নায়ক: জয়ের দুই কারিগর। আফ্রিদি ও বাবর। বুধবার। পিটিআই, এএফপি
শাহিন শাহ আফ্রিদি ও বাবর আজ়ম। পাকিস্তানের মরণ-বাঁচন ম্যাচের দুই তরুণ কারিগর।
গত বছরই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকদের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন শাহিন। এ বছর সিনিয়রদের বিশ্বকাপে শুরুর দিকে সে ভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। কিন্তু উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের ১৯ বছর বয়সি ছেলেটি নিজের প্রতি বিশ্বাস হারাননি। বুধবার নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচে তাঁর বোলিং পরিসংখ্যান ১০-৩-২৮-৩। কলিন মুনরো, টম লাথাম ও রস টেলরকে ফিরিয়ে বিপক্ষকে ২৩৭ রানে থামিয়ে দেন শাহিন। কিন্তু জিমি নিশাম ও কলিন ডি’গ্র্যান্ডহোমের অনবদ্য ইনিংস ব্যাটিং বিপর্যয়ের থেকে বাঁচায় কিউয়িদের।
এই বাবরকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের দিনেই বিতর্ক হয়েছিল। হাফসেঞ্চুরি করলেও তা বড় ইনিংসে পরিণত করতে পারছেন না। বুধবার এজবাস্টনে সব অঙ্ক পাল্টে দিলেন তিনি। নিজের দলের সঙ্গে বিশ্বকাপেরও। ১২৭ বলে তাঁর অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংস ছয় উইকেটে জিততে সাহায্য করে পাকিস্তানকে। সেই সঙ্গে তিনিও জমিয়ে দেন শেষ চারের লড়াই।
পিচ বুঝতে হয়তো ভুল করেন নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার পরে ২৫০ রান তুলতে পারেনি তাঁর দল। তার উপর পিচে বল ঘুরবে সেটাও আন্দাজ করতে পারেননি। মিচেল স্যান্টনারের বল এতটাই ঘুরছিল যে, স্টান্স বদলাতে বাধ্য হন বাবর। আর সেই উইকেটে কি না এক স্পিনার নিয়ে খেলে কিউয়িরা! ফলে উইলিয়ামসনকেও হার ঘোরাতে হয়েছে। তাতে লাভ কিছু হয়নি। অনায়াসে ম্যাচ জেতায় বাবর ও হ্যারিস সোহেলের জুটি। এ দিন ওয়ান ডে-তে ভিভ রিচার্ডসের রেকর্ডও টপকে গেলেন বাবর। ৬৮ ইনিংসে ৩০০০ রানে পৌঁছন তিনি। ভিভ পৌঁছেছিলেন ৬৯ ইনিংসে। তবে পাকিস্তানকে এই জায়গায় পৌঁছে দেন তাঁদের বোলাররা। বিশেষ করে দুই বাঁ-হাতি পেসার।
শুরুর দিকে যে দু’টি ম্যাচ খেলেছেন, সেখানে প্রচুর শর্ট বল করেছিলেন শাহিন। বুধবার তিনি এজবাস্টনে সেই ভুল করেননি। ক্রমাগত গুড লেংথ স্পটে বল করার ফল পেলেন। দু’দিকেই সুইং করিয়ে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করে। রস টেলরের বিরুদ্ধে তাঁর আউটসুইংয়ের প্রশংসা করলেন স্বয়ং ওয়াসিম আক্রম। আক্রমই তাঁর অনুপ্রেরণা। তিনি বললেন, ‘‘টেলরকে একেবারে ঠিক পদ্ধতিতে আউট করেছে। মনে হয়, ওর পুরনো ভিডিয়োয় নজর রেখেছিল। লেগস্টাম্পে বল ফেলে বাইরের দিকে কাট করালো। এই জন্যই বাঁ-হাতি পেসার একটি দলের জন্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ।’’
নিউজ়িল্যান্ডের জিমি নিশামও দুরন্ত ইনিংস খেলে ব্যাটিং বিপর্যয়ের হাত থেকে দলকে বাঁচান। এক সময়ে ৪৬ রানে চার উইকেট পড়ে গিয়েছিল নিউজ়িল্যান্ডের। ৪১ রান করে উইলিয়ামসন ফিরে যাওয়ার পরে স্কোর দাঁড়ায় ৮৩-৫। সেখান থেকে ১৩২ রানের অনবদ্য জুটি গড়ে ২৫০ রানের কাছাকাছি স্কোর নিয়ে যান নিশাম ও গ্র্যান্ডহোম। ১১২ বলে অপরাজিত ৯৭ রান করেন নিশাম। ৭১ বলে ৬৪ রান গ্র্যান্ডহোমের।
শেষ বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পাওয়ার পরে ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন নিশাম। কিন্তু ফিটনেস ও টেকনিক বদলে ফিরে আসেন জাতীয় দলে। সেই বিশ্বকাপই হয়ে ওঠে তাঁর প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ।