প্রশ্ন উঠতে পারে দাবা তো মাথার খেলা। এতে আর শারীরিক ক্ষমতার কী দরকার? কিন্তু বিজ্ঞান বলছে আর পাঁচটা আউটডোর খেলার মতো দাবাতেও সমান ভাবে ফিট থাকতে হয় দাবাড়ুদের। নইলে অত ক্ষণ দরে মগজ চলবে কী ভাবে?
অনেক সময় টুর্নামেন্টের পরে দাবাড়ুদের ওজন কমে যায়। ফাইল চিত্র
মাঝে রাখা একটি টেবিল। তাতে দাবার ৬৪ খোপ। দু’দিকে দু’টি চেয়ারে বসে দু’জন মগজাস্ত্র চালাচ্ছেন। কী ভাবে প্রতিপক্ষকে কিস্তিমাত করা যায় তার নতুন নতুন চাল দিচ্ছেন। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে এ তো মাথার খেলা। এতে আর শারীরিক ক্ষমতার কী দরকার? কিন্তু বিজ্ঞান বলছে আর পাঁচটা আউটডোর খেলার মতো দাবাতেও সমান ভাবে ফিট থাকতে হয় দাবাড়ুদের। নইলে অত ক্ষণ দরে মগজ চলবে কী ভাবে?
দাবা খেলতে ঠিক কী রকমের শারীরিক ধকল যায়? কী ভাবে নিজেদের ফিট রাখেন দাবাড়ুরা?
এই প্রশ্নের জবাবে বাংলার প্রথম তথা ভারতের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়া আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘দাবা যেহেতু বসে খেলা হয়, তাই অনেকেই ভাবেন এ ক্ষেত্রে শারীরিক ক্ষমতা কম লাগে। এই ধারণা পুরনো দিনের দাবাড়ুদেরও ছিল। তাই আগেকার দিনের অনেক দাবাড়ু মেরুদন্ড, কোমর ও পিঠের নানা রকমের সমস্যার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। আমারও সেটা হয়েছিল। চিকিৎসার পরে সুস্থ হই।’’
তবে এখনকার দাবাড়ুরা খেলার অনুশীলনের সঙ্গে শারীরিক কসরত করেন বলেই জানিয়েছেন দিব্যেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘এখনকার দাবাড়ুরা ফিটনেস নিয়ে সচেতন। তারা জিম করে। সেই সঙ্গে যোগব্যাম ও ধ্যান করে। সবাই নিজের মতো করো শরীরকে ফিট রাখার চেষ্টা করে। কেউ দৌড়য়, কেউ ফুটবল খেলে।’’
দিব্যেন্দু নিজেকে ফিট রাখতে কী কী করেন তার জবাবে তিনি বলেন, ‘‘স্পন্ডেলাইসিস হওয়ার পর থেকে আমি যোগব্যাম করি, ধ্যান করি। জিমে গিয়ে হালকা শরীরচর্চা করি। সব সময় কাজের মধ্যে থাকার চেষ্টা করি। পোষ্যকে নিয়ে দু’বেলা হাঁটতে বেরই। আমি শুনেছি গ্যারি কাসপারভ নাকি ১১ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড়তে পারত। বিশ্বনাথন আনন্দ স্পেনে থাকলে সাইক্লিং করত, দৌড়ত। দাবাড়ুদের যোগব্যাম ও ধ্যানের পাশাপাশি কোনও না কোনও খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। কারণ শরীর ঝরঝরে থাকলে মনও ফুরফুরে থাকবে।’’
বিজ্ঞান বলে দাবার একটা খেলা ৬-৭ ঘণ্টা চললে এক জন দাবাড়ুর উপর যে পরিমাণ শারীরিক ও মানসিক চাপ যায় তা কোনও আউটডোর খেলার থেকে কম নয়। অনেক সময় টুর্নামেন্টের পরে দাবাড়ুদের ওজন কমে যায়। তাই দাবাতেও শারীরিক ভাবে তরতাজা থাকা ততটাই প্রয়োজন যা অন্য খেলার ক্ষেত্রে।
বুধবার শেয হয়েছে রাজ্য স্তরে সিনিয়র চেস চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখান থেকে ছেলেদের মধ্যে উৎসব চট্টোপাধ্যায়, অর্পণ দাস, অরিন্দম মুখোপাধ্যায় ও বিশাল বসাক এবং মেয়েদের মধ্যে সমৃদ্ধা ঘোষ, সুরিয়া মাঝি, স্নেহা হালদার ও বৃষ্টি মুখোপাধ্যায় জাতীয় স্তরে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করবেন। পুরুষ ও মহিলাদের জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা যথাক্রমে কানপুর ও ওড়িশাতে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে। তরুণ দাবাড়ুদের খেলা অনুশীলনের পাশাপাশি শরীরচর্চার দিকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলার গ্র্যান্ডমাস্টার।