দস্তানা বিতর্কে আইসিসি-বোর্ড সঙ্ঘাত তুঙ্গে, বোর্ডের পাশে দাঁড়াল কেন্দ্রও

রবিবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে এ নিয়ে আইসিসি ও ভারতের মধ্যে সংঘাত তীব্র হয় কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯ ০৪:১৭
Share:

চর্চায়: আইসিসি ধোনির ‘বলিদান’ গ্লাভস (চিহ্নিত) খারিজ করায় বিতর্ক ক্রমশ বাড়ছে । ফাইল চিত্র

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দস্তানা ঘিরে উত্তাল বিশ্বকাপ। ভারতীয় বোর্ড থেকে সেনার চিহ্নযুক্ত বিশেষ এই দস্তানা ব্যবহারের যে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল, তা খারিজ করে দিয়েছে আইসিসি। আবার ভারতীয় ক্রিকেট মহলে, বোর্ডে, এমনকি সরকারি স্তরেও মনোভাব হচ্ছে, ধোনিকে এই গ্লাভস ব্যবহার করতে দেওয়া হোক।

Advertisement

রবিবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে এ নিয়ে আইসিসি ও ভারতের মধ্যে সংঘাত তীব্র হয় কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ভারতীয় আধা-সামরিক বাহিনীর বিশেষ চিহ্ন কিপিং গ্লাভসে লাগিয়ে নেমেছিলেন ধোনি। দ্রুতই তা টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা বেশির ভাগই ধোনির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মন্তব্য করতে শুরু করেন। মুহূর্তে তা সব চেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে ওঠে। শুক্রবার আইসিসি একটি বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘ধোনির গ্লাভসে যে চিহ্ন রয়েছে, তা সরিয়ে দিতে হবে। আইসিসি-র নিয়মানুযায়ী লোগো ব্যবহার করে কোনও সঙ্কেত দেওয়া যাবে না।’’

সাউদাম্পটনে প্রথম ম্যাচের পরেই ভারতীয় বোর্ডকে বার্তা পাঠিয়ে আইসিসি অনুরোধ করে, ধোনির দস্তানা থেকে এই চিহ্ন সরিয়ে ফেলা হোক। কিন্তু তাতে তর্কের নিষ্পত্তি হয়নি। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেন রিজিজু মুখ খোলেন এ নিয়ে। বলে দেন, ‘‘খেলাধুলোর মধ্যে আমরা হস্তক্ষেপ করি না। কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে বলতেই হচ্ছে যে, ধোনি এক জন ভারতীয়। সেনাকে সমর্থন করা কোনও রাজনৈতিক পদক্ষেপ নয়। তাই ভারতীয় বোর্ডের উচিত, ধোনির পাশে দাঁড়িয়ে আইসিসি-র কাছে এই গ্লাভস ব্যবহারের অনুমতি চাওয়া।’’

Advertisement

ক্রীড়ামন্ত্রীর মন্তব্যের পরেই জানা যায়, ভারতীয় বোর্ড ধোনির এই দস্তানা ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে আইসিসি-র কাছে আবেদন করেছে। সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বোর্ডের পর্যবেক্ষকদের প্রধান বিনোদ রাই বলে দেন, ‘‘এ বিষয়ে ছাড়পত্রের জন্য আইসিসি-কে অনুরোধ করেছে ভারতীয় বোর্ড। আইসিসি-র নিয়ম অনুযায়ী খেলোয়াড়রা কোনও বাণিজ্যিক স্বার্থবিরোধী, ধর্মীয়, রাজনৈতিক অথবা সেনার লোগো লাগিয়ে খেলতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে ধর্মীয়, বাণিজ্যক বা রাজনৈতিক কোনও বিষয় যুক্ত নেই। এমনকি চিহ্নটি সেনাদের প্রতীকও নয়। তাই ধোনি কোনও ভুল করেননি।’’ ধোনির গ্লাভসে আধা সামরিক বাহিনীর চিহ্নটি থাকলেও ‘বলিদান’ কথাটি লেখা নেই। সেই কারণেই বিনোদ রাই দাবি করেন, এতে নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়নি। এক দিক দিয়ে দেখতে গেলে, কাগজেকলমে বলা কঠিন যে, ধোনি আধা সামরিক বাহিনীর চিহ্ন ব্যবহার করেছেন।

ওদিকে আইসিসি যে বিশেষ এই দস্তানার ব্যবহার বন্ধ করতে বলেছে, তা জানাজানি হওয়ার পরে ভারতীয় ক্রিকেট জনতার মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। টুইটারে হ্যাশট্যাগ চালু হয়ে গিয়েছে ‘ধোনি কিপ দ্য গ্লাভস’। আইসিসি-র বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছেড়ে রীতিমতো প্রচার শুরু করে দিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা যে, ধোনি, তুমি চালিয়ে যাও। সেনার চিহ্নযুক্ত গ্লাভস খুলবে না। আমরা তোমার সঙ্গে আছি।’’ কেউ কেউ আইসিসি-কে পাল্টা আক্রমণ করে লিখতে শুরু করেন, বিশ্বকাপে জঘন্য আম্পায়ারিং হচ্ছে। আইসিসি ধোনির গ্লাভস নিয়ে নাক না গলিয়ে সে দিকে নজর দিক।

