রোহিত-রাহুল জুটিও ভয়ঙ্কর, কাপ জয়ের স্বপ্ন আরও কাছে

লিগের খেলায় ভারতের শেষ ম্যাচে শিষ্য বুমরা ১০ ওভার বল করে ৩৭ রানে তিন উইকেট নিয়ে ওয়ান ডে ক্রিকেটে একশো উইকেট নিয়ে নজর কাড়ল। কিন্তু ওর গুরু মালিঙ্গা কে এল রাহুলকে আউট করলেও ১০ ওভারে  ৮২ রান দেওয়ায় সে ভাবে নজর কাড়তে পারেনি।

Advertisement

এরাপল্লি প্রসন্ন

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৯ ০৩:৩২
Share:

অভিনন্দন: বিশ্বকাপে পাঁচ সেঞ্চুরি করে বিশ্বরেকর্ডের অধিকারী রোহিতকে আলিঙ্গন কে এল রাহুলের। লিডসে। —ছবি এপি।

শনিবার লিডসে ক্রিকেট দ্বৈরথটা ছিল গুরু ও শিষ্যের মধ্যে। ‘ডেথ ওভারে’ বিশ্ব ক্রিকেটের দুই সেরা বোলার লাসিথ মালিঙ্গা বনাম যশপ্রীত বুমরার। আইপিএলে দু’জনেই মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তার উপরে বিশ্বকাপে এটাই ছিল লাসিথ মালিঙ্গার বিদায়ী ম্যাচ। শেষ ম্যাচে মালিঙ্গার সেই বিষাক্ত ডেলিভারিগুলো ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের দিকে ধেয়ে আসে কি না, সেই আগ্রহ নিয়েই ম্যাচটা দেখতে বসেছিলাম।

Advertisement

লিগের খেলায় ভারতের শেষ ম্যাচে শিষ্য বুমরা ১০ ওভার বল করে ৩৭ রানে তিন উইকেট নিয়ে ওয়ান ডে ক্রিকেটে একশো উইকেট নিয়ে নজর কাড়ল। কিন্তু ওর গুরু মালিঙ্গা কে এল রাহুলকে আউট করলেও ১০ ওভারে ৮২ রান দেওয়ায় সে ভাবে নজর কাড়তে পারেনি।

মালিঙ্গা ও বুমরার জন্য যে মঞ্চ তৈরি ছিল সেই মঞ্চে শতরান করে নায়ক হয়ে গেল রোহিত শর্মা। লিডসে এ দিন ৯৪ বলে ১০৩ রান করায় চলতি বিশ্বকাপে পাঁচটা শতরান হয়ে গেল মুম্বইয়ের এই ছেলেটার। যা বিশ্বরেকর্ড। যার সুবাদে সাত উইকেটে জিতে বিশ্বকাপের লিগ পর্ব শেষ করল বিরাট কোহালির ভারত। নয় ম্যাচের মধ্যে সাতটি ম্যাচ জিতে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে লিগ পর্ব শেষ করল ভারত।

Advertisement

টস জিতে শুরুতে ব্যাট করে ৫০ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে ২৬৪ করেছিল শ্রীলঙ্কা। জবাবে ৪৩.৩ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে ২৬৫ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত।

এই বিশ্বকাপে আমি রোহিত শর্মাকে যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। ম্যাচের পর ম্যাচে দল বদলে যাচ্ছে। কিন্তু রোহিতের শতরান করা আটকাচ্ছে না। নকআউট পর্ব শুরু হওয়ার আগেই লিগের ম্যাচে পাঁচটা শতরান হয়ে গেল রোহিতের। দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশের পরে শনিবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ঝলসে উঠল হিটম্যানের ব্যাট। যা দেখে শিক্ষার্থী ক্রিকেটারদের কথা ভেবে আমি চিন্তিতই হচ্ছি। কারণ, বিশ্বকাপে এ বার রোহিতের ইনিংসগুলো দেখে তাদের মনে হতেই পারে, ব্যাটিং করাটা কত সহজ। এমনই মসৃণ ছন্দে এগোচ্ছে বিরাটের দলের মুম্বইকর ব্যাটসম্যান।

রোহিতের টেকনিক নিয়ে কখনও প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু মনোযোগটা উড়ে যেত মাঝে মাঝেই। কিন্তু এই বিশ্বকাপে অন্য রোহিতকে দেখছি। যে শট নির্বাচন থেকে বলের উপর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চোখ রাখা সব ক্ষেত্রেই তার বড় রান করার তাগিদ ও দলের প্রতি দায়বদ্ধতার পরিচয় দিচ্ছে। আর রান পাওয়ায় আত্মবিশ্বাসটাও ফিরে এসেছে ওর। তাই বোলারদের এ ভাবে শাসন করতে পারছে ও। বল মারার সময়জ্ঞানটাও আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। শুরুতে বোলারকে সম্মান দেখিয়ে ভাল বলগুলো ছাড়ছে। তার পরে আক্রমণে আসছে। আত্মবিশ্বাস এখনও এমনই চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে তার একটি ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে বলি। ইংল্যান্ডের মাটিতে জো রুট ও মার্কাস ট্রেস্কোথিকের আটটি ওয়ান ডে সেঞ্চুরি রয়েছে। সেখানে রোহিতেরই সাতটি সেঞ্চুরি হয়ে গেল ইংল্যান্ডের মাটিতে। একজন বিদেশি হিসেবে গর্ব করার মতো পরিসংখ্যান।

রোহিতের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে ব্যাট করছে অপর ওপেনার কে এল রাহুলও। ১১৮ বলে ১১১ রান করে সেমিফাইনালের আগে আত্মবিশ্বাসটাও সংগ্রহ করে নিল কর্নাটকের এই ব্যাটসম্যান। শিখর ধওয়ন চোট পেয়ে দলের বাইরে চলে যাওয়ার পরে চার নম্বর থেকে ওপেন করতে এসে ছন্দটা ঠিক বজায় রেখেছে রাহুল। বুঝতেই দেয়নি গত কয়েক বছরের সফল ওপেনিং জুটি ভেঙে গিয়েছে। এ দিন রোহিতের সঙ্গে ১৮৯ রানের জুটি তৈরি করল রাহুল। বিশ্বকাপে ওপেনিং জুটিতে এ পর্যন্ত এটাই ভারতের সর্বোচ্চ রান।

এই দুই ওপেনার। তার পরে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহালি। ঋষভ পন্থের তারুণ্য, ধোনির অভিজ্ঞতা। সব শেষে ভারতীয় পেসার ও স্পিনারদের ছন্দ—সব মিলিয়ে বিরাটদের দলটাকে দেখে মনে হচ্ছে আগামী রবিবার ফাইনালে ট্রফি ভারতের হাতে উঠতেই পারে।

তবে শর্ত একটাই। বাকি দুই ম্যাচেই যেন টস জিতে ব্যাট করে ভারত। টস হারা চলবে না। দুই ওপেনার আত্মবিশ্বাসের এভারেস্টে। ছন্দে খামতি নেই। তার উপর ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় পর্যায়ের গ্রীষ্ম। পিচ খটখটে। একদম উপমহাদেশের উইকেট। এই জায়গায় বোলারদের আগেও কাপ জিততে আমার বাজি রোহিত-রাহুল-বিরাটরাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement