঁড়ে দিলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ভারতীয় নাগরিক হিসাবে চিন সফরের নথি থাকে না। চিনের এই নীতির প্রতিবাদে সুর চড়াচ্ছে নয়াদিল্লি। প্রতিবাদ হিসাবে বেছে নেওয়া হতে পারে এশিয়ান গেমসকেও। তাতে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা যাবে ভারতের অবস্থান। দেওয়া যাবে স্পষ্ট বার্তা।
অতীতে অরুণাচল প্রদেশের খেলোয়াড়দের চিনের স্ট্যাপলড ভিসা দেওয়ার একাধিক উদাহরণ রয়েছে। এর আগে কেন্দ্র প্রতিবাদ করলেও দল না পাঠানোর মতো কড়া পদক্ষেপ করেনি। এ বার তা করল।