শেষ মুহূর্তে ড্র, আশা কমছে সুনীলদের

হতে পারে প্রচন্ড ঠান্ডা ছিল। এখানে আসার আগে এক দিনও অনুশীলনের সুযোগ পায়নি ভারতীয় দলের ফুটবলারেরা। এই সমস্যাগুলোও প্রতিপক্ষ হিসেবে হাজির ছিল ভারতের সামনে।

Advertisement

শ্যাম থাপা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:২৩
Share:

মরিয়া: আফগানিস্তানের রক্ষণে হানা সুনীল ছেত্রীর। বৃহস্পতিবার। টুইটার

আদিল খানের শেষ মুহূর্তের গোলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হার বাঁচিয়েছিল ভারত।

Advertisement

যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সেই ছবি তাজিকিস্তানের দুশানবেতেও বদলাল না।

ম্যাচের সংযুক্ত সময়ে ব্রেন্ডনের কর্নার থেকে পরিবর্ত হিসেবে নামা সেমিডংগেল লেনের অসাধারণ হেডের গোল বৃহস্পতিবার রাতে ফের হার বাঁচাল ভারতের।

Advertisement

যে দলগুলিকে একসময় আমরা সাফ কাপে বা নানা প্রতিযোগিতায় বলে বলে হারাতাম, তাদের বিরুদ্ধে যদি হারতে হারতে ম্যাচ ড্র করতে হয় তা হলে স্বপ্ন দেখব কী ভাবে? আফগানিস্তান বা বাংলাদেশ— ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে আমাদের থেকে অনেক পিছিয়ে। সেই সব দলের বিরুদ্ধে তো জেতার মনোভাব নিয়ে খেলতে নামতে হবে? সেটাই তো দেখতে পেলাম না এ দিন। সত্যি কথা বলতে কি সুনীল ছেত্রীদের খেলা দেখে আমি হতাশই হয়েছি। বিশেষ করে কোচ ইগর স্তিমাচের শুরু থেকেই রক্ষণাত্মক রণনীতি আমার একেবারেই ভাল লাগেনি। ওমান-কাতারের মতো শক্তশালী দলের সঙ্গে যে মনোভাব নিয়ে খেলব, বাংলাদেশে বা আফগানিস্তানের মতো কম শক্তিধরের সঙ্গেও সে রকম খেলব, সেটা হতে পারে না। তা হলে তো লিগ টেবলে এগোনোই সম্ভব হবে না।

হতে পারে প্রচন্ড ঠান্ডা ছিল। এখানে আসার আগে এক দিনও অনুশীলনের সুযোগ পায়নি ভারতীয় দলের ফুটবলারেরা। এই সমস্যাগুলোও প্রতিপক্ষ হিসেবে হাজির ছিল ভারতের সামনে। উল্টোদিকে এখানে চারটি ম্যাচ খেলে একটাও হারেনি আফগানিস্তান। আবহাওয়ার সঙ্গে ওরা পরিচিত। সবই মানছি। কিন্তু যে ম্যাচটা না জিতলে আশা কার্যত শেষ, সেই ম্যাচে এমন নেতিবাচক মনোভাব নেওয়া হবে কেন? বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের চারটি ম্যাচের পর হয়তো খাতায়-কলমে টিকে থাকল ভারত, তবে লিখতে হচ্ছেই যে পরের পর্বে সুনীলদের যাওয়ার আশা আমি অন্তত দেখছি না।

বিরতির এক মিনিট আগে আফগানিস্তানের জ়েলফি নাজ়ারির গোলে ১-০ পিছিয়ে পড়েছিল ভারত। তার পরেও ভারতের খেলা দেখে একবারের জন্যও মনে হয়নি কিছু করতে পারবে। তবে ফুটবল এমন একটি খেলা যেখানে শেষ মিনিটেও কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে যায়। সেটাই ম্যাচের সংযুক্ত সময়ে করল লেন। বলব, ভাগ্যের জোরেই হার বাঁচাল ভারত।

আরও পড়ুন: দুরন্ত শামিদের গতির বাণে বিদ্ধ বাংলাদেশ ব্যাটিং

খুব অবাক লাগছিল এ দিন ইগরের দলকে দেখে। কাতার বা ওমানের বিরুদ্ধে ভারতের কোচ রক্ষণকে মজবুত করে পাল্টা আক্রমণে পাঠিয়েছিলেন দলকে। আমরা খেলা দেখে দারুণ প্রশংসা করেছিলাম। কিন্তু পরের দুটি ম্যাচ দেখে হতাশ। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আক্রমণের রাস্তা বাছা উচিত ছিল ইগরের। সেটা তো দেখলামই না, বরং সেই কাতার ম্যাচের রণনীতি নিয়েই নামতে দেখলাম ভারতকে। ৪-১-৪-১ ছক মানেই তো মাঝমাঠ জমাট রেখে গোলের সুযোগের অপেক্ষা করা। সেটা হবে কেন? যে ম্যাচটা না জিতলে আমাদের আর এগোনোর রাস্তা নেই, সেখানে কেন শুরু থেকেই এত রক্ষণাত্মক মনোভাব নিলেন ইগর, বুঝলাম না। বিরতির সামান্য আগে গোল খেয়ে পিছিয়ে যাওয়ার পর ফারুখ চৌধুরি বা মনবীর সিংহকে নামিয়ে তিনি যে ভাবে পুরো দলকে আক্রমণে পাঠালেন, সেটা শুরু থেকেই করার দরকার ছিল। তা হলে হয়তো ভারত ম্যাচটা জিততেও পারত।

চার বছর নেপালের জাতীয় দলের কোচ ছিলাম আমি। তাই সাফ কাপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে খেলার অভিজ্ঞতা আছে আমার। বারো-তেরো বছর আগে যে দলকে দেখেছিলাম, তারা যে এ ভাবে নিজেদের বদলে ফেলেছে ভাবতেই পারিনি। নানা ঝামেলায় ওদের দেশে লিগ নেই। তাজিকিস্তানকেই ঘর-বাড়ি বানিয়ে ফেলেছে নুর হুসেইনরা। ওদের দু’-তিন জন শুনলাম ইউরোপের ছোট দলে খেলে। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে ওরা রয়েছে বহুদিন। ওদের খেলায় সেটা স্পষ্ট। ছোট ছোট পাস, উইং প্লে ছাড়াও সুঠাম চেহারার সুযোগটা পুরোপুরি নিল ওরা। প্রথমার্ধের শুরুতে মিনিট দশেক বাদ দিলে পুরো খেলাটার উপরই দখল ছিল আফগানিস্তানের।

আরও পডু়ন: দীর্ঘ ন’বছর পরে প্রেসিডেন্সি ফের এসএফআইয়ের

সত্যি কথা বলতে কি ভারতকে দেখে আমি যতটা হতাশ হয়েছি ঠিক ততটাই চমকে গিয়েছি আফগানদের দেখে। ভারতের এর পরের খেলা শক্তিশালী ওমানের বিরুদ্ধে। মাস্কাটে, ১৯ নভেম্বর। বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সুনীল-আশিকরা যদি জিতে থাকত তা হলে অনেক সুবিধা পেত। সেটাই করতে পারল না। স্বপ্ন দেখব কী ভাবে?

ভারত: গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু, প্রীতম কোটাল (সেমিডংগেল লেন), রাহুল ভেকে, আদিল খান, মন্দার রাও দেশাই (ফারুক চৌধুরি), প্রণয় হালদার, উদান্ত সিংহ, সাহাল আব্দুল সামাদ (মনবীর সিংহ), ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজ, আশিক কুর্নিয়ান, সুনীল ছেত্রী।

আফগানিস্তান: আজিজি, ডেভিড নাজেম (মিলাদ ইন্তেজ়ার), হাসান আমিন, হারুন আমিরি, নুর হুসেইন, সেরিফ মহম্মদ, জ়েলফি নাজ়ারি, ফারশাদ নুর, ওমিদ পোপালাজ়ি (আদাম নাজেম), ফৈজল শেয়েস্তে (নরলা আমিরি), ওমরান হায়দারি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement