মহিলাদের জ্যাভলিনে সোনা জিতলেন অন্নু রানি। —ফাইল চিত্র।
এশিয়ান গেমসে দু’টি সোনা-সহ আরও ন’টি পদক জিতলেন ভারতীয় ক্রীড়াবিদেরা। মঙ্গলবারও পদক তালিকায় চতুর্থ স্থান ধরে রেখেছে ভারত। শুটারদের পর অ্যাথলিটেরা একের পর এক সোনা এনে দিচ্ছেন দেশকে। বুধবার আরও একটি সোনার জন্য ক্রীড়াপ্রেমীরা তাকিয়ে রয়েছেন নীরজ চোপড়ার দিকে। ১৫টি সোনা, ২৬টি রুপো এবং ২৮ টি ব্রোঞ্জ-সহ মোট ৬৯টি পদক এখনও পর্যন্ত জিতেছেন ভারতীয়রা।
মঙ্গলবার ট্র্যাক ইভেন্ট থেকে একটি এবং ফিল্ড ইভেন্ট থেকে একটি সোনা এল ভারতের ঝুলিতে। অ্যাথলিটেরা এখনও পর্যন্ত জিতলেন চারটি সোনা। তবে মোট পদকের সংখ্যায় তাঁরা ছুঁয়ে ফেললেন শুটারদের। এখনও পর্যন্ত ৪টি সোনা, ১০টি রুপো এবং ৮টি ব্রোঞ্জ জিতেছেন অ্যাথলিটেরা। মঙ্গলবার সোনা এল মহিলাদের জ্যাভলিন থ্রো এবং ৫০০০ মিটার দৌড় থেকে। জ্যাভলিনের ফাইনালে প্রথম থ্রোয়ে ৫৬.৯৯ মিটার ছোড়েন অন্নু রানি। দ্বিতীয় থ্রোয়েই ৬১.২৮ মিটার ছুড়ে প্রথম স্থানে চলে যান তিনি। তাঁর সঙ্গে টক্কর হচ্ছিল শ্রীলঙ্কার নাদিশা দিলশান ও চিনের লিউ হুইহুইয়ের। ৬১.৫৭ মিটার ছুড়ে এক সময় অন্নুকে টপকে গিয়েছিলেন নাদিশা। লিউ ৬১.২৯ মিটার ছুড়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি অন্নু। তখনও তিনটি থ্রো বাকি ছিল ভারতীয় অ্যাথলিটের। নিজের চতুর্থ থ্রোয়ে ৬২.৯২ মিটার ছোড়েন অন্নু। সবাইকে টপকে যান তিনি। বাকিরা আর অন্নুকে টপকাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত সোনা জিতেই ছাড়েন অন্নু।
এর আগে মহিলাদের মহিলাদের ৫০০০ মিটার দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন হন পারুল চৌধুরি। ভারতের বড় ভরসা ছিলেন পারুল। শুরু থেকেই প্রথম তিন দৌড়বিদের মধ্যে জায়গা করে নেন পারুল। যত প্রতিযোগিতা এগোল তত দূরত্ব বাড়ল প্রতিযোগীদের মধ্যে। পারুল কিন্তু কখনওই পিছিয়ে পড়েননি। একটি জায়গা ধরে রেখে এগোচ্ছিলেন তিনি। ৩০০০ মিটার অতিক্রমের পরে প্রতিযোগীদের মধ্যে তিন জন বাকিদের থেকে অনেকটা এগিয়ে যান। সেই তালিকায় ছিলেন পারুল। এক নম্বরে দৌড়চ্ছিলেন জাপানের রিরিকা হিরোনাকা। শেষ ল্যাপে দেখে মনে হচ্ছিল, রুপো নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে পারুলকে। কিন্তু শেষ ৫০ মিটারে গতি বাড়ালেন পারুল। রিরিকা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁকে টপকে গেলেন তিনি। এক নম্বরে প্রতিযোগিতা শেষ করে সোনা জিতলেন পারুল। ৫০০০ মিটার শেষ করতে তিনি সময় নেন ১৫ মিনিট ১৪.৭৫ সেকেন্ড।
