আট বছর আগে কাতার জয়ের দুই কাণ্ডারি মেহতাব ও নবি। ছবি: ফাইল চিত্র।
গোটা দেশ বলছে ভারতকে আজ পাহাড় ডিঙোতে হবে। পাহাড় ডিঙানোই বটে! ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে কাতার ভারতের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। এশিয়াসেরা তারা। ফিফা বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী পর্বে আফগানিস্তানকে প্রথম ম্যাচেই ছ’ গোলে মাটি ধরিয়েছে কাতার।
এ হেন শক্তিশালী দলকে আট বছর আগে হারিয়েছিল আর্মান্দো কোলাসোর ভারত। খেলার রেজাল্ট দেখে বিশ্বাসই করতে পারেননি ভারতের ফুটবলভক্তরা। যদিও সরকারি দলিলে সেই জয়ের স্বীকৃতি ছিল না। কারণ, ম্যাচে ১০টা পরিবর্তন এনেছিলেন কোলাসো। গোয়া থেকে কোলাসো বললেন, ‘‘প্রীতি ম্যাচে যদি আমরা কাতারকে হারাতে পারি, তা হলে আজ ভারত পারবে না কেন? ওই একটা ম্যাচে জয়ের জন্য আজ দেশ আমাকে মনে রেখেছে। কাতার খুবই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। ভয়ডরহীন ফুটবল খেললে কী হবে, কে বলতে পারেন!’’
দোহা রওনা হওয়ার আগে গুরপ্রীত সিংহ সান্ধুদের ‘হেডস্যর’ ইগর স্তিমাচ পাঁচবারের ভারতসেরা কোচের সুরেই কথা বলেছেন। ক্রোয়েশিয়ার প্রাক্তন বিশ্বকাপার বলেছিলেন, কাতার শক্তিশালী দল ঠিকই। তবে ছেলেরা সাহসী ফুটবল খেলবে। কঠিন ম্যাচের আগেই ভারতীয় সাজঘরের খবর, অনিশ্চিত সুনীল ছেত্রী। তিনি না থাকার অর্থ শক্তি হারিয়ে নামছে ভারত। মানতে চান না বহু যুদ্ধের সৈনিক মেহতাব হোসেন। আট বছর আগে কাতারকে হারানোর সেই ম্যাচে মাঝমাঠে দাপট দেখিয়েছিলেন তিনি। এ দিন মেহতাব বলেন, ‘‘সুনীল খুব ভাল খেলছে। তবে দলের অন্যান্যরা তো সুনীলকে সাহায্য করছে। বাকিদের সাহায্য না পেলে সুনীলের পক্ষে গোল করা সম্ভব হত না। আর সুনীল না খেললে কাকে নামানো হবে, দলের গঠন কী হবে, তা স্থির করবেন কোচ।’’
আট বছর আগে কোলাসোর দলে এই বঙ্গের একাধিক ফুটবলার ছিলেন। এখন হু হু করে সেই সংখ্যা কমেছে। পাঁচ বার আইলিগ জয়ী গোলকিপার সন্দীপ নন্দী এখন নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডের গোলকিপার কোচ। তিনি এ দিন বলছিলেন, ‘‘আল সাদ স্টেডিয়ামে খেলাটা হয়েছিল। স্টেডিয়ামটা ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। স্টেডিয়ামের বাইরে প্রচণ্ড গরম ছিল। অথচ খেলা চলার সময়ে আমরা গরম অনুভবই করিনি।’’
রিমোট কন্ট্রোল হাতে ডেম্পোকে পাঁচ বার ভারতসেরা করা কোলাসো বলছেন, ‘‘কাতারের বিরুদ্ধে সে দিন একাধিক পরিবর্তন এনেছিলাম। গোড়ার দিকে ওরা আমাদের গুরুত্বই দেয়নি। ছেলেরা মরিয়া হয়ে লড়েছিল। আজও ভারতের হারানোর কিছুই নেই। লড়াই করুক ছেলেরা।’’
বিশ্বকাপের যোগ্যতা পর্বের প্রথম ম্যাচে ওমানের কাছে হার মেনেছে ভারত। শুরুতে এগিয়ে গিয়েও ম্যাচ জিততে পারেনি স্তিমাচের দল। দলের হারে হতাশ সুনীল ছেত্রী বলেছিলেন, ‘‘এই ধরনের হার মেনে নেওয়া যায় না।’’ কোলাসোর দলের হয়ে সে দিন খেলা সৈয়দ রহিম নবি বলেন, ‘‘স্তিমাচের দলটাকে দেখে আমার ফিট বলে মনে হচ্ছে না। ৬০ মিনিটের পরে দৌড়তে পারছে না দলটা। এশিয়ান কাপে কনস্ট্যানটাইনের দলটাকে সারাক্ষণ দৌড়তে দেখেছি। আশা করি, স্তিমাচ গুছিয়ে নিতে পারবেন দলটাকে।’’
কোলাসো মনে করছেন, দলটার ফোকাস নড়ে যাচ্ছে। গোয়ান কোচ বলেন, ‘‘ফুটবল তো নব্বই মিনিটের খেলা। ফোকাস নড়ে গেলে চলবে না। ওমানের বিরুদ্ধে শেষের দিকে ফোকাস নড়ে যাওয়াতেই ম্যাচটা হারতে হয়েছিল ভারতকে। আজ সতর্ক থাকতে হবে ভারতকে।’’ ওমানের কাছে হারের পরে নিন্দুকরা নখ-দাঁত বের করেছেন। সুনীলদের সমালোচনা করেছেন। গুরপ্রীত সিংহ সান্ধুদের পাশে দাঁড়িয়ে মেহতাব বলছেন, ‘‘একটা ম্যাচ দেখেই গেল গেল রব তোলার কিছু হয়নি। দলের পাশে দাঁড়ানো দরকার। আমরা যদি দলের পাশে না দাঁড়িয়ে কেবলই সমালোচনা করি, তা হলে উন্নতি করবে কীভাবে দল। সময় দিতে হবে দলটাকে।’’
আট বছর আগের এক ম্যাচ ভারতীয় ফুটবল ভক্তদের আশা বাড়াচ্ছে।