ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ এক দিন না পিছোলেও মিনি ডার্বি কিন্তু পিছিয়ে দিল আইএফএ। যে ঘটনার পর আবার তপ্ত হয়ে উঠেছে বাগান শিবির। সমস্যায় পড়েছে ইস্টবেঙ্গলও। তবে তারা রাজ্য সংস্থার সঙ্গে সংঘাতে যেতে নারাজ।
তবে বাগানের যা মনোভাব তাতে রাজ্য ফুটবল সংস্থার বিরুদ্ধে মোহনবাগান যদি ফের যুদ্ধে নামে তা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না! সূচিতে ম্যাচ পিছোনোর খবর পাওয়ার পর ইতিমধ্যেই বাক্যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে আইএফএ বনাম বাগানের। শুক্রবার রাতে আইএফএ-র বিরুদ্ধে তোপও দেগেছেন বাগান সচিব, ‘‘আইএফএ স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলছে। ম্যাচ যে পিছোনো যায়, সেটা তো এ বার দেখাই যাচ্ছে। শুধু ডার্বিটাই গোঁয়ার্তুমি করে ওরা পিছোল না। আমরা তো মাত্র এক দিন ম্যাচটা পিছোনোর জন্য বলেছিলাম। তা হলে সবাই ডার্বিটা উপভোগ করতে পারতেন।’’
রাজ্য ফুটবল সংস্থার সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় পাল্টা বলেছেন, ‘‘পুলিশ যদি ম্যাচ করার ব্যাপারে সাহায্য করতে না পারে আমার কী করার আছে। অনেক চেষ্টা করেছিলাম আমরা কলকাতা লিগের সূচি অনুযায়ী ম্যাচ করতে। বলেছিলাম, ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে ম্যাচ করানোর কথা। কিন্তু প্রশাসন রাজি হয়নি।’’
আসলে ইদের জন্য পুলিশ দিতে পারবে না প্রশাসন। তাই ১১ সেপ্টেম্বরের ইস্টবেঙ্গল-মহমেডান ম্যাচ ১৮ তারিখ পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে আইএফএ। অন্য দিকে ১৪ তারিখের মোহনবাগান-মহমেডান ম্যাচটিও এক দিন পিছিয়ে গিয়েছে। ম্যাচ হবে ১৫ সেপ্টেম্বর। তবে ১৪ সেপ্টেম্বর ইস্টবেঙ্গল-এরিয়ান ম্যাচটি নির্দিষ্ট দিন-ই হচ্ছে। সবুজ-মেরুন কর্তারা পুরো পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন। এ দিন অঞ্জন মিত্র আইএফএ-কে ব্যঙ্গ করে বলেছেন, ‘‘আমরা তো ভেবেছিলাম আইএফএ ফিফা হয়ে গিয়েছে। বিশ্বকাপের সূচির মতো লিগের সূচিরও আর কোনও পরিবর্তন হবে না। কিন্তু এখন তো দেখছি, সূচির পরিবর্তন হয়।’’ এর সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, ‘‘অকারণে আমাদের ফুটবলারদের ডার্বি খেলতে দিল না আইএফএ। ওদের পা থেকে বল কেড়ে নিল। শনিবার আমরা আর্মি একাদশের সঙ্গে খেলব। তার পর সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব আমাদের পদক্ষেপ কী হবে।’’
এ দিকে লিগ সাব কমিটির সভা ক্রমশ পিছিয়ে দিচ্ছে আইএফএ। এখন বলা হচ্ছে সোম বা বুধবার সভা হবে। বাগানের পাঁচ পয়েন্ট (ডার্বির তিন পয়েন্ট সহ) কেটে নিলে লিগের বাকি উত্তেজনা কমে যাবে হয়তো এটাই ভাবছেন আইএফএ কর্তারা। ওই সভার সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন বাগান কর্তারাও। অতিরিক্ত দু’পয়েন্ট কাটলে ঝামেলা পাকাতে পারে বাগান। এটা ঘটনা, লিগের মিনি ডার্বি পিছিয়ে যাওয়ায় আইএফএর অস্বস্তি বেড়েছে।
এ দিকে কলকাতা লিগের সূচি বদলে যাওয়ায় সমস্যায় ইস্টবেঙ্গল এবং আটলেটিকো দে কলকাতা। বরদলুই ট্রফিতে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম ম্যাচ ১৮ সেপ্টেম্বর। আইএফএ আবার ইস্টবেঙ্গল-মহমেডান ম্যাচের তারিখও ঠিক করেছে একই দিনে। কোন টুর্নামেন্টে খেলবে ইস্টবেঙ্গল? ক্রীড়াসূচি হাতে না পেয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন লাল-হলুদের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার। শুধু বললেন, ‘‘ম্যাচ পিছিয়ে যাচ্ছে বলে আমাদের চিঠি পাঠিয়েছে আইএফএ। তবে ম্যাচটা কবে হবে সেটা এখনও ওরা জানায়নি। ম্যাচের পরিবর্তিত তারিখ জানতে পারলে তবেই আমরা কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারব।’’ বাগানের উল্টো পথে হেঁটে দেবব্রতবাবুর আরও মন্তব্য, ‘‘যদি বরদলুই আর লিগের ম্যাচ একই সঙ্গে পড়ে তা হলে আমরা অসমের কর্তাদের বলব আইএফএর সঙ্গে কথা বলে নিতে। আমরা রাজ্য সংস্থার সঙ্গে কোনও সংঘাতে যাব না।’’ কলকাতা লিগ জেতা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর তার সেলিব্রেশনের আগে কোনও ঝামেলা চাইছে না লাল-হলুদ।
এ ছাড়াও কোচ সমস্যাও ভোগাতে পারে ইস্টবেঙ্গলকে। কারণ স্টপগ্যাপ কোচ রিচার্ড ড্রাইডেনের দেশে ফেরার টিকিট ১৫ সেপ্টেম্বর করা আছে। গোলকিপার কোচ অভিজিৎ মণ্ডলও গোলকিপারের লেভেল ওয়ান কোর্স করতে মুম্বইতে। তিনি কলকাতা ফিরবেন ১৬ সেপ্টেম্বর। এই পরিস্থিতিতে লাল-হলুদ কর্তারা ড্রাইডেনকে আরও এক সপ্তাহ থেকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে পারেন বলে খবর। না হলে অভিজিৎকেই দায়িত্ব সামলাতে হতে পারে।
ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ পিছিয়ে যাওয়ায় সমস্যায় এটিকে। অর্ণব মণ্ডল, ডিকাদের তারা আর মাদ্রিদে পাঠাতে পারছে না। কারণ ১৯ সেপ্টেম্বরই জোসে মলিনার শিবির শেষ হয়ে যাচ্ছে।
মোহনবাগান ফুটবলাররা অবশ্য কলকাতা লিগ হাতছাড়া হওয়ার হতাশা ভুলে নতুন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন। আজ শনিবার তাদের খেলা আর্মি একাদশের সঙ্গে। আই লিগের প্রস্তুতি ম্যাচ হিসেবেই তাই ম্যাচটা জিততে চাইছে বাগান।
ড্যারেল ডাফির মতো ফুটবলাররা এখন পাখির চোখ করতে চাইছেন আই লিগকে। মরসুমের শুরুতে এসে তিনি বলেছিলেন, ইস্টবেঙ্গলের টানা সাত বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড হতে দেবেন না। ট্রফি আনবেন বাগানে। কিন্তু ডার্বি না খেলায় এখন লিগ জয়ের আশা শেষ হয়ে গিয়েছে বাগানের। তাই শুক্রবার প্র্যাকটিসের পর ডাফি বলে গেলেন, ‘‘আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়াই তো এখন আমাদের আসল লক্ষ্য। সেটাকেই এ বার পাখির চোখ করতে হবে।’’ আর মোহনবাগানের জুনিয়রদের লক্ষ্য, বাকি তিনটে ম্যাচে ভাল পারফরম্যান্স করে আই লিগের দলে জায়গা করে নেওয়া। কলকাতা লিগে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও এখনও রানার্স হওয়ার সুযোগ রয়েছে মোহনবাগানের সামনে। বাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘আমরা কত নম্বরে লিগ শেষ করলাম সেটা আসল উদ্দেশ্য নয়। বাকি তিনটে ম্যাচ জিততে হবে। আমরা যে কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই, সেটা তো দেখিয়ে দিতে হবে।’’
শনিবারে কলকাতা লিগ—মোহনবাগান: আর্মি একাদশ (মোহনবাগান ৫-৩০)