সাংবাদিক সম্মেলনে বিরাট। ছবি: রয়টার্স।
দু’বছর আগে ইংল্যান্ডের মাটিতে তাঁর দল হেরেছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে। আজ, বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর আগে বিরাট কোহালি জানিয়ে দিলেন, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তাঁর দল খেলতে নামবে। এও শুনিয়ে দিলেন, ভারতীয় ভক্তদের প্রত্যাশা কী ভাবে পূর্ণ করতে হয়, তা-ও তিনি বুঝে ফেলেছেন। মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে কোহালি যা বললেন:
বিশ্বকাপে শেষ দল হিসেবে অভিযান শুরু: আমার তো মনে হয়, এটা আমাদের কাছে বাড়তি সুবিধার। এটা বোঝাতে চাইছি যে, ম্যাচের গতিপ্রকৃতি কী ভাবে এগোচ্ছে, মেঘলা অথবা ঝলমলে আবহাওয়ায় খেলা কেমন হচ্ছে, সেটা বুঝে নিতে পেরেছি। এটা সম্পূর্ণ অন্য ফর্ম্যাটের খেলা। সকাল সাড়ে দশটার সময়ে যে উইকেট থাকবে, সেটা বিকেলে কেমন দাঁড়াচ্ছে, তা নিয়ে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। সেই জায়গা থেকে দেখলে নিজেদের তৈরি থাকতে হবে। অন্য দলগুলি কী ভাবে খেলছে, সেটা দেখেও শিক্ষা নিতে হবে। ফলে অনেক ইতিবাচক ভাবনা নিয়েই অভিযান শুরু করতে চলেছি।
কেদার যাদবের ফিটনেস: কেদার ভালই উন্নতি করেছে। পুরো ফিট হয়ে গিয়েছে। নেটে তো কেদার এখন ভাল ব্যাটিংও করছে। খুব ভাল শট নিচ্ছে। ওর খেলায় যে বৈচিত্র রয়েছে, তাতে কেদারের মতো ক্রিকেটারকে দলে পাওয়া আনন্দের।
আরও পড়ুন: কেদার না শঙ্কর? দেখে নিন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারতের সম্ভাব্য একাদশ
২০১১ এবং ২০১৫ সালে ওপেনিং ম্যাচে সেঞ্চুরি করার পরে এ বার বাড়তি কোনও চাপ: দীর্ঘদিন ধরে আপনি যখন ভাল পারফর্ম করবেন, তখন একটা প্রত্যাশা তৈরি হবেই। আমি জানি এ ধরনের প্রত্যাশাকে নিয়ে কী ভাবে এগিয়ে যেতে হয়। প্রত্যাশার চাপ থাকবেই, কিন্তু পাশাপাশি এও মনে রাখা দরকার, কারও কাছে কিছু প্রমাণ করারও নেই। আমি যখন ব্যাটিং করার জন্য ড্রেসিংরুমের সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসি, সমর্থকেরা আমার থেকে সেঞ্চুরির আবদার করে থাকেন। তবে এই ব্যাপারগুলো চলতেই থাকবে। সেটা জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে।
এমন মনে করার কারণ নেই যে, আমি এ ধরনের কথাবার্তা শুনতে চাই না অথবা ভাল খেলার পরে সমর্থকেরা আমাকে কিছু বলবেন না। তাঁরা অবশ্যই এই দাবি জানাবেন, কারণ তাঁরা তো আপনার সঙ্গে দলেরও জয় দেখার প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে আসেন।
ফলে আমার মূল লক্ষ্য থাকবে, আবারও সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারা। তবে সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দলের জয়। সেই জয়ে আমার অবদান সেঞ্চুরিও হতে পারে অথবা ১৫০, ৫০, ৬০, ৭০ বা ৪০ রানও হতে পারে, তাতেও কোনও আপত্তি নেই আমার। আমি ইতিবাচক মন নিয়েই খেলতে নামব।
সকাল সাড়ে দশটার উইকেটে খেলার জন্য সেরা দল নির্বাচন: আমরা জানি ইংল্যান্ডের আবহাওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। কখনও আকাশে মেঘ থাকবে। কোনও সময়ে আবার রোদ থাকবে। তা ছাড়া এখন দু’টি বলে খেলা হয়। ফলে উইকেট থেকে সুবিধা পাওয়ার মতো অবস্থা থাকলে অতিরিক্ত সিমার খেলতেই পারে। আবার ভাল ব্যাটিং সহায়ক উইকেট পাওয়ার পরেও যদি দেখা যায় আকাশ মেঘলা, তা হলে বিশেষ নজর রাখতে হবে প্রথম দশ ওভারের উপর। ইংল্যান্ডে বলের আচরণ যে ভাবে বদলে যায়, তা অন্য কোথাও
এত দ্রুত হয় না।
এ বার বোলারদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে গেলে যদি আপনি সকালের উইকেটে দুই সিমার, দুই স্পিনার অথবা দলে অতিরিক্ত সিমার নিয়ে খেলতে নামেন, তা হলেও লক্ষ রাখতে হবে, বিকেলের দিকে পিচের চরিত্র কী দাঁড়াচ্ছে। ফলে বোলারদের খুব তাড়াতাড়ি পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।
এ বার আইপিএলে কুলদীপের ফর্ম: আমি অতীতে আইপিএলে দারুণ খেলে দেশের হয়ে খেলতে নেমেছি। মনের মধ্যে এই বিশ্বাস নিয়েই খেলতে নেমেছি যে, এই প্রতিযোগিতা আমি শাসন করব।
যে কোনও প্রতিযোগিতায় খেলতে নামার আগে মাথার মধ্যে এই ভাবনা রাখা উচিত নয় যে, অতীতে কী হয়েছে। বরং আমি মনে করি ইতিবাচক ব্যাপারগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে এবং ধারাবাহিক শিক্ষাগ্রহণের মধ্যে দিয়ে পরের প্রতিযোগিতার জন্য নিজেকে তৈরি করা উচিত। আর সত্যি বলতে আইপিএলের সঙ্গে বিশ্বকাপের কোনও যোগই নেই।
কুলদীপ গত দু’বছর ধরে দারুণ খেলেছে। আমি মনে করি না টি-টোয়েন্টি ত্রিকেটে দু’টো-একটা ম্যাচে বাজে বল করার নেতিবাচক প্রভাব ওর উপরে পড়বে। কুলদীপের আত্মবিশ্বাসে তা আঁচড় ফেলতে পারবে না।
পাশাপাশি আমরা এটাও জানি ও যখন ঠিক জায়গায় বলটা ফেলে তখন ব্যাটসম্যানের ফিরে যাওয়া ছাড়া অন্য উপায় থাকে না। ও আবার সেরা ছন্দে ফিরে এসেছে। নেটে দারুণ বোলিং করেছে। ওর বৈচিত্র অসাধারণ। আমার তো মনে হচ্ছে কুলদীপের বলের বিরুদ্ধে ব্যাটসম্যানদেরই ঠিক করতে হবে ওরা কী ভাবে সেটা খেলবে।