দেশ জুড়ে এই আবেগকে উস্কে দিয়েছেন সেনার সঙ্গে যুক্ত কয়েক জন উচ্চ পদস্থ অফিসার। তাঁরা ধোনির এমন গ্লাভস পরার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে লিখেছেন, ভারতীয় সেনা মানে আত্মত্যাগের প্রতীক। ধোনির মতো ক্রিকেটারও জীবনে অনেক আত্মত্যাগ করেছেন, তাই তাঁর হাতে এমন গ্লাভস খুবই মানানসই। ধোনি নিজে আধা সামরিক বাহিনীর সাম্মানিক পদাধিকারী। কম্যান্ডোদের সঙ্গে গিয়েও ট্রেনিং করেছেন।

ভারতীয় ক্রীড়ামহলও ধোনির পাশেই দাঁড়িয়েছে। চেন্নাই সুপার কিংস দলের সতীর্থ সুরেশ রায়না, প্রাক্তন ক্রিকেটার রুদ্রপ্রতাপ সিংহ থেকে শুরু করে অ্যাথলিট হিমা দাস ও কুস্তিগির যোগেশ্বর দত্তও ধোনির সমর্থনেই টুইট করেন। রায়না লিখেছেন, ‘‘দেশকে আমরা সবাই ভালবাসি। ধোনির গ্লাভস ব্যবহারকে দেশপ্রেম হিসেবে দেখা উচিত। স্বদেশিকতা হিসেবে নয়।’’ কুস্তিগির যোগেশ্বর দত্ত লিখেছেন, ‘‘ধোনির গ্লাভস থেকে বলিদান চিহ্ন সরাতে বলার অধিকার আইসিসি-র আছে কি না জানি না। তবে আমি মনে করি, ধোনি কোনও ভুল করেনি। সেনাবাহিনীর প্রতি সম্মান দেখানোর জন্যই এটা করেছে।’’ ভারতীয় অ্যাথলিট হিমা দাসের টুইট, ‘‘বরাবর ধোনি ভাইয়ের পাশেই থাকব।’’ ফুটবলের প্রাক্তন তারকা ভাইচুং ভুটিয়ার আবার বক্তব্য, ‘‘প্রত্যেক খেলোয়াড়কে নিয়ম মেনে চলতে হয়। যদি গ্লাভসে এ ধরনের কোনও চিহ্ন রেখে খেলা আইসিসি-র নিয়মভঙ্গের আওতায় পড়ে, তা হলে ধোনির তা সরিয়ে দেওয়া উচিত।’’

প্রশ্ন এখন এখানেই। ধোনির এই বিশেষ চিহ্ন ব্যবহার করা কি নিয়ম ভাঙা হচ্ছে? এর আগে রাঁচীতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এক দিনের ম্যাচে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় নিহত জওয়ানদের সম্মান দেখাতে গোটা ভারতীয় দল ফৌজি টুপি পরে খেলতে নেমেছিল। সেক্ষেত্রে আইসিসি-র কাছ থেকে কোহালি, ধোনিরা আগাম অনুমতি নিয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠছে, তখন তা হলে আইসিসি কী করে অনুমতি দিল? কারও কারও মতে, সম্পূর্ণ ভাবে সেনার চিহ্ন ব্যবহার করা হয়নি ধোনির গ্লাভসে। সেই কারণে আইসিসি নিষেধ করতে পারে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।

ঘটনা হচ্ছে, এখন আইসিসি প্রধানও এক জন ভারতীয়— শশাঙ্ক মনোহর। শেষ পর্যন্ত যে ভাবে এই বিশেষ চিহ্ন ব্যবহারের আর্জি নাকচ করে দেওয়া হয়েছে, তার নেপথ্যে মনোহরের কট্টর মনোভাব রয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। আইসিসি-তে যাওয়ার পর থেকে ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে মোটেও সুসম্পর্ক থাকেনি তাঁর। এ বার সংঘাত আরও তীব্র হলে অবাক হওয়ার নেই। বোঝাই যাচ্ছে, এটা সেনার চিহ্ন নয় বলে যে দাবি ধোনির বোর্ড জানিয়েছিল, তা গ্রহণ করেনি নিয়ামক সংস্থা। এখন এটাই দেখার যে, ভারতীয় বোর্ড বা কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকে আর্জি নাকচের কী প্রতিক্রিয়া হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement