পরামর্শ: বোলিংয়ে সুবিধা করতে পারলেন না। কুলদীপকে সাহস জোগাচ্ছেন অধিনায়ক কোহালি। শনিবার। এপি
মাত্র একটি ম্যাচ হেরে সেমিফাইনাল যাওয়া নিঃসন্দেহে খুশির হাওয়া তৈরি করা উচিত দলের মধ্যে। কিন্তু অধিনায়ক বিরাট কোহালি এবং হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর জন্য কিছু মাথাব্যথা তৈরি হল শনিবারের ম্যাচের পরে।
প্রত্যাশা মতোই কুলদীপ যাদবকে প্রথম একাদশে ফেরানো হল মহম্মদ শামির জায়গায়। কিন্তু চিন্তার কারণ হতে পারে কুলদীপের বোলিং। দশ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে এক উইকেট তুললেন চায়নাম্যান স্পিনার। তার চেয়েও জরুরি ব্যাপার হচ্ছে, ফের সেই মার খাওয়ার সময় তাঁকে খুব নেতিবাচক দেখাল এ দিন।
প্রথমে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা শুরুতেই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। চার উইকেট পড়ে যায় ৫৫ রানের মধ্যে। সেখান থেকে দুর্দান্ত পার্টনারশিপ গড়েন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ এবং লাহিরু তিরিমানে। এই হেডিংলেতেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিরাট অঘটন ঘটিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ব্যাট হাতে সে দিনও এ রকমই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন ম্যাথিউজ। সে দিন করেছিলেন ১১৫ বলে ৮৫। এ দিন করলেন ১২৮ বলে ১১৩। তিরিমানের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ১২৪ রান যোগ করে শ্রীলঙ্কাকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিলেন ম্যাথিউজ।
তাঁদের জুটি নতুন করে কিছু ছিদ্রের সন্ধান দিয়ে গেল ভারতীয় বোলিংয়ে। শামি না থাকায় মাঝের পর্বে উইকেট নেওয়ার লোক পাওয়া যাচ্ছিল না। ভুবনেশ্বর কুমারকে বিশ্বকাপে দু’নম্বর পেসার হিসেবে দেখছেন কোহালিরা। কিন্তু এ দিন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানেরা তাঁকেই বেছে নিয়েছিলেন আক্রমণ করার জন্য। ভুবি দিলেন দশ ওভারে ৭৩। সংগ্রহে একটি উইকেট। সেমিফাইনালে তাঁকেই খেলানো উচিত নাকি শামিকে ফেরানো হবে, সেই আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
তেমনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে কুলদীপ যাদবকে নিয়ে। মার খেলেই তাঁর শরীরী ভাষা নেতিয়ে পড়ছে। সেমিফাইনালে তাঁকে খেলানোর কাজ কঠিন করে দিলেন রবীন্দ্র জাডেজা। এ দিন ১০ ওভারে ৪০ রান দিয়ে একটি উইকেট নিলেন বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার। প্রথম সাত ওভারে ভীষণ কৃপণ বোলিং করলেন। আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে, জাডেজাকে নেওয়া মানে ভাল ব্যাটসম্যান পাওয়া যাবে। ভারতীয় টেলএন্ডাররা ব্যাটিংয়ে সব চেয়ে দুর্বল। সেই দুশ্চিন্তা দূর করতে পারবেন জাড্ডু। সঙ্গে পাওয়া যাবে বিশ্বের সেরা ফিল্ডারকে। এ দিনও পয়েন্টে দাঁড়িয়ে নিশ্চিত বাউন্ডারি বাঁচিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। সেমিফাইনালের কথা ভেবে যে কুলদীপকে খেলিয়ে আত্মবিশ্বাস ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছিল, সেটা এখন তাই নতুন করে চিন্তাভাবনার স্তরে পৌঁছেছে। শাসকের মতো জিতে লিডস ছাড়ার সময়েও কোহালিদের সামনে নানা সিদ্ধান্তের জট পাকিয়ে রয়েছে। সেগুলো ছাড়াতে হবে।
প্রথম জট: কুল-চা জুটিকে খেলাব কি না। নিউজ়িল্যান্ড প্রতিপক্ষ, ফলে চায়নাম্যান বোলারের রহস্য ব্যবহারের লোভ সংবরণ করা কঠিন হতে পারে। সে-ক্ষেত্রে শনিবার ভাল বোলিং করা জাডেজাকে খেলাতে হলে এক জন ব্যাটসম্যান বা এক জন পেসার কমাতে হবে।
দ্বিতীয় জট: চহালের সঙ্গে জাডেজাকে খেলাব কি? সেক্ষেত্রে শনিবার যে টিম খেলল, তা থেকে কুলদীপকে বসাতে হবে।
তৃতীয় জট: ভুবনেশ্বর কুমারকে নিয়ে কী করা হবে? তাঁর প্রতি আস্থা দেখানো হবে না কি শামিকে ফেরানো হবে? উইকেট নেওয়ার ব্যাপারে শামির দক্ষতা অনেক বেশি। এ দিন কিন্তু মাঝের পর্বে উইকেট তোলার মতো বোলারের অভাব দেখা যাচ্ছিল। শামি তিনটি ম্যাচ খেলে ১৩ উইকেট তুলেছেন ইতিমধ্যেই। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মার খেলেও তাঁর উইকেট তোলার দক্ষতা ভারতকে ম্যাচ জেতাচ্ছে।
চতুর্থ জট: দলে এত উইকেটকিপার রাখব কি না? আপাতত আছেন তিন জন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, ঋষভ পন্থ এবং দীনেশ কার্তিক। কিপিং করছেন ধোনি। এ দিনও বিদ্যুতের গতি দেখালেন স্টাম্পের পিছনে। পন্থ এবং কার্তিক খেলছেন ব্যাটসম্যান হিসেবে। ব্যাটসম্যান ধোনিকে নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হওয়ায় কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক কার্তিককে শেষের দিকে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাঁর হাতে বড় শট আছে কি? কারও কারও মতে, হার্দিক পাণ্ড্যকেই স্লগে ব্যবহার করা উচিত।
মনে করা হয়েছিল, সেমিফাইনালে সেরা প্রথম একাদশ বাছার কাজটা সহজ করে দেবে হেডিংলে। দেয়নি। উল্টে শাস্ত্রী-কোহালির জন্য কাজ আরও কঠিন করে দিয়েছে।