কেন উইলিয়ামসন।—ছবি রয়টার্স
দুরন্ত সেঞ্চুরি করে দলকে জিতিয়েও সমালোচিত নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। তাঁর সততা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন স্পিনার পল অ্যাডামস। বলে দিলেন, ইনিংসে একবার পরিষ্কার উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়েও কেন তিনি নিজে থেকে মাঠ ছাড়লেন না? ঘটনাটি ঘটে নিউজ়িল্যান্ড ইনিংসের ৩৮তম ওভারে। ইমরান তাহিরের বলে কুইন্টন ডি কককে ক্যাচ দেন উইলিয়ামসন।
নিজের টুইটার পেজ-এ অ্যাডমস লিখেছেন, ‘‘উইলিয়ামসন কেন মাঠ ছাড়ল না? ও তো পরিষ্কার আউট ছিল! এটা ও নিজে বোঝেনি?’’ বুধবার উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেওয়ার পরে তাহির কিন্তু বারবার আবেদন করতে থাকেন। মজা হচ্ছে, দক্ষিণ আফ্রিকা রেফারেল নেয়নি। যে ভুলের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসি বলেন, ‘‘আসলে আমরা দূর থেকে বুঝতে পারিনি। ঘটনার সময় সবচেয়ে কাছে ছিল কুইনি (কুইন্টন ডি কক)। এই সব ক্ষেত্রে রেফারেল নেওয়ার ব্যাপারে ও-ই আমাদের যা বলার বলে। কিন্তু উইলিয়ামসনের আউটের সময় যে কোনও কারণেই হোক ও সেটা বলেনি।’’ টিভি রিপ্লেতে পরিষ্কার দেখা গিয়েছে, উইলিয়ামসন ব্যাটে বল লাগিয়েছিলেন। যা নিয়ে ডুপ্লেসির আরও মন্তব্য, ‘‘আমি ভেবেছিলাম ও বলটা ব্যাটে লাগাতে পারেনি। ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে শুনলাম আউট ছিল। এমনকি কেনও আমাকে বলেছিল, ও নিজেও বোঝেনি যে বলটা হাল্কা ভাবে ওর ব্যাটে ছুঁয়েছিল। তবে শুধু এই আউটটা হয়নি বলে আমারা জিতিনি, তা কিন্তু নয়।’’
বিশ্বে অনেক মন্থর পিচ রয়েছে। কিন্তু বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনের জুড়ি মেলা ভার। এমন পিচে বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ‘বিতর্কিত’ সেঞ্চুরি করে উঠে নিউজ়িল্যান্ডের অধিনায়ক জানালেন, এই অভিজ্ঞতাটা আগামী দিনে তাঁর কাজে লাগবে। মানে, মন্থরতম পিচে ব্যাট করার অভিজ্ঞতা!
বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে নিউজ়িল্যান্ডের লক্ষ্য ছিল ৪৯ ওভারে ২৪২। উইলিয়ামসনরা ঝামেলায় পড়েন ১৩৭ রান তোলার ফাঁকেই পাঁচ ব্যাটসম্যান ফিরে যাওয়ায়। পরিস্থিতি সামলাতে কাজে দেয় উইলিয়ামসন আর কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের জুটিতে তোলা ৯১ রান। নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়ক করেন ১৩৮ বলে অপরাজিত ১০৬। গ্র্যান্ডহোম ৪৭ বলে ৬০। তিন বল বাকি থাকতে ম্যাচ জেতে নিউজ়িল্যান্ড।
উইলিয়ামসন বলেছেন, ‘‘এই ধরনের ম্যাচ বার করতে ছোট ছোট জুটিগুলোর ভূমিকা বিরাট। বিশেষ করে মিডল অর্ডারের শেষ দিকটায়।’’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘এ বারের বিশ্বকাপে কম-বেশি নানা রকমের স্কোর দেখা যাচ্ছে। মনে হয় এর পিছনে আবহাওয়ার অবদান রয়েছে। আবার একই সঙ্গে এখানে নানা ধরনের পিচেও খেলতে হচ্ছে। এখানে যেমন মারাত্মক মন্থর পিচে খেলা হল। মন্থর পিচে ভাল খেলার অভিজ্ঞতাটাও আমাদের ক্ষেত্রে পরে কাজে লাগতে পারে। তবে আমি খুশি নানা ধরনের উইকেটের সঙ্গে ক্রিকেটারেরা দ্রুত মানিয়ে নিচ্ছে দেখে।’’ নিজের ইনিংস নিয়ে উইলিয়ামসনের মন্তব্য, ‘‘এই ইনিংস আমার কাছে আলাদা নম্বর পাবে না। তবে আমি রান পাওয়ায় দল জিতেছে দেখে ভাল তো লাগছেই। ’’
এজবাস্টনে এক গ্র্যান্ডহোম ছাড়া দু’দলের কেউই খুব দ্রুত রান তুলতে পারেননি। তাঁর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে নিউজ়িল্যান্ডের অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘আমাদের জুটি কাজে এসেছে। তবে আসল কাজটা ও-ই করেছে। বলতে গেলে কলিন একাই ম্যাচের গতি বদলে দিল। আর কী অসাধারণ ব্যাটে-বলে সংযোগ করে স্ট্রোকগুলো নিয়েছে। তাও এত মন্থর একটা উইকেটে মাঠে নামার পর থেকেই। ওর খেলায় শুধু আমি নয়, গোটা দলই খুশি।’’
শনিবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নিউজ়িল্যান্ডের পরের খেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। এখন দেখার, উইলিয়ামসনরা সেই ম্যাচেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারে কি না। নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘হাতে আরও ম্যাচ আছে। হতে পারে এ বার অন্যরকম উইকেটে খেলতে হবে। যে দল পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে তারাই সাফল্য পাবে।’’