রুপো এল পুরুষদের দু’টি ইভেন্টে। ডেকাথেলন এবং ৮০০ মিটারে পদক পেলেন যথাক্রমে তেজস্বীন শঙ্কর এবং মহম্মদ আফজল। সোমবার পাঁচটি ইভেন্টের পর এক নম্বরে ছিলেন তেজস্বীন। মঙ্গলবার অবশ্য এক নম্বর জায়গা ধরে রাখতে পারেননি জ্যাভলিন থ্রো এবং পোল ফল্টে ততটা ভাল করতে না পারায়। শেষ পর্যন্ত ৭৬৬৬ পয়েন্ট স্কোর করে রুপো জেতেন। এটাই অবশ্য তাঁর খেলোয়াড়জীবনের সেরা স্কোর। সোনাজয়ী চিনের সান কিহায়ো ৭৮১৬ পয়েন্ট স্কোর করেছেন। ১ মিনিট ৪৮.৪৩ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে ৮০০ মিটারে রুপো পেলেন আফজল।
মঙ্গলবার ভারতের ঝুলিতে ব্রোঞ্জ এসেছে পাঁচটি। মহিলাদের ৪০০ মিটার হার্ডলসে বিথা রামরাজ এবং পুরুষদের ট্রিপল জাম্পে প্রবীণ চিত্রাবেল ব্রোঞ্জ জিতেছেন। দু’টি ব্রোঞ্জ এসেছে বক্সিং থেকে। মহিলাদের ৫৪ কেজি বিভাগে প্রীতি পাওয়ার এবং পুরুষদের ৯২+ কেজি বিভাগে নরিন্দর বেরওয়ালকে সেমিফাইনালে হেরে যাওয়ায় ব্রোঞ্জ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। দিনের আরেকটি ব্রোঞ্জ এসেছে ক্যানোয়িং থেকে। পুরুষদের স্প্রিন্ট সি-২ ১০০০ মিটার ইভেন্টে পদক জিতলেন অর্জুন সিংহ এবং সুনীল সিংহ সালাম।
গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ।
এ দিন বেশ কয়েকটি পদক নিশ্চিতও করেছেন ভারতীয় খেলোয়াড়েরা। তিরন্দাজির কম্পাউন্ডে পুরুষদের ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা এবং রুপো পদক নিশ্চিত ভারতের। সোনার জন্য লড়াই হবে দুই ভারতীয় অভিষেক বর্মা এবং প্রবীণ দেওতালের। মহিলাদের কম্পাউন্ডের ব্যক্তিগত বিভাগের ফাইনালে উঠে রুপো নিশ্চিত করেছেন জ্যোতি সুরেখা। সেমিফাইনালে হারলেও ব্রোঞ্জের আশা জিইয়ে রেখেছেন অদিতি স্বামী। রিকার্ভের ব্যক্তিগত বিভাগে ভারতের সব প্রতিযোগী হেরে গিয়েছেন। মহিলাদের বক্সিংয়ের ৬৬ কেজি বিভাগের ফাইনালে উঠে রুপো নিশ্চিত করেছেন লভলিনা বরগোঁহাই। পুরুষদের স্কোয়াশের ব্যক্তিগত বিভাগের সেমিফাইনালে উঠে ব্রোঞ্জ পদক নিশ্চিত করেছেন সৌরভ ঘোষাল।
জয় এসেছে পুরুষদের ক্রিকেটে। রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের দল কোয়ার্টার ফাইনালে নেপালকে ২৩ রানে হারিয়েছে। সেমিফাইনালে ভারতের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। মহিলাদের ব্যাডমিন্টনে সিঙ্গলসের প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছেন পিভি সিন্ধু। জয় এসেছে কবাডির দুই বিভাগেই। গ্রুপের ম্যাচে ভারতের মহিলা দল হারিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াকে। পুরুষ বিভাগে বাংলাদেশকে ৫৫-১৮ পয়েন্টের ব্যবধানে হারিয়েছে ভারতীয় দল।