ধাক্কা: রান আউট চহাল। উচ্ছ্বাস নিউজ়িল্যান্ড ক্রিকেটারদের। শনিবার অকল্যান্ডে দ্বিতীয় ওয়ান ডে-তে। এপি
যে দলটা ক’দিন আগেই নিউজ়িল্যান্ডকে ৫-০ উড়িয়ে দিয়েছিল টি-টোয়েন্টি সিরিজে, তারাই যে এ-ভাবে ওয়ান ডে সিরিজটা হারবে, ভাবাই যায়নি। কিন্তু ক্রিকেট হল এমনই একটা মজার খেলা। যেখানে আগাম কিছু ভেবে নেওয়া চলে না।
যেমন শনিবার সকালে একটা সময় মনে হয়নি ভারত এই ম্যাচটা হারতে পারে। নিউজ়িল্যান্ডের স্কোর তখন ১৯৭-৮। কিন্তু ওই অবস্থা থেকে রস টেলরের সঙ্গে জুটিতে ৭৬ রান যোগ করে বসল প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা ফাস্ট বোলার কাইল জেমিসন। এই সফরে ভারতকে সমানে ভুগিয়ে চলেছে টেলর। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করে ম্যাচ জিতিয়ে ফিরল। এখানেও মার্টিন গাপ্টিল রান আউট হওয়ার পরেও হাল ছাড়েনি। ধস সামলে নীচের দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াইয়ের জায়গায় পৌঁছে দিল রানটা। ভারত হারলও তো ২২ রানে।
কিন্তু তাও ইডেন পার্কে ২৭৩ রান তাড়া করে জেতাটা এমন কিছু কঠিন ছিল না। কিন্তু কতগুলো খারাপ শট খেলে ব্যাটসম্যানরা ম্যাচ আর সিরিজটা দিয়ে এল নিউজ়িল্যান্ডকে।
বিরাট কোহালি প্রতিদিন ভাল খেলে ম্যাচ জেতাবে, এ রকম আশা করা ঠিক নয়। বিরাট এ দিন টিম সাউদির খুব ভাল একটা বলে বোল্ড হল। ফুললেংথ বল সুইং করে ভিতরে ঢুকে এসে স্টাম্প ভেঙে দেয়। কিন্তু তিন জন ব্যাটসম্যান খারাপ শটে উইকেট দিয়ে এল। ম্যাচটা বেরিয়ে যায় ওখানেই।
এরা হল, কে এল রাহুল, কেদার যাদব এবং শ্রেয়স আইয়ার। টি-টোয়েন্টি সিরিজের সেরা ক্রিকেটার রাহুল যে বলে কাট করতে গেল, সেটা কাট করার মতো শর্ট বল ছিল না। ফলে ব্যাটের ভিতরের দিকে লাগিয়ে স্টাম্পে টেনে আনল। কেদার আউট হল সাউদির বল অন দ্য রাইজ ড্রাইভ করতে গিয়ে। ওই সময় ওই শট খেলার কোনও মানে নেই। তখন দরকার ছিল, শ্রেয়সের সঙ্গে উইকেটে থাকার। কেদারকে বল দেওয়া হচ্ছে না। তা হলে কেন ও দলে থাকবে? ওর জায়গায় মণীশ পাণ্ডেকে অবশ্যই নেওয়া উচিত।
শ্রেয়স গত কয়েক মাস ধরে দুরন্ত ছন্দে আছে। চার নম্বর জায়গায় ওর বিকল্প ক্রিকেটার এখন কেউ নেই। কিন্তু জমে গিয়ে উইকেট ছুড়ে দেওয়াটা মানা যায় না। আগের বলেই চার মেরে হাফসেঞ্চুরি করল শ্রেয়স। সুনীল গাওস্কর তখন টিভি-তে বলছিলেন, এ বার শ্রেয়সের উচিত ধরে ধরে খেলা। কিন্তু শ্রেয়স অহেতুক লেগস্টাম্পের দিকে সরে গিয়ে কাট করতে গেল। ফল, উইকেটের পিছনে সহজ ক্যাচ। হামিশ বেনেটের বলটা কিন্তু কাট মারার মতো শর্ট ছিল না।
১৫৩-৭ হওয়ার পরেও যে ভারত জেতার এত কাছে গিয়েছিল, তার জন্য কৃতিত্ব দিতে হবে পেসার নবদীপ সাইনিকে। অসাধারণ লড়াই করল ব্যাট হাতে। শটে খুব জোর। একটা সময় তো মনে হচ্ছিল, ম্যাচ বারও করে দেবে। জাডেজা আরও একবার বোঝাল, নীচের দিকে ওর গুরুত্ব কতটা। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের পরে আবার নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে দারুণ লড়াই করল। কিন্তু জেতাতে পারল না। যে কারণে ওকে এখনও পুরোদস্তুর ফিনিশার বলতে পারছি না। আশা করব, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ রকম পরিস্থিতি হলে ম্যাচ জিতিয়েই ফিরবে জাডেজা।
২২ রানে জয়ী নিউজ়িল্যান্ড
ম্যাচের সেরা কাইল জেমিসন
স্কোরকার্ড
নিউজ়িল্যান্ড ২৭৩-৮ (৫০)
ভারত ২৫১ (৪৮.৩)
নিউজ়িল্যান্ড
গাপ্টিল রান আউট ৭৯/৭৯
নিকোলস এলবিডব্লিউ বো চহাল ৪১/৫৯
ব্লান্ডেল ক সাইনি বো ঠাকুর ২২/২৫
টেলর ন. আ. ৭৩/৭৪
লাথাম এলবিডব্লিউ বো জাডেজা ৭/১৪
নিশাম রান আউট ৩/৫
গ্র্যান্ডহোম ক শ্রেয়স বো ঠাকুর ৫/৮
চ্যাপম্যান ক ও বো চহাল ১/২
সাউদি ক সাইনি বো চহাল ৩/১০
জেমিসন ন. আ. ২৫/২৪
অতিরিক্ত ১৪
মোট ২৭৩-৮ (৫০)
পতন: ১-৯৩ (নিকোলস, ১৬.৫), ২-১৪২ (ব্লান্ডেল, ২৬.৩), ৩-১৫৭ (গাপ্টিল ২৯.২), ৪-১৭১ (লাথাম, ৩৩.১), ৫-১৭৫ (নিশাম, ৩৪.২), ৬-১৮৫ (গ্র্যান্ডহোম, ৩৬.৬), ৭-১৮৭ (চ্যাপম্যান, ৩৭.৪), ৮-১৯৭ (সাউদি, ৪১.৩)।
বোলিং: শার্দূল ঠাকুর ১০-১-৬০-২, যশপ্রীত বুমরা ১০-০-৬৪-০, নবদীপ সাইনি ১০-০-৪৮-০, যুজবেন্দ্র চহাল ১০-০-৫৮-৩, রবীন্দ্র জাডেজা ১০-০-৩৫-১।
ভারত
পৃথ্বী বো জেমিসন ২৪/১৯
মায়াঙ্ক ক টেলর বো বেনেট ৩/৫
কোহালি বো সাউদি ১৫/২৫
শ্রেয়স ক লাথাম বো বেনেট ৫২/৫৭
রাহুল বো গ্র্যান্ডহোম ৪/৮
কেদার ক নিকোলস বো সাউদি ৯/২৭
জাডেজা ক গ্র্যান্ডহোম বো নিশাম ৫৫/৭৩
ঠাকুর বো গ্র্যান্ডহোম ১৮/১৫
সাইনি বো জেমিসন ৪৫/৪৯
চহাল রান আউট ১০/১২
বুমরা ন. আ. ০/১
অতিরিক্ত ১৬
মোট ২৫১ (৪৮.৩)
পতন: ১-২১ (মায়াঙ্ক, ২.৩), ২-৩৪ (পৃথ্বী, ৪.৬), ৩-৫৭ (কোহালি ৯.৪), ৪-৭১ (রাহুল, ১৩.২), ৫-৯৬ (কেদার, ২০.৫), ৬-১২৯ (শ্রেয়স, ২৭.৩), ৭-১৫৩ (শার্দূল, ৩১.১), ৮-২২৯ (সাইনি, ৪৪.৩), ৯-২৫১ (চহাল, ৪৭.৫), ১০-২৫১ (জাডেজা, ৪৮.৩)।
বোলিং: হ্যামিশ বেনেট ৯-০-৫৮-২, টিম সাউদি ১০-১-৪১-২, কাইল জেমিসন ১০-১-৪২-২, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ১০-১-৫৪-২, জিমি নিশাম ৯.৩-০-৫২-